সাই পল্লবী
সৌন্দর্যের সংজ্ঞা যদি দিতেই হয় তবে তা ‘মালার’ কে দিয়ে দাও। সাই পল্লবী হতে পারে অনন্য এক রুপ। কী অদ্ভুত মায়াময় চোখের চাহনি দিয়ে মনের ভেতরের প্রচন্ড দাবদাহের মাঝে শীতল ঠাণ্ড সুবাতাস বইয়ে দেয়। আবার কখনো কখনো রবিনহুডের তীর এর মতো আপনার হৃদয় এফোঁড় ওফোঁড় করে দিবে । তাঁর ভুবন ভোলানো হাসি দিয়ে আপনাকে ইংরেজি তে ‘ফ্রিজ’ আর বাংলায় বরফে পরিনত করে দিবে।
ধরেন, প্রচণ্ড অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যাথায় ভুগছেন। আপনাকে এক্ষুনি অপারেশন করাতে হবে। হাসপাতালে অ্যানেস্থেশিয়া নেই কিন্তু আপনার সামনে এসে ‘মালার’ এক চিলতে হাসি দিলো। এরপর এসে ডাক্তার এসে যদি আপনার কিডনিও বের করে নিয়ে যায়, টেরও পাবেন না।
বলছিলাম সাই পল্লবী সেন্থামারাই নামের এক ২৭ বছর বয়সী তরুণীর কথা। যিনি আজ লাখো তরুণের কাছে মালার নামে পরিচিত । তাঁর সাই পল্লবী থেকে মালার হওয়ার কাহিনি ছিলো অনেকটা হঠাৎ করেই।
সাই পল্লবীর (Sai Pallavi) সেই গল্পটাই আজ বলবো
জর্জিয়ার তিবিলিসি ষ্টেট মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে ডাক্তারি পড়তে গিয়েছিলেন। ওই সময় পরিচালক আলফোনসে পুথরেন তাঁকে ‘প্রেমাম’ মুভিতে মালার হওয়ার অফার দেন। পড়াশোনার ফাঁকে ছুটির দিন গুলোতে সে এই ‘প্রেমাম’ মুভির শ্যুটিং করে আবার জর্জিয়ায় ফিরে যান আর নিজেকে রেখে যান অনেকেরই স্বপ্ন মানুষ হিসেবে।
শুধুমাত্র সৌন্দর্যে বিমোহিত করেননি সাথে অভিনয় দক্ষতা দিয়ে ওই বছরই সেরা নবাগত অভিনেত্রী হিসেবে ফিল্মফেয়ার জিতে নেন। এরপর ‘কালি’ মুভির শ্যুটিংয়ে জন্যও তিনি মাস খানেক ছুটি নেয়ে আসেন।
যদিও তার শুরুটা হয়েছিলো নাচ দিয়ে। ছোটবেলায় স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নাচের মাধ্যমেই জনপ্রিয় হয়ে যান। এরপর ২০০৮ সালে আসেন বিজয় টিভির জনপ্রিয় ড্যান্স রিয়েলিটি শো ‘উঙ্গালিল ইয়ার আদুথা প্রভু দেভা’-তে। মজার ব্যাপার কি জানেন, তিনি অনুষ্ঠানে স্বীকার করেন যে তিনি কোনো প্রশিক্ষিত ড্যান্সার না। তিনি তার মা কে দেখে শিখেছেন, শুধু চেয়েছেন যেন মায়ের মতো নাচতে পারেন।
সাম্প্রতিক ফেয়ারনেস ক্রিমের একটি বিজ্ঞাপন ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি। সেই বিজ্ঞাপনের জন্য তাকে দুই কোটি রুপি দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। তবে এতো টাকার প্রস্তাব কেন ফিরিয়ে দিয়েছেন, জানেন? সৌন্দর্য নিয়ে তার ভাষ্য অনেকটা এরকম, ‘আমি বিউটি প্রোডাক্টের পক্ষে নই। আপনি যেমন এবং আপনার ত্বকের রঙ যেমন, সেটাতেই আপনার আত্মবিশ্বাসী হতে হবে।’
কারণ তিনি নিজে মেকআপ ব্যবহার করেন না বললেই চলে। পর্দায় যতটুকু না হলেই নয়, ততটুকু মেকআপে দেখা যায় তাঁকে। নিজের ত্বকের খুঁতগুলো লুকাতে চান না তিনি। আর সেকারণেই ফেয়ারনেস ক্রিমের বিজ্ঞাপন করতে চাননি তিনি।
গালে ব্রন বা মেছতার দাগ নিয়েও নায়িকা হওয়া যায়। এমনকি তিনি কখনই এইসব লুকাতে চাননি। নাচে দুর্দান্ত পারদর্শী, ব্যক্তিজীবনে ডাক্তার, নিজের প্রতি সম্মানবোধ, জনপ্রিয় নায়িকা হওয়ার সাথে সাথেও সব সময় ডাউন টু আর্থ থাকা। সব কিছু মিলিয়ে ভালোবাসা তো অটো বের হয় হৃদয় থেকে। যতই বলি ভালো বাসবোই না, কিন্তু মেয়েটা আমাকে ভালোবাসাতে বাধ্য করেই ছাড়ে!
