জুমবাংলা ডেস্ক : করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম সাংবাদিক হিসেবে মৃত্যুবরণ করেছেন দৈনিক সময়ের আলোর নগর সম্পাদক হুমায়ুন কবির খোকন। মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) রাজধানীর একটি হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বুধবার (২৯ এপ্রিল) জানা যায়, তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সাংবাদিক হুমায়ুন কবির খোকনের মৃত্যু ও তার শেষ সময়ের বর্ণনা দিয়ে হৃদয়গ্রাহী এক স্ট্যাটাস দিয়েছেন তার ছেলে আশরাফুল আবির।
জুমবাংলাডটকম পাঠকের জন্য তার স্ট্যাটাসটি হুবুহু তুলে দেওয়া হলো- ‘আমি ও আমার পরিবার এর কাছে মনে হচ্ছে যে আমরা হয়তো কোনো বাজে স্বপ্ন দেখলাম । কিন্তু এইটা যে আসলেই বাস্তবেই হয়ে গেলো আমরা এখনো বিশ্বাসই করতে পারছি না। আমার কাছে এখনো মনে হচ্ছে যেন একটা বাজে স্বপ্ন দেখে হয়তো ঘুমটা ভাঙলো।’
‘আমার বাবা একজন অত্যন্ত সৎ, নিষ্ঠাবান, পরিশ্রমী ব্যক্তি ছিলেন। যিনি সারাটি জীবনে হয়তো নিজের কথা কখনো ভাবেননি। আমাদের জন্যই হয়তো সারাটা জীবন উৎসর্গ করে গেলেন। এই করোনা সংকটময় দিনেও তিনি ঝুঁকি নিয়ে প্রতিটা দিন অফিস এ গিয়েছেন বাসায় এসেছেন। আমি এই নিয়ে আমার বন্ধুদের ও বলে ছিলাম যে আমরা খুব ভয়ে আছি। কারণ আমার আব্বু আর আপু দুইজন চাকরিজীবী পরিবারে এবং তারা প্রতিদিনই অফিসের গাড়ি দিয়েই অফিস এ আসা যাওয়া করেছেন’
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাংবাদিক হুমায়ূন কবির খোকন‘আমার বাবা ৩-৪ দিন ধরে কাশি হচ্ছিলো পরিমাণটা দিন দিন বেড়েই চলছিল। আমার তখন ই সন্দেহ হচ্ছিলো। আমি বাবা কে বললাম আপনার করোনা হয়নি তো? সে হেসে বললো অরে ধুর বেটা টন্সিল এর বেথা এইটা আগের থেকেই ছিল। ঐরকম কিছু না। কারণ সে চাচ্ছিলো বাসায় থেকেই ট্রিটমেন্ট নিয়ে সুস্থ হতে। কারণ করোনা পজিটিভ হলে এলাকার ভিতর আতঙ্ক ছড়াবে। এছাড়া লজ্জার ভয়ে সে তখন ও এইটা সাধারণ ভাবেই দেখছিলো। আমি ও ভাবলাম যে হয়তো এইরকম জ্বর কাশি হয়তো সাধারণ হয়তো বাসায় ওষুধ খেলে গরম পানি খেলে হয়তো ঠিক হয়ে যাবে। আমি এই কয়দিন বাসায় সাধারণ ভাবেই কাটাচ্ছিলাম বিভিন্ন স্কিল ডেভেলপেড করার জন্য অনেক কিছু শিখছিলাম ।কিন্তু বাবার কাশি বেড়েই চলছিল আম্মু ও জ্বর অনুভব করতে শুরু করলো তার দুইদিন আগে। তখন আমি ভয় পেয়ে গেলাম। আম্মুকে বললাম বললো যে করোনার নমুনা দুই একদিনের ভিতরই নিতে আসবে বললো। কিন্তু বাবার কাশি বেড়েই চলছিল কাশির সাথে সাথে ফুসফুস মারাত্মকভাবে আক্রমণ করছিলো মনে হচ্ছে। হয়তো বাবার গলায় চুলকাচ্ছিল। আমি এর পরের দিন একটু দেরিতে উঠলাম দেখলাম আম্মু বাবাকে ভাতের জাউ রান্না করে খাওয়াচ্ছে। হটাৎ দেখলাম সে জানি কেমন করছে মনে হচ্ছে অনেক কষ্ট হচ্ছে মনে হলো শ্বাস কষ্ট হচ্ছে। সে ওই মুহূর্তে এই লড়াই এর সাথে পেরে উঠতে পারে নি। আম্মু কে বললাম বললো সকালে অ্যাম্বুলেন্স কে খবর দেওয়া হইছে। উত্তরার রিজেন্ট এ ব্যবস্থা করা হইছে। অ্যাম্বুলেন্স আসতেছে। আম্মু বললো তোর কাছে কি ভাংতি টাকা আছে আমাকে দে তো। আমার কাছে ৩৫০০ টাকা ছিল আমি পুরাটাই আম্মুকে দিয়ে দিলাম সাথে সাথে। আমি ঘরে পড়ার জামা পরেই অ্যাম্বুলেন্স এ উঠে গেলাম। কারণ আমার মনে হচ্ছিলো এমনিতেই দেরি হয় গেছে। আমি ভাবলাম হাসপাতাল এ হয়তো অনেকেই থাকবে আব্বুর জন্য অফিসের লোক। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখলাম আমি আর আম্মু ছাড়া পরিচিত কেউ নেই। কারণ লকডাউন থাকার জন্য গাড়ি তেমন চলে না রাস্তায় এছাড়া অনেকেই হয়তো লক্ষণগুলো বর্ণনা শুনে হয়তো কেউ আসতে সাহস করছিলো না। এইদিক সাবান আঙ্কেল সব ব্যবস্থা করে রেখেছিলো ঐখানে। তারা সর্বাত্মক চেষ্টাই করেছিল আই.সি.উই তে রেখে অক্সিজেন দেওয়ার কিন্তু ডাক্তার বললো তার পালস নেই এবং ব্রেন ও অক্সিজেন নিচ্ছে না। ডাইরেক্টলি বললেন ও না যে সে আগেই মারা গেছে বললো আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি দোয়া করেন যদি ব্রেইন হটাৎ মিরাকেল ভাবে যদি কাজ করতে শুরু করে। রাত ১০:০০ টার দিকে আম্মু কে উপরে ডাকলো শেষ বারের মতো দেখার জন্য। তখন আম্মু ফোনে কয়েকজন কে জানিয়ে দেয়।’
‘এছাড়া নিউজ স্ক্রল গুলাতেও অফিসিয়ালি আপডেট দিয়ে দেয় যে বাবা আর নেই। এখন বাবার করোনা টেস্ট হওয়ার আগেই মারা গেছেন তাই এইটা অফিসিয়ালি বলা হয়নি। বলা হয়েছে যে করোনা ভাইরাস এর উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।’
‘সবাই বাবার জন্য দোয়া করবেন যেন আল্লাহ ওনাকে জান্নাতবাসী করেন। ওনার মতো ভালো, সৎ এবং নিষ্ঠাবান মানুষ খুব কম ই আছে সমাজে। এছাড়া আমি চাই না এখন সবাই আমাদের কে ডিমোটিভেট বা ভয়ভীতি দেখাক। আমরা এমনিতেই অনেক কঠিন সময় পার করছি।’
‘আমরা সবাই সতর্কতা অবলম্বন করেই বাসায় আছি। বাসা বা এলাকা হয়তো লোকডাউন হতে পারে। তাই এই মুহূর্তে মনে করি সবাই আমাদের জন্য দোয়া করুক। আমার বন্ধুরা অনেক চিন্তিত হয়ে পড়েছে আমার জন্য আমাদের সামনের দিন গুলো নিয়ে। আশা করি আমাদের পরিবার, আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ, ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটি, বাংলাদেশ সরকার পাশে থাকবেন। বাস্তবতা কঠিন হয়ে গেছে তবুও বাস্তবতার সাথেই সবকিছু এখন এডজাস্ট করে নিতে হবে। সবাই ভালো থাকবেন এবং সচেতন হবেন। আপাতত আর কিছু লিখতে চাচ্ছি না।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।