আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সরাসরি আলাপ-আলোচনা করার আগ্রহ জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। খবর রয়টার্স’র।
বৃহস্পতিবার এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে এই ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সবাইকে নিজেদের মতো মনে করেন বলে খোঁচাও দিয়েছেন তিনি।
ইতোমধ্যে পুতিনের এই আগ্রহের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি এ বিষয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এই মূহুর্তে ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের আলাপচারিতা সম্ভব নয়, কারণ রাষ্ট্রীয় কাজে তিনি এখন ‘অতিমাত্রায় ব্যস্ত’।
বুধবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন জো বাইডেন। সেখানে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল বিরোধীদের ওপর রাশিয়ান সরকারের নির্মম আচরণের প্রেক্ষিতে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে তিনি ‘খুনি’ বলে মনে করেন কি না।
সেই প্রশ্নের উত্তরে বাইডেন বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ (আমি তাকে খুনি বলে) মনে করি।’ পাশাপাশি ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পুতিন হস্তক্ষেপ করেছিলেন অভিযোগ করে সাক্ষাৎকারে বাইডেন বলেন, এজন্য রাশিয়াকে ‘চড়া মূল্য’ দিতে হবে।
এই সাক্ষাৎকার প্রচারের পরদিনই ওয়াশিংটন থেকে নিজেদের দূত আনাতোলি আন্তোনভকে ফিরিয়ে নিয়েছে মস্কো। রাশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চ ও নিম্নকক্ষের একাধিক সদস্য ইতোমধ্যে বাইডেনের এই বক্তব্যের প্রতিবাদও করেছেন। তবে পুতিন তখনো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।
অবশেষে বৃহস্পতিবার রাতে রাশিয়ার একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় বাইডেনের বক্তব্যের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয় পুতিনের কাছে।
উত্তরে পুতিন বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে সরাসরি আলোচনার আহ্বান জানাতে চাই। আমার বিশ্বাস, খোলাখুলি আলাপ-আলোচনা অনেক ব্যাপারে অস্পষ্টতা দূর করবে। তবে শর্ত হচ্ছে, এই আলোচনা হতে হবে লাইভ এবং অনলাইনে। অবিলম্বে এটা শুরু করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।’
বৃহস্পতিবারের সাক্ষাৎকারে অবশ্য বাইডেনকে খোঁচা দিতেও ছাড়েননি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে…বাল্যকালে যখন আমরা খেলার মাঠে বা উঠোনে বন্ধুদের সঙ্গে ঝগড়া করতাম, তখন বলতাম— যে এটা বলেছে, সে তা করেছে। এখন আমার মনে হয়, ওই কথাটি স্রেফ বাচ্চাদের কথা নয়, মানুষের মানসিক গঠন বিষয়ে গভীর ইঙ্গিত রয়েছে কথাটিতে।’
‘আমরা সবসময় অন্যদেরকে নিজেদের বৈশিষ্ট অনুযায়ী বিচার করি এবং এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাই যে, প্রকৃতপক্ষে আমরা যেমন, অন্যরাও তেমনই। সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই আমরা তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে মূল্যায়ন বা মতামত দাঁড় করাই।’
‘যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস আমরা অনেকেই জানি। স্থানীয় আদিবাসীদের হত্যা করে সেখানে বসতি স্থাপন করা, কালো মানুষদের ধরে এনে দাস হিসেবে ব্যবহার করা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানে পারমাণবিক বোমা ফেলা— এরকম আরো বহু ইতিহাস আছে তাদের।’
‘তারা মনে করে আমরাও তাদের মতোই। কিন্তু সেটি সঠিক নয়, আমরা ভিন্ন। আমাদের জেনেটিক কোড থেকে শুরু করে সংস্কৃতি, আদর্শগত মূল্যবোধ…সবই তাদের থেকে আলাদা।’
‘রাশিয়ার জন্য লাভজনক কিংবা রাশিয়ার মঙ্গলের জন্য উপযোগী সব ক্ষেত্রে আমরা তাদের সঙ্গে কাজ করতে চাই। তারা যতই আমাদের উন্নয়ন থামিয়ে দিতে চাক, কিংবা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করুক বা অপমান করুক, রাশিয়া তার অবস্থান পরিবর্তন করবে না।’
এদিকে পুতিনের এই সাক্ষাৎকার প্রচারের পর সাংবাদিকরা বাইডেন প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া জানতে হোয়াইট হাউসে যোগাযোগ করেছিলেন। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘আমাদের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট পুতিনের একদফা কথা হয়েছে, এখনো বিশ্বের অনেক নেতার সঙ্গেই যা হয়নি। আর তাছাড়া, প্রেসিডেন্ট এখন অত্যন্ত ব্যস্ত আছেন। আগামীকালই বিশেষ কাজে জর্জিয়া যাচ্ছেন তিনি।’
দুই নেতার মধ্যে সর্বশেষ কথা হয়েছিল গত ২৬ জানুয়ারি। সেদিন আনুষ্ঠানিকভাবে নিজ কার্যালয়ের দায়িত্ব বুঝে নিয়েছিলেন বাইডেন। এ উপলক্ষ্যে টেলিফোনে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন পুতিন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।