১৯৯২ সালের নয় মে তামিলনাড়ুর কোটাগিরিতে এই ‘সৌন্দর্যের সংজ্ঞা’র জন্ম হয় । এই ‘রাঁধতে জানার সাথে চুল বাঁধতে জানা’ মেয়ে কিংবা ‘বিউটি উইদ ব্রেইন’ অথবা ‘সৌন্দর্যের সংজ্ঞা’ যাই বলি না কেনো, তাঁকে শুধু এইটুকুই বলি, ‘তুমি নিজে যেমন তোমার হাসি দিয়ে ভুবন ভোলাতে পারো তেমনি তোমার জীবন, তোমার হাসির মতোই থাকুক সব সময়।’
যে দুই শর্তে সিনেমা করেন সাই পল্লবী
ভারতের দক্ষিণী সিনেমার অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী সাই পল্লবী Sai Pallavi প্রতিটি সিনেমাতেও তার লুক সাদামাটা রাখেন। মেকআপ দিয়ে মুখের কোনো দাগ ঢাকেন না। ২০১৯ সালে ফেয়ারনেস ক্রিমের বিজ্ঞাপনের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন মালায়ালম ইন্ডাস্ট্রির নায়িকা সাই পল্লবী। ‘ফিদা’, ‘প্রেমাম’, ‘কালি’সহ বেশ কিছু দর্শকপ্রিয় ও ব্যবসাসফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন তিনি।
সিনেমায় অভিনয়ের ক্ষেত্রে দুটি শর্ত মেনে চলেন সাই পল্লবী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার দুটি শর্ত আছে, যা কোনো সিনেমাতেই ভাঙতে চাই না। আমি ছোট ও আঁটসাঁট পোশাক পরতে চাই না। অন্য শর্ত হলো, পর্দায় চুম্বন দৃশ্য করব না।’
এই অভিনেত্রী জানান, একবার তাকে পর্দায় চুম্বন দৃশ্য করতে অনুরোধ জানানো হয়। একটি রোমান্টিক দৃশ্যে নায়কের ঠোঁটে চুমু খেতে বলেন পরিচালক। কিন্তু সরাসরি না করেছিলেন তিনি। এই অভিনেত্রী জানান, পর্দায় চুম্বন দৃশ্যে তিনি স্বস্তিবোধ করেন না।
সাই পল্লবী মনে করেন, মি টু আন্দোলনের কারণেই এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে নিজেকে সহজে বাঁচাতে পেরেছেন তিনি।
খুব শিগগির ‘পাবা কাদাইগাল’ নামে একটি অ্যান্থলজি সিনেমায় দেখা যাবে সাই পল্লবীকে। চারটি গল্প নিয়ে নির্মিত এই সিনেমায় আরও অভিনয় করছেন— অঞ্জলী, গৌতম বাসুদেবা মেনন, কালিদাস জয়রাম, কাল্কি কোয়েচলিন, প্রকাশ, সান্তনু ভাগ্যরাজ প্রমুখ। ১৮ ডিসেম্বর নেটফ্লিক্সে এটি মুক্তি পাবে।
সাই পল্লবী ‘বিশাল’ প্রস্তাব ফেরিয়ে দিয়েছিলেন
সাই পল্লবী ২৯ বছর বয়েসী অভিনেত্রী সাই পল্লবী ২০০৫ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে পা রাখেন। এখন দক্ষিণ ভারতের ভার্সেটাইল অভিনেত্রী তিনি। ন্যাচারাল অভিনয়ে তার দারুণ খ্যাতি রয়েছে। ২০১৪ সালে মালায়ালাম ভাষার ‘প্রেমাম’ সিনেমায় প্রথম কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন সাই পল্লবী। এতে অভিনয় করে ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড জিতে নেন তিনি।
২০১৭ সালে তেলেগু ভাষার ‘ফিদা’ সিনেমায় অভিনয় করে দর্শকের নজর কাড়েন। ক্যারিয়ার দীর্ঘ না হলেও খুব বেছে বেছে কাজ করেন সাই পল্লবী। এবার মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিকের প্রস্তাব পেয়েও তা ফেরালেন এ অভিনেত্রী।
