বিনোদন ডেস্ক : সীমান্ত উত্তেজনায় যখন সাংস্কৃতিক আদান-প্রাদান বাধাগ্রস্ত, ঠিক সেই সময় কানাডিয়ান-ইন্ডিয়ান অভিনেত্রী নীরু বাজওয়া তার ‘সরদার জি ৩’-এর সহ-অভিনেত্রী হানিয়া আমিরকে ইনস্টাগ্রামে আনফলো করেছেন। সেই সঙ্গে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সিনেমাটির সব প্রচারমূলক কনটেন্ট সরিয়ে ফেলেছেন।
বহুল আলোচিত ‘সরদার জি-৩’ সিনেমার আন্তর্জাতিক মুক্তির কয়েক ঘণ্টা আগেই ঘটেছে এমন ঘটনা।
নীরু বাজওয়ার এই পদক্ষেপ এসেছে এমন এক সময়ে, যখন ভারতের অনলাইন মহলে পাকিস্তানি অভিনেত্রী হানিয়া আমিরকে পাঞ্জাবি ভাষার এই হরর-কমেডি সিনেমাতে অভিনয়ের সুযোগ দেওয়াকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। নীরু-হানিয়া ছাড়াও সিনেমাটির মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন ভারতের জনপ্রিয় গায়ক-অভিনেতা দিলজিৎ দোসাঞ্জ।
যদিও নীরু বাজওয়া বা হানিয়া কেউই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেননি। তবুও চলচ্চিত্র বিশ্লেষকদের মতে, বাজওয়ার এমন সিদ্ধান্ত মূলত ভারতের কট্টরপন্থি মহলের চাপে এবং জাতীয়তাবাদী সমালোচনার জবাবে নেওয়া হয়েছে।
অনেকেই আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় বাজওয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেছেন, পাকিস্তানি শিল্পীর সঙ্গে কাজ করে তিনি “জাতীয় অনুভূতিকে অবমূল্যায়ন করছেন” —বিশেষ করে কাশ্মীরের পেহেলগামে এ বছরের শুরুর দিকের এক প্রাণঘাতী হামলার পর বাড়তে থাকা কূটনৈতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে।
প্রযোজনা সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিনেমাটির শুটিং হয় এ বছরের শুরুতে—ভারতীয় সিনেমায় পাকিস্তানি শিল্পীদের ওপর অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা পুনরায় কার্যকর হওয়ার আগে। তবে সাম্প্রতিক বয়কটের ডাকের কারণে ছবির প্রযোজকরা ভারতে সব ধরনের প্রচারণা বাতিল করেন।
প্রযোজক গুনবীর সিং সিধু সাংবাদিকদের জানান, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে সরাসরি কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না। তবে “পরিস্থিতির সংবেদনশীলতা” বিবেচনা করে ভারতীয় প্রেক্ষাগৃহে সিনেমাটি মুক্তি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। সিধু বলেন, “আমরা ট্রেইলারও ভারতে রিলিজ দেইনি, কোনো প্রচারণাও চালাইনি।”
এই প্রেক্ষাপটে ওয়েস্টার্ন ইন্ডিয়ান সিনেমা ফেডারেশন (FWIC) এক কঠোর অবস্থান নিয়েছে।তারা সরকারের প্রতি দিলজিৎ দোসাঞ্জের পাসপোর্ট বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে। কারণ তিনি এখনো এ বিতর্কিত প্রজেক্টের সঙ্গে যুক্ত।তবে অনেক শিল্পী ও মানবাধিকার সংগঠন এ পদক্ষেপকে শিল্পীর স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
তবে সব বিতর্ক সত্ত্বেও আমর হুন্ডাল পরিচালিত ‘সরদার জি ৩’ আন্তর্জাতিকভাবে মুক্তি পাচ্ছে—বিশেষ করে পাকিস্তান, যুক্তরাজ্য ও কানাডায়। যেখানে বড় পাঞ্জাবি ভাষাভাষী দর্শকগোষ্ঠী রয়েছে।এ সিনেমাটির মাধ্যমেই হানিয়া আমির ভারতীয় পাঞ্জাবি চলচ্চিত্রে অভিষেক করছেন।
এ ঘটনাপ্রবাহ দুই প্রতিবেশী দেশের সাংস্কৃতিক বিভেদের গভীরতাকেই আবার সামনে এনে দিয়েছে, যেখানে শিল্প ও রাজনীতি ক্রমেই জটিলভাবে জড়িত হয়ে পড়ছে। মূলত ‘সরদার জি’ ফ্র্যাঞ্চাইজি অতীতে উভয় দেশেই জনপ্রিয় ছিল—বিশেষত এর হাস্যরস ও অতিপ্রাকৃত গল্পের জন্য।
তবে চলচ্চিত্রশিল্পের ভেতরের সূত্র বলছে, পাকিস্তানি শিল্পীদের নিয়ে কাজ করা সবসময়ই একটি ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত—যদিও সেই প্রজেক্ট ভারতের বাইরে তৈরি হোক না কেন।
মুম্বাইয়ের এক জ্যেষ্ঠ চলচ্চিত্র সমালোচক নাম প্রকাশ না করে বলেন, “এটা স্মরণ করিয়ে দেওয়া যে—রাজনৈতিক উত্তেজনা খুব সহজেই সৃজনশীল অঙ্গনে ছড়িয়ে পড়তে পারে।”
শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত হানিয়া আমির এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তার সামাজিক মাধ্যমে এখনো সিনেমাটির প্রচারণামূলক পোস্ট রয়েছে।
অন্যদিকে নীরু বাজওয়ার অ্যাকাউন্টে সিনেমাটির কোনো চিহ্নই আর পাওয়া যাচ্ছে না—যা এই বিতর্কে আরও জল্পনা ও সংবাদমাধ্যমের মনোযোগ বাড়িয়ে দিয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।