সরু ধানে নতুন আশা
জুমবাংলা ডেস্ক : অতিলম্বা ও সরুধান। পরিপক্কও হয় আগাম। এক কেজি ধান বীজ থেকে পাওয়া যায় ৮০ কেজি ধান। এমন আকর্ষণীয় ও রপ্তানিযোগ্য বিনা ধান-২৫ এ নতুন আশা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউটের (বিনা) বিজ্ঞানীদের অন্তত ৮ বছরের গবেষণায় দেশে প্রথম সরু ধানে চাষ শুরু হয়েছে। এ বছরই মাঠ পর্যায়ে চাষ হওয়া সরু ধানে ফলনও হয়েছে বেশ। ভালো দাম পাওয়ায় ও দ্রুত ঘরে তোলায় আগামীতে এ ধানের ব্যাপক বিস্তার হবে বলে আশা করছেন গবেষকরা। সব মিলিয়ে বাণিজ্যিক কৃষি ও রপ্তানীতে নতুন আশা জাগাবে বিনা ধান-২৫।
দেশের চাহিদা অনুসারে সরু ও চিকন (প্রিমিয়াম কোয়ালিটি) চাল অপ্রতুল থাকায় এবং বিদেশে রপ্তানির উদ্দেশে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ বিনা ধান-২৫ উদ্ভাবন করে। উদ্ভিদ প্রজণন বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সাকিনা খানমের দীর্ঘ ৮ বছরের গবেষণার পর ২০২২ সালের ১৮ অক্টোবর বিনা ধান-২৫ জাতের উন্মোচন করা হয়।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বিনা ধান ২৫ বিদেশে রপ্তানিযোগ্য, যা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ভূমিকা রাখবে এবং আমদানি নির্ভরতা কমাবে। বিনা ধান-২৫ মূলত ব্রি ধান-২৯ এর বীজে জাপানের একটি ল্যাপে ৪০ গ্রে মাত্রার কার্বন আয়রন রশ্মি প্রয়োগ করে উদ্ভাবন করা হয়, যা চেকজাত ব্রি ধান ৫০ থেকে দশ শতাংশ ফলন ও প্রিমিয়াম কোয়ালিটি সম্পন্ন এবং আগাম পরিপক্ক। গড়ে ১৩৮ থেকে ১৪৮ দিনে এই ধান ঘরে তোলা যায়। এ ধানের গড় ফলন হেক্টর প্রতি সাড়ে সাত থেকে সাড়ে ৮ মেট্রিক টন। এখন পর্যন্ত উদ্ভাবিত ধান জাতের মধ্যে বিনা ধান-২৫ সর্বাধিক লম্বা ও সরু। জমিতে পানি জমে থাকলে এবং বৈরী আবহাওয়ায় প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টিতে গাছ সাময়িক হেলে পড়লেও জমি থেকে পানি সরে গেলে এবং রৌদ্রোজ্জ্বল অবস্থায় জাতটি ২-৩ দিনের মধ্যে ফের পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে ও স্বাভাবিক ফলন দেয়।
চলতি বোরো মৌসুমে সারাদেশের কৃষক পর্যায়ে স্বল্প পরিসরে চাষ হয় দেশের প্রথম সরু ধান। এক বিঘায় ২৭ মণ বিনা ধান-২৫ পাওয়া যাচ্ছে। এতে অন্য ধানের চেয়ে বেশি মূল্যও পাচ্ছেন কৃষক। এ ধানই বীজ হিসেবে ছড়িয়ে দেওয়া যাবে। গতকাল সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে মাড়াই শেষে ১ বিঘাতে ২৭ মণ ধান পাওয়া যায় বলে জানান বিনার কর্মকর্তারা।
বিনা ধান-২৫ এর গবেষক ড. সাকিনা খানম বলেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যত ধানের জাত আবিষ্কার হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে লম্বা এবং সরু বিনা ধান-২৫। প্রিমিয়াম কোয়ালিটির চাহিদা দেশে অনেক বেশি এবং এটি বিদেশেও রপ্তানি করা যায়। এই ধান স্বল্পমেয়াদী, জীবনকালও খুবই কম। ব্রি ধান ২৯ এর চেয়ে ১৫ থেকে ২০ দিন আগে পেকে যায়।
তিনি আরও বলেন, এই ধানের গড় ফলন হেক্টর প্রতি সাড়ে ৭ থেকে সাড়ে ৮ মেট্রিক টন। এটি যেমন প্রিমিয়াম কোয়ালিটি, অল্প জীবনকাল এবং ফলনও বেশি। গাছটি লম্বা বেশি হওয়ায় কৃষক প্রচুর খড় পাবেন। আর ফসল থেকে কৃষক যেমন দাম পাবেন, তেমনি খড় বিক্রি করেও লাভবান হবেন।
বিনার এই বিজ্ঞানী বলেন, এই চাল মিনিকেটের চেয়ে লম্বা। চাল যখন ভাত রান্না করা হবে তখন চালের চেয়ে দ্বিগুণ লম্বা ভাত হবে। অনেকটা বাসমতির মতো। এর ফলে কৃষক সরাসরি চিকন চাল হিসেবে বাজারজাত করতে পারবেন। প্রচলিত বোরো ধানের জাতের চেয়ে এ ধানে রোগ ও পোকার আক্রমণ নেই বললেই চলে। এ ধান চাষে পানি যেমন কম লাগে, তেমনি ইউরিয়া সারও কম লাগে।
বিনার মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, এ পর্যন্ত আমরা ২৬টি ধানের জাতের আবিষ্কার করেছি। এর মধ্যে বিনা ধান-২৫ অন্ত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জাত। বিশেষ করে এ জাতটি বিদেশে রপ্তানিযোগ্য প্রিমিয়াম কোয়ালিটির সরু বা চিকন। পাকিস্তান বা ভারতে এই ধরণের বাসমতি টাইপের জাত আছে। এ ধানের বাজারমূল্য বেশি। মোটা চালের দাম যেখানে ৪০ টাকা, সেখানে এই চালের দাম বাজারে ৭০ থেকে ৮০ টাকা।
তিনি আরও বলেন, আমাদের আসল উদ্দেশ্য কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণ, রপ্তানিমুখী করা। আমদানি নির্ভরতা কমানো সরকারের বড় উদ্দেশ্য। সেই জায়গায় বিনা ধান-২৫ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই ধান গাছ লম্বা হলেও হেলে পড়ে না, হেলে পড়লেও সোজা হয়ে যায়। ফলনও বেশি হয়। এই ধান কৃষক পর্যায়েও সমাদৃত হবে। এ ধান আবাদ করলে একজন কৃষক দ্বিগুণ লাভ করতে পারবেন। এই বছর প্রতিটি উপজেলায় ৫ কেজি করে বিনা ধান-২৫ এর বীজ পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি। এক কেজি বীজ থেকে ৮০ কেজি ধান হয়। সূত্র : সমকাল
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।