টলিউড ডটনেটকে সাই পল্লবীর ঘনিষ্ঠ একজন বলেন, কয়েক দিন আগে প্রখ্যাত একজন প্রযোজক নতুন একটি সিনেমায় কেন্দ্রীয় নারী চরিত্রে অভিনয়ের জন্য সাই পল্লবীকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এতে কাজের জন্য মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিক দেওয়ার কথা জানান। কিন্তু চরিত্র পছন্দ হয়নি সাই পল্লবীর। আর এজন্য মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিকের লোভনীয় প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন তিনি। সাই পল্লবী তার টিমকে জানিয়েছেন, যদি সলিড চরিত্র হয় তবেই যেন তারা কাজ নিয়ে আসেন।
এর আগে অনেক প্রসাধনী পণ্যের বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়ার প্রস্তাব পেয়েছেন সাই পল্লবী। বিনিময়ে মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিক দিতে চাইলেও তা গ্রহণ করেননি তিনি।
সাই পল্লবী বলেন, আমি কমার্শিয়াল বিজ্ঞাপন করতে চাই না। সত্যিকারের চ্যারিটি করতে চাই। পারিশ্রমিক ছাড়া আমি অসংখ্য চ্যারিটি করেছি, এ কথা অনেকেই জানেন।
যে সব ছবির জন্য আলোচিত অভিনেত্রী সাই পল্লবী
৯ মে ২৮ বছরে পা রাখলেন ভারতীয় দক্ষিণী সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী সাই পল্লবী। দারুণ দারুণ কাজ নিয়ে নানা সময়ে সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন মালায়ালাম ইন্ডাস্ট্রির এই সুন্দরী।
গেল বছর ২ কোটি রুপির বিণিময়ে ফেয়ারনেস ক্রিমের বিজ্ঞাপনে অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে চমকে দিয়েছিলেন সাই। তার এই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক প্রভাব ফেলে গোটা ভারতে।
২০০৮ সালে একটি ডান্স রিয়্যালিটি শো-এ অংশ নিয়েই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে আগমন ঘটে সাই পল্লবীর। ‘প্রেমাম’ নামের ছবি দিয়েই মূলত পরিচিত পান। শুধু তাই নয়, এই ছবির মধ্য দিয়ে তার অভিনয় পারদর্শিতায় মুগ্ধ হন দর্শক। খ্যাতি ছড়িয়ে যায় গণ্ডি। বাংলাদেশের দর্শকের কাছেও ব্যাপক জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী। জন্মদিনে তার আলোচিত পাঁচটি ছবির কথা থাকলো এখানে:
প্রেমাম: ২০১৫ সালে মালায়ালাম ছবি ‘প্রেমাম’ দিয়ে পরিচিতি পাওয়া অভিনেত্রী সাই পল্লবী। আলফোনস পুতিরান পরিচালিত সেই ছবিটির গল্প সব শ্রেণির দর্শক পছন্দ করেন। বিশেষ করে সাইয়ের অভিনয়ে অন্যরকম ব্যতিক্রম খুঁজে পান দর্শক। বক্স অফিসেও ব্লকবাস্টার হয় প্রেমাম। যা রাতারাতি সাইকে এনে দেয় সম্মান ও জনপ্রিয়তা। ছবিতে তার বিপরীতে দেখা যায় জনপ্রিয় অভিনেতা নