Close Menu
Bangla news
    Facebook X (Twitter) Instagram
    Bangla news
    • প্রচ্ছদ
    • জাতীয়
    • অর্থনীতি
    • আন্তর্জাতিক
    • রাজনীতি
    • বিনোদন
    • খেলাধুলা
    • শিক্ষা
    • আরও
      • লাইফস্টাইল
      • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
      • বিভাগীয় সংবাদ
      • স্বাস্থ্য
      • অন্যরকম খবর
      • অপরাধ-দুর্নীতি
      • পজিটিভ বাংলাদেশ
      • আইন-আদালত
      • ট্র্যাভেল
      • প্রশ্ন ও উত্তর
      • প্রবাসী খবর
      • আজকের রাশিফল
      • মুক্তমত/ফিচার/সাক্ষাৎকার
      • ইতিহাস
      • ক্যাম্পাস
      • ক্যারিয়ার ভাবনা
      • Jobs
      • লাইফ হ্যাকস
      • জমিজমা সংক্রান্ত
    • English
    Bangla news
    Home সমস্যাটা মনে হয় আমার
    মুক্তমত/ফিচার/সাক্ষাৎকার

    সমস্যাটা মনে হয় আমার

    December 22, 202210 Mins Read

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল : সবকিছু দেখে শুনে মনে হচ্ছে সমস্যাটা মনে হয় আমার একান্তই নিজস্ব। অন্য কাউকে এই সমস্যাটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে দেখছি না।
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    বিষয়টা একটু খুলে বলা যাক। একবারে হঠাৎ করে দেশে একটা নির্বাচন-নির্বাচন ভাব চলে এসেছে। আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীদের জন্য এটা খুবই ভালো খবর। বুদ্ধিজীবীদের লেখালেখি করার জন্য এবং টেলিভিশনে টক শো করার জন্য সব সময় কিছু বিষয়ের দরকার হয়। দেশে নির্বাচন-নির্বাচন ভাব চলে আসার কারণে বুদ্ধিজীবীরা লেখালেখি করার জন্য নানা রকম বিষয়ের একটা বিশাল বড় সাপ্লাই খুঁজে পেয়েছেন। সরকার, ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং আওয়ামী লীগও এই উপলক্ষে তাদের লেখার নতুন নতুন বিষয় তৈরি করে দিচ্ছে। বুদ্ধিজীবীরা এখন সেই বিষয়গুলো নিয়ে লিখছেন এবং আমি সেগুলো খুবই মনোযোগ দিয়ে পড়ছি। আমি মনে মনে সব সময় আশা করে থাকি তারা লেখাগুলো এইভাবে শেষ করবেন, ‘আর যাই হোক আমরা আশা করি এই নির্বাচনে কোনও রাজাকার কিংবা রাজাকারের দল অংশ নিতে পারবে না। যে দলই নির্বাচিত হয়ে আসুক তারা হবে পুরোপুরি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের দল।’ কিন্তু এই কথাগুলো কেউ লিখছেন না। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলেন এবং আমাদের বোঝান যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হচ্ছে ‘সাম্য’ কিন্তু কেউ এই কথাটা বলেন না যে রাজাকার, কিংবা রাজাকারের দলকে নিয়ে সেই ‘সাম্য’ দেশে আনা যাবে না। রাজাকারদের নিয়ে সাম্যের ভেতরে আর যাই থাকুক সেখানে মুক্তিযুদ্ধের ছিটেফোটা নেই। কাজেই দেশকে নিয়ে আমরা যা ইচ্ছে স্বপ্ন দেখতে পারি, কিন্তু সবার ঝেড়ে কাশতে হবে, অর্থাৎ আমতা আমতা না করে স্পষ্ট গলায় বলতে হবে, এই দেশে রাজাকারদের কোনও জায়গা নেই। (আমরা যারা ৭১-এর ভেতর দিয়ে এসেছি তারা জানি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী দলগুলোর মাঝে সবচেয়ে দরিদ্র অশিক্ষিত অনগ্রসর দলটি ছিল রাজাকার। বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী যে কোনও দল কিংবা মানুষ সবাইকেই ঢালাও ভাবে রাজাকার শব্দটি দিয়ে বোঝানো হয়।)

    আমি এক দুই জায়গায় যেখানে এই বুদ্ধিজীবীরা আছেন সেখানে রাজাকার কিংবা রাজাকারদের দল ছাড়া নির্বাচন করার কথাটি বলে দেখেছি। তারা একটু অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়েছেন, কেউ কেউ আমতা আমতা করে বলেছেন, ‘জামায়াতে ইসলামী তো নিবন্ধন পায় নাই।’ কেউ কেউ বলেছেন, ‘এটা সরকারের ব্যাপার, সরকার নিজের স্বার্থে জামায়াতে ইসলামীকে বেআইনি ঘোষণা করছে না’– অনেকেই আমার কথা না শোনার ভান করে এদিক সেদিক তাকিয়েছেন। বেশিরভাগ সময়েই পত্রপত্রিকায় কলাম লেখা বুদ্ধিজীবীরা আমার বক্তব্যটুকুই ধরতে পারেননি। তারা সবাই জানেন শুধুমাত্র ডিসেম্বর মাসে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলতে হবে, অন্য মাসে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলা হচ্ছে নেহাৎ ছেলেমানুষি ব্যাপার। বিশাল জনপ্রিয় কোটা বিরোধী আন্দোলনের সময় একজন তরুণ ছাত্র বুকের মাঝে ‘আমি রাজাকার’ লিখে দাঁড়িয়েছিল, সেই ছবি পত্র পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। সবাই সেটাকে ব্যক্তি স্বাধীনতা হিসেবে সহজ ভাবে নিয়েছে কারো সেটা নিয়ে সমস্যা হতে দেখিনি। গত নির্বাচনে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানের লেখক সর্বজন শ্রদ্ধেয় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন করেছে। সেই নির্বাচনে জামায়েতে ইসলামীর প্রার্থী ধানের শিষ মার্কায় নির্বাচন করেছে, ড. কামাল হোসেন সেটা হতে দিয়েছেন। সেটাও পত্রপত্রিকা এবং তাদের কলাম লেখকেরা সবাই যথেষ্ট উদার ভাবে নিয়েছেন। এই বিষয়গুলো চিন্তা করলে আমার রক্ত গরম হয় কিন্তু দেখি অন্য কারও সমস্যা হয় না। কাজেই আমার ধারণা হয়েছে সমস্যাটা মনে হয় একান্তভাবেই আমার নিজস্ব! আমার মতো করে ভাবেন এরকম আরও মানুষ নিশ্চয়ই আছেন, তারা দীর্ঘশ্বাস বুকে চেপে অপেক্ষা করেন কিন্তু আমার কাছে যেহেতু কাগজ-কলম আছে আমাকে চুপ করে অপেক্ষা হবে কে বলেছে?

    প্রথমেই বলে দেই আমি শুধু ডিসেম্বরে মুক্তিযুদ্ধ এই ফিলোসফিতে বিশ্বাস করি না। আমি শুধু সারা বছর না প্রতি নিঃশ্বাসে মুক্তিযুদ্ধ এই ফিলোসফিতে বিশ্বাস করি। সেই তরুণ বয়সে আমি মাত্র লেখালেখি শুরু করেছিলাম তখন একজন বয়স্ক লেখক খুবই বিরক্ত হয়ে আমাকে বলেছিলেন, “তোমার সমস্যাটা কী? যাই লিখো সেখানেই মুক্তিযুদ্ধ ঢুকিয়ে দাও, কারণটা কী?” বলাই বাহুল্য আমি তাকে কোনও সদুত্তর দিতে পারিনি। যেহেতু আমার পৃথিবীর বিশাল ক্যানভাস ব্যবহার করে মহৎ সাহিত্য সৃষ্টি করে সাহিত্য জগতে অমর হয়ে থাকার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নাই তাই কিশোর-কিশোরীদের জন্য কিছু লিখতে হলেই আমি কোনও একজন মুক্তিযোদ্ধার গল্প টেনে আনি—সেই গল্পে রাজাকারদের জন্মের মতো শিক্ষা দিয়ে ছেড়ে দিই! সেজন্য কোনও লাভ হয়নি সেটাও সত্যি না, অনেক কিশোর-কিশোরী আমাকে বলেছে তারা আমার বই পড়ে সেই অর্ধ শতাব্দি আগে ঘটে যাওয়া বিস্মৃত মুক্তিযুদ্ধের জন্য এক ধরনের ভালোবাসা অনুভব করেছে, এর চাইতে বেশি তো আমি কিছু চাইনি।

