আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মারা যাওয়ার পর টুইটারে ‘কোহিনূর’ শব্দটি নিয়ে ট্রেন্ডিং শুরু হয়েছে ভারতে। এই কোহিনূর বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত রত্নগুলোর একটি, যা ঔপনিবেশিক যুগে ভারত থেকে ব্রিটেনের হস্তগত হয়েছিল।
‘লুটে’ নেওয়া হীরাটি পাওয়ার অধিকার ভারতীয়রা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে; যদিও তাতে কোনো ফল আসেনি।
রানি এলিজাবেথের মায়ের জন্য বানানো মুকুটে ২ হাজার ৮০০ মূল্যবান পাথর বসানো হয়, যার মধ্যে একটি হল ১০৫ ক্যারেটের ডিম্বাকৃতির জ্বলজ্বলে সেই কোহিনূর হীরা।
পরে সেই মুকুটের অধিকারী রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ৭০ বছর ব্রিটেন শাসন করে ৯৬ বছর বয়সে বৃহস্পতিবার মারা যান।
তার মৃত্যুর পর আবার হীরাটির দাবি নতুন করে তুলে সোশাল মিডিয়া সরগরম করে তুলছে ভারতীয়রা।
এনডিটিভি জানিয়েছে, এ বছরের শুরুতে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ঘোষণা দিয়েছিলেন, তার মৃত্যুর পর প্রিন্স চার্লস রাজা হলে তার স্ত্রী ডাচেস অব কর্নওয়াল ক্যামিলা হবেন কুইন কনসোর্ট।
বৃহস্পতিবার রানির মৃত্যুর পর ব্রিটেনের রাজা এখন প্রিন্স চার্লস এবং কুইন কনসোর্ট তার স্ত্রী। ফলে ক্যামিলাই এখন সেই মুকুটের অধিকারী বলে মনে করা হচ্ছে।
কোহিনূরের ইতিহাস
টাইম ম্যাগাজিন লিখেছে, ১২-১৪ শতকের কাকাতিয়ান রাজবংশের সময় ভারতের অন্ধ্র প্রদেশে খনন করে এটি পাওয়া গিয়েছিল। তখন এটি পুরোটা ৭৯৩ ক্যারেট ছিল বলে মনে করা হয়।
১৬ শতকে প্রথমে এটি মুঘলদের হাতে আসে। তারপর পারস্য সম্রাট নাদির শাহ এটি লুট করে নিয়ে যায়। পরবর্তীকালে আফগানদের হাতে চলে যায় হীরাটি।
ভারতের শিখ মহারাজ রঞ্জিত সিং আফগান নেতা শাহ সুজা দুররানির কাছ থেকে এটি ভারতে ফিরিয়ে আনেন। তার থেকেই এটি যায় ব্রিটিশদের কাছে।
১৮৪০ এর দশকের শেষের দিকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১০ বছর বয়সী মহারাজা দুনজিপ সিংকে তার জমি ও সম্পত্তি আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করার পর রত্নটি দখল করে নেয়।
কোম্পানি তখন রানি ভিক্টোরিয়ার কাছে হীরাটি উপস্থাপন করে। তার স্বামী প্রিন্স অ্যালবার্ট সেটি কেটে রানি আলেজান্ড্রা এবং রানি মেরির মুকুটে বসিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে দ্বিতীয় এলিজাবেথের মা রানি এলিজাবেথ বা কুইন মাদারের মুকুটে ১৯৩৭ সালে হীরাটি বসানো হয়।
কুইন মাদার ১৯৫৩ সালে তার মেয়ে দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাজ্যাভিষেকের সময় মুকুটের একটি অংশ পরেছিলেন। সে সময় থেকেই ব্রিটিশ রানির মুকুটে কোহিনূর হীরা রয়ে গেছে।
ভারতের পাশাপাশি ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তানও হীরাটি দাবি করে আসছে।
এই মুকুটের কোহিনূর হীরাটি ভারতীয়রা দাবি করে আসছে
কোহ-ই-নূর নিয়ে ভারত সরকার
বিবিসির এক প্রতিবেদনে ভারতের সরকার বলেছে, ব্রিটেনের রানীর মুকুটে বসানো জগদ্বিখ্যাত হীরা কোহ-ই-নূর ফেরত পাবার চেষ্টা ভারতের করা উচিত নয়, কারণ তা ‘চুরি করা হয়নি, বা জোরপূর্বক নিয়ে যাওয়াও হয়নি।’
এ ব্যাপারে এক আবেদনের শুনানীতে ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় উচ্চতম আদালতে বলেছে, কোহ-ই-নূর ব্রিটেনকে দেয়া হয়েছিল, চুরি করে নেয়া হয়নি।
ব্রিটেনের বিতর্কিত দখল
মূল্যবান এই রত্মটির ব্যাপারে কোনো ভবিষ্যত পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়নি; তবে এটি ব্রিটেনেই থাকার সম্ভাবনা থাকায় ভারতের অনেক টুইটার ব্যবহারকারী সেটি ফেরত পাওয়ার দাবি তুলেছেন।
একজন লিখেছেন, “রাজা যদি কোহিনূর পরতে না চান, তাহলে ফেরত দিন।”
অন্য একজন লিখেছেন, “হীরাটি ব্রিটিশরা ‘চুরি করেছিল’, যারা ‘মৃত্য’, ‘দুর্ভিক্ষ’ এবং ‘লুটপাটের’ মাধ্যমে সম্পদশালী হয়েছে।”
কোহিনূরকে ফেরত চাওয়ার বিষয়টি এটিই প্রথম নয়। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর থেকে সরকার এটি ফেরত পাবার দাবি করে আসছে।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাজ্যাভিষেকের বছরেও ভারত এর দাবি করেছিল, তবে তাতে কোনো লাভ হয়নি।
ব্রিটেনের যুক্তি, ভারতে কোহিনূর ফিরিয়ে দেওয়ার কোনো আইনি ভিত্তি নেই।
ব্রিটিশ-ভারতীয় লেখক এবং রাজনৈতিক ভাষ্যকার সৌরভ দত্ত বলেছেন, রত্নটি ভারতের ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।