স্পোর্টস ডেস্ক : এবার ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে কাতারে। তবে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করেনি বিবিসি। এতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনায় সরব হয়েছেন সাংবাদিক ও মিডিয়াকর্মীরা। বিশ্বকাপ উপলক্ষে কাতারের বিরুদ্ধে ভণ্ডামি, ইসলামোফোবিয়া, বর্ণবাদমূলক প্রচারণার জন্য তারা পশ্চিমা মিডিয়াকে অভিযুক্ত করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান চলার সময়ে বিবিসির স্টুডিওতে আয়োজিত টকশোতে কাতার বিরোধী বলে পরিচিত ফুটবল বিশেষজ্ঞ ও সাবেক খেলোয়াড়েরা যোগদান করেন। সে সময় এলজিবিটি সম্প্রদায়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা, কাতারে শ্রমিক অধিকার হরণ, ফিফাকে ঘুষ প্রদানের অভিযোগ সম্বলিত হেডলাইন সম্প্রচার করা হয়।
বিবিসির পাশাপাশি অন্যান্য পশ্চিমা মিডিয়াও কাতারের বিরুদ্ধে সমালোচনামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল শিরোনাম দেয়, ‘ফাঁকা সিট ও পরাজয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করলো কাতার।’
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের বিরতির সময় খাবার কিনতে যাওয়া দর্শকদের ছবি ব্যবহার করে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রকাশিত রিপোর্টে শিরোনাম দেয়া হয়, ‘প্রথমার্ধের পর হাজার হাজার কাতারি সমর্থকের স্টেডিয়াম ত্যাগ।’
উল্লেখ্য, গত শনিবার ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো তার এক ভাষণে খোলাখুলিভাবে কাতারের পক্ষে সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং ইউরোপের ওপর ভণ্ডামির অভিযোগ তোলেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ইউরোপের উচিত হলো- সমালোচনা বন্ধ করা এবং অভিবাসী উন্নয়নে মনযোগী হওয়া। আমরা ইউরোপিয়ানরা বিগত তিন হাজার বছর যাবত যা করেছি, সেসবের জন্য অন্যকে উপদেশ দেয়ার আগে আমাদের আরো তিন হাজার বছর ক্ষমা চাওয়া দরকার।
ইসলামোফোবিয়া ও দ্বিচারিতার অভিযোগ
কাতারের বিরুদ্ধে পশ্চিমা মিডিয়ার কথিত অভিযোগের প্রতিবাদে সোশ্যালমিডিয়া ব্যবহারকারীরা ডেইলি মিররের প্রকাশিত একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট ব্যাপকভাবে শেয়ার করেন। রিপোর্টটিতে ব্যাংককে ইংল্যান্ড জাতীয় ফুটবল টিমের জন্য জার্সি তৈরি করা থাই শ্রমিকদের অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। পত্রিকাটির অভিযোগ, জার্সি তৈরি করা শ্রমিকদেরকে ঘণ্টাপ্রতি এক পাউন্ড বেতন দেয়া হয়েছে, বিপরীতে সেই জার্সি বিক্রি করা হয়েছে ১১৫ পাউন্ড বা ১৩৬ মার্কিন ডলারে।
আলি আল ওয়াজিন টুইট করেন, তোমাদের হোয়াইট হিপোক্রেসির জন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত হওয়া উচিত। অবশ্য সেটা থাকলে তো! তোমরা অন্যকে উপদেশ দাও, অথচ ব্যাংককে তোমাদের জার্সি তৈরি করা শ্রমিকদেরকে ঘণ্টাপ্রতি বেতন দিয়েছো মাত্র এক পাউন্ড আর সেই জার্সি বিক্রি করছো ১১৫ পাউন্ডে!
সাংবাদিক রবার্ট কার্টার টুইটারে লেখেন, বিবিসি আজ পর্যন্ত কোনো বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বয়কট করেনি, অথচ প্রথমবারের মতো যখন এটি কোনো আরব মুসলিম দেশে আয়োজিত হলো, তখনি তারা কাজটা করলো। ব্রিটেনের রাষ্ট্রীয় মুখপত্রের লজ্জাজনক আচরণ!
তিনি কাতারকে বিবিসির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান।
ব্রিটিশ সাংবাদিক পিয়ার্স মরগ্যান প্রশ্ন করেন, বিশ্বকাপ যখন রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়েছিলো, তখন বিবিসির এমন ‘নৈতিক বয়কট’ কোথায় ছিলো? অথবা গর্ভপাত বেআইনিকরণ ও আগ্নেয়াস্ত্র বিস্তারের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠেয় আগামী বিশ্বকাপের সময়ও কি বিবিসি এমন করবে? নাকি শুধু আরব দেশ বা আরব সংস্কৃতিই আপনাকে বিরক্ত করে?
ব্রিটিশ মুসলিম কাউন্সিলের মুখপাত্র মিকদাদ ভার্সি বিবিসির নৈতিক মানদণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, চীনে অনুষ্ঠিত শীতকালীন অলিম্পিক কাভারেজের সময় বিবিসির এই নীতিগুলো কোথায় ছিলো? অথচ সেখানকার ক্যাম্পগুলোতে হাজার হাজার উইঘুর মুসলিম নির্যাতিত হচ্ছে!
সিরিয়ান সাংবাদিক আহমদ মোওয়াফেক জাইদান টুইট করেন, যখন সন্ত্রাসী পুতিনের নির্দেশে আলেপ্পোতে বোম্বিং করে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করা হচ্ছিলো, চীনে উইঘুর মুসলিমদের হত্যা ও নির্যাতন করা হচ্ছিলো, তখনও কিন্তু বিবিসি ওয়ার্ল্ডকাপ (ও অলিম্পিকের) উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সম্প্রচার করেছিলো। কিন্তু গতকাল কাতারের বিরুদ্ধে শ্রমিক অধিকার হরণের কথিত অভিযোগে বিবিসি উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সম্প্রচার করলো না। এটা বর্ণবাদের পক্ষপাত।
মোহাম্মদ নুর টুইট করেন, বিশ্বকাপ কাভারেজ করা নিয়ে বিবিসির অবস্থান লজ্জাজনক। এটা কাতার ও তাদের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে আক্রমণের সমতুল্য।
The BBC didn’t air Qatars World Cup opening ceremony in protest. Yet just 9 months ago, the BBC aired the Winter Olympics opening ceremony in China, a country literally accused of committing genocide. GTOH with your sanctimony. The epitome of hypocrisy and double standards! pic.twitter.com/zinn6tdhXC
— Ayman (@AymanM) November 21, 2022
-আলজাজিরা মুবাশির অবলম্বনে মিসরের আলআজাহার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ হাশেমের অনুবাদ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।