    আমি ৯৪ সালে যখন দেশে ফিরে এসেছি তখন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের দায়িত্বে ছিল ছাত্রদল। তারা সাহিত্য সপ্তাহের আয়োজন করেছে, সেখানে উপস্থিত বক্তৃতার বেশিরভাগের বিষয়বস্তু ছিল রাজাকারদের জন্য ঘৃণা সূচক। বক্তৃতা চলাকালীন সময়ে সেই বক্তব্য সহ্য করতে না পেরে ইসলামী ছাত্র শিবিরের একজন ছাত্রদলের একজন নেতার পিঠে চাকু মেরে দিল। আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন যোগ দিয়েছি। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-কানুন কিছুই জানি না। তারপরেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাকে সেই ঘটনার তদন্ত করতে দিল। আমি তদন্ত শুরু করা মাত্রই শহর থেকে বিচিত্র চেহারার লোকজন এসে সেই ছাত্রটিকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য সুপারিশ করতে লাগলো—এরকম যে করা যায় আমিও সেটা জানতাম না। যাইহোক ঘটনা তদন্ত করে আমি শিবিরের ছাত্রটিকে দোষী সাব্যস্ত করে রিপোর্ট দিয়েছি। তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হলো এবং দুইদিন পর খবর পেলাম সে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় চলে গেছে। কোনও রকম দুর্ভাবনা ছাড়া শিবির যেন শান্তিমত সন্ত্রাস করতে পারে সেজন্য জামায়াতে ইসলামী যে এরকম চমৎকার ব্যবস্থা করে রেখেছে সেটাও আমি তখন প্রথম জানতে পেরেছি।

    যাইহোক তখন দেশে একটি ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটল। বিএনপির একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক একটা গবেষণা করে সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন যে বিএনপি এবং জামায়াত যদি সম্মিলিতভাবে নির্বাচন করে তাহলে তারা খুব সহজে নির্বাচনে জিতে যাবে। আমাদের দেশের ‘নিরপেক্ষ সুশীল’ পত্রিকা পুরো বাংলাদেশের ম্যাপ একে বিভিন্ন নির্বাচনি এলাকা দেখিয়ে এবং কোন দলের কত ভোট আছে সেটি বিশ্লেষণ করে একটি সংবাদ পরিবেশন করল। আমি সবিস্ময়ে আবিষ্কার করলাম একদিন ঘোষণা দিয়ে বিএনপি এবং জামায়াত একত্র হয়ে গেলো।

    সবচেয়ে মজার ঘটনাটি আমার তখনও দেখা বাকি ছিল। একদিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস দিয়ে হাঁটছি তখন দেখি একসময় যাদের ভেতর সাপে-নেউলে সম্পর্ক ছিল সেই ছাত্রদল এবং ছাত্রশিবিরের ছাত্রেরা একসাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোটামুটি কেন্দ্রীয় এলাকায় দাঁড়িয়ে স্লোগান দিচ্ছে। আমাকে দেখেই তারা আমার বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শুরু করেছে এবং আমি সবিস্ময়ে দেখলাম রাজাকারদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ার জন্য ছাত্রদলের যে নেতাটি শিবিরের হাতে চাকু খেয়েছিল এবং আমি যার জন্য তদন্ত করেছিলাম আমার বিরুদ্ধে তার গলা সবার উপরে।

    আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এত গৌরবময় যে শুধুমাত্র জামায়াতের সাথে একত্রিত হয়েছে বলে রাতারাতি সেই ইতিহাসকে প্রত্যাখ্যান করা খুব সহজ নয়! সবাই পারেনি, একজন দুজন ছাত্র যারা মুক্তিযুদ্ধকে হৃদয় দিয়ে ধারণ করেছিল তারা খুব মন খারাপ করে আমার কাছে সান্ত্বনার জন্য আসতো—আমি সান্ত্বনা দিতাম। এখন তারা কে কেমন আছে কে জানে?

    আমি জানি যারা বিএনপি করেন জামায়াতের সাথে তাদের এই আত্মিক বন্ধন নিয়ে সবসময়েই কিছু একটা ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এটি শুধুমাত্র নির্বাচনি জোট—আদর্শিকভাবে তারা আসলে মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন এরকম কথাবার্তা শোনা যায় কিন্তু আমাকে এই ছেলেমানুষি কথাবার্তা বিশ্বাস করতে হবে কে বলেছে? আমি এখনও শিউরে উঠে যখন চিন্তা করি এই দেশে বদর বাহিনীর কমান্ডারেরা ক্ষমতায় চলে এসেছিল! বিষয়টি যে নৈতিকভাবে ঠিক আছে সেটা বোঝানোর জন্য ধানাই পানাই জাতীয় যুক্তি দেবেন কিন্তু আমার সেগুলো শোনার ধৈর্য নেই। আমি পরিষ্কার জানি পাকিস্তানি মিলিটারি ১৯৭১ সালে এই দেশে যে গণহত্যা করেছিল, মেয়েদের ধর্ষণ করেছিল সেই অবিশ্বাস্য নৃশংসতায় জামায়াতে ইসলামী নামক রাজনৈতিক দলটি তাদের সাথে ছিল এই দেশের নাম যদি বাংলাদেশ হয়ে থাকে এবং দেশটি যদি আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে পেয়ে থাকি তাহলে এই দেশের মাটিতে জামায়াতে ইসলামী থাকার অধিকার নেই।

    আমি যখন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক তখন একদিন আমেরিকান এম্বেসির একজন কর্মকর্তা আমার সাথে দেখা করে তাদের একটা অনুষ্ঠানের দাওয়াত দিলেন। সিলেট শহরে সুধীসমাজ এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে সেখানে তারা কথাবার্তা বলবেন। অনুরোধের ঢেঁকি গিলতে হয় তাই আমি ঢেঁকি গেলার জন্য সেই অনুষ্ঠানে যাবো বলে কথা দিয়েছি। নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট সময় সেখানে হাজির হয়েছি। সেখানে গিয়ে দেখি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে জামায়াতে ইসলামীকেও সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমেরিকান এম্বেসির যে মানুষটি আমাকে আমন্ত্রণ দিয়ে এনেছেন তিনি পাশে ছিলেন, আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এই অনুষ্ঠানে আপনারা জামায়াতে ইসলামীকে দাওয়াত দিয়েছেন?’

    ভদ্রলোক আমতা আমতা করে বললেন, ‘সব রাজনৈতিক দলকেই দাওয়াত দেওয়া হয়েছে।’

    আমি ক্ষিপ্ত হয়ে বললাম, ‘আপনি আমাকে চেনেন, আমার সম্পর্কে জানেন, তারপরও আমাকে এখানে ডেকেছেন?’

    ভদ্রলোক আমতা আমতা করে কিছু একটা বলার চেষ্টা করলেন, আমি কোনও সুযোগ না দিয়ে অত্যন্ত রুঢ় ভাষায় তাকে কিছু একটা বলে অনুষ্ঠান থেকে বের হয়ে যেতে শুরু করলাম। ঠিক তখন দেখতে পেলাম সিলেট শহরের জামায়াতের নেতা হাজির হয়েছেন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের হলের নাম শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নামে দেওয়ার জন্য এই মানুষটি এবং তার দল আমার বাসায় বোমা মারা থেকে শুরু করে অনেকভাবে আমার জীবনের ওপর কম হামলা করেনি। তা ছাড়া বিএনপি জামায়াতের সম্মিলিত সভায় আমাকে মুরতাদ ঘোষণা দেওয়ার কারণে অনেকেই আমাকে মুরতাদ হিসেবে খুন করে বেহেশতে যাওয়ার জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছে।

    জামায়াতের নেতা আমাকে দেখে আমার সামনে দাঁড়িয়ে করমর্দন করার জন্য মুখে হাসি ফুটিয়ে হাত এগিয়ে দিলেন। আমি আমার হাত সরিয়ে বের হয়ে এলাম। পেছন থেকে আমেরিকান এম্বেসির কর্মকর্তা ছুটে এল বলল, ‘স্যার স্যার ঢাকা থেকে অনেক বড় বড় মানুষ আসছেন তাদেরকে আপনার কথা বলা হয়েছে। আপনি চলে গেলে আমি এখন তাদেরকে কি বলব?’

    আমি বললাম, ‘তাদেরকে কি বলবেন সেটা আপনার ব্যাপার, আমার না।’

    আমি জানি অনেকে আমার এরকম ব্যবহারকে যথেষ্ট বিচিত্র বলে মনে করবেন, ৭১ এ জামায়াতে ইসলামীর কার্যকলাপের জন্য বর্তমান জামায়াতে ইসলামী বা ছাত্রশিবিরের দায়ী করতে রাজি হবেন না। ‘অতীত ভুলে গিয়ে ভবিষ্যতের মুখের দিকে তাকিয়ে সবাইকে নিয়ে একত্রে বাংলাদেশ গড়ে তুলি’ এরকম একটা যুক্তি দাঁড় করানোর চেষ্টা করেন। যারা এই যুক্তি বিশ্বাস করতে চান তারা করতে পারেন কিন্তু আমার পক্ষে সেই যুক্তি মেনে নেওয়া সম্ভব না। আমার যথেষ্ট বয়স হয়েছে যতদিন বেঁচে আছি নিজের হাতে জেনে শুনে কোনও যুদ্ধাপরাধী কিংবা তাদের সংগঠনের কারো হাত স্পর্শ করিনি এই অনুভূতিটি নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই।

    সিলেটের সেই অনুষ্ঠানে আমি যার হাত স্পর্শ করতে রাজি হইনি সেই মানুষটি বর্তমানে জামায়াতে ইসলামীর আমীর। জঙ্গি কার্যকলাপের জন্য তার ছেলেকে মাসখানেক আগে গ্রেফতার করা হয়েছে। কয়েকদিন আগে খবর পেয়েছি একই কারণে সেই মানুষটিকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।

    যারা রাজনীতি করেন তারা সবসময় বলেন রাজনীতিতে নাকি কোনও শেষ কথা নেই। আমি সেই কথাটি মানতে রাজি নই। অবশ্যই রাজনীতিতে শেষ কথা আছে, থাকতেই হবে। বাংলাদেশকে এমনি এমনি কেউ হাতে তুলে দেয়নি। ডেইলি টেলিগ্রাফের ভাষায়, রক্ত যদি স্বাধীনতার মূল্য হয়ে থাকে তাহলে পৃথিবী আর কোনও দেশ এত মূল্য দিয়ে স্বাধীনতা কিনে আনেনি। সেই বাংলাদেশের রাজনীতির শেষ কথা হচ্ছে, এই দেশে রাজাকাররা রাজনীতি করতে পারবে না। শুধু শেষ কথা নয়, প্রথম কথাটিও তাই।

    দেশে প্রায় হঠাৎ করে নির্বাচন-নির্বাচন আবহাওয়া চলে আসার পর জামায়াতের ইসলামী একটা খাঁটি রাজনৈতিক দলের মতো তাদের নিজেদের দাবি দাওয়া উচ্চারণ করতে শুরু করেছেন এবং বেশ কিছু রাজনৈতিক দল খুবই নিরীহ ভঙ্গিতে বলছে, ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে তারা যদি অংশ নিতে চায় তারা নিতেই পারে, এটি তাদের ব্যাপার।’ এরপরেই তাদের বলা উচিত, ‘তবে এই দলটি হচ্ছে স্বাধীনতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের দল। নৈতিকভাবে এই দেশে রাজনীতি দূরে থাকুক এই দেশে তাদের কোনও ধরনের অস্তিত্ব থাকারই অধিকার নেই।’ তবে কোনও রাজনৈতিক দল একথা বলছে না, মজার কথা হচ্ছে প্রগতিশীল বামপন্থী দলগুলোও না। যেহেতু অতীতে আল বদরের কমান্ডাররা এই দেশে মন্ত্রী হয়ে দেশ শাসন পর্যন্ত করেছে কাজেই এই দেশের রাজনৈতিক দলের কাছে আমি আসলে বড় ধরনের কিছু আশা করি না। সত্যি কথা বলতে কি মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগে যখন জামায়াত ইসলামের নেতা কর্মীরা আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছে তখন থেকে এই দেশের রাজনীতি নিয়ে আমার চাওয়া পাওয়া অনেক কমে গেছে। তবে দেশের মানুষকে কথা দিয়ে সে কথা রেখে এদেশের মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার জন্য আমি শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞ। সত্যি কথা বলতে কি এই দেশ নিয়ে আমার যে একটি মাত্র সখ অপূর্ণ ছিল, সেটি পূর্ণ হয়েছে। এখন আমার আর কিছু চাওয়ার নেই।

    রাজনৈতিক দলের কাছে চাওয়ার কিছু না থাকতে পারে, কিন্তু দেশের বুদ্ধিজীবীদের কাছে অবশ্যই আমার কিছু চাওয়ার আছে। শুধু বুদ্ধিজীবী নয়, পত্রপত্রিকার কাছেও আমার চাওয়ার আছে। প্রধান চাওয়াটি হচ্ছে ‘নিরপেক্ষ’ শব্দটি নিয়ে। দোহাই আপনাদের, যুদ্ধাপরাধী কিংবা তাদের দলবল এবং অন্য সবাইকে নিয়ে নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করবেন না। যখন এই দেশে যুদ্ধাপরাধীদের নির্বাচনের ব্যাপারটি আসবে, তখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ নিন। আমি বুদ্ধিজীবীদের বলব সরকারকে কিংবা তাদের দলকে যেভাবে খুশি সমালোচনা করুন, দেশের উন্নতি নিয়ে যেভাবে খুশি তামাশা করতে চান তামাশা করুন, কারো কাছে বেশি কিছু চাইবো না, সবাইকে অনুরোধ করব তাদের লেখা শেষে শুধু একবার পরিষ্কার করে লিখবেন, “এই দেশে সবাই রাজনীতি করবে, শুধু রাজাকারদের রাজনীতি করার অধিকার নেই।”

    আমার এখন একটিমাত্র শখ, নির্বাচনের রাতে আমি নাকে তেল দিয়ে ঘুমাবো। ঘুম থেকে উঠে দেখব একটি দল নির্বাচনে জিতে এসেছে। যেটাই জিতুক সেটাকে নিয়ে আমার কোনও ভাবনা থাকবে না কারণ এই দেশে সব রাজনৈতিক দলই হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধে স্বপক্ষের দল।

    এটি কি খুব বেশি কিছু চাওয়া হয়ে গেল? নাকি এটি আমার একটি সমস্যা?

    লেখক: কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ

    জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।
    আমার মনে মুক্তমত/ফিচার/সাক্ষাৎকার সমস্যাটা হয়,
    Related Posts

    নির্বাচন দ্রুত না দিলে পরিণতি পতিত সরকারের মতোই হবে : দুদু

    May 8, 2025
    গয়েশ্বর

    আমাদের অপরাধ একটাই, আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই, জনগণের অধিকার চাই : গয়েশ্বর

    May 2, 2025
    শ্রমজীবী

    নির্বাচিত সরকার-গণতন্ত্র ছাড়া শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে না

    May 2, 2025
    সর্বশেষ সংবাদ
    জুলাই ফাউন্ডেশন
    আহত-নিহতদের পরিবারকে ১০১ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা করেছে জুলাই ফাউন্ডেশন
    স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
    আবদুল হামিদের দেশত্যাগে জড়িতদের ধরা হবে, না হলে আমিই চলে যাব: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
    জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে পদত্যাগ করলেন স্নিগ্ধ
    সশস্ত্র বাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা চতুর্থ দফায় বাড়ল
    Redmi
    Redmi Smart Fire TV 50: Price in Bangladesh & India with Full Specifications
    Samsung Galaxy S23 বাংলাদেশে ও ভারতে দাম
    Samsung Galaxy S23 বাংলাদেশে ও ভারতে দাম বিস্তারিত স্পেসিফিকেশনসহ
    গৃহবধূকে গণধর্ষণ
    বরিশালে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গৃহবধূকে গণধর্ষণ, অভিযুক্ত দুইজন গ্রেপ্তার
    বোমা হামলার হুমকি
    ইডেন গার্ডেনে আইপিএলের ম্যাচ চলাকালীন বোমা হামলার হুমকি!
    ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
    ভারতের কাশ্মির-পাঞ্জাব-গুজরাটসহ ১৫ শহরে হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান
    Lava O3 বাংলাদেশে ও ভারতে দাম
    Lava O3 বাংলাদেশে ও ভারতে দাম বিস্তারিত স্পেসিফিকেশনসহ
    • About Us
    • Contact Us
    • Career
    • Advertise
    • DMCA
    • Privacy Policy
    © 2025 ZoomBangla News - Powered by ZoomBangla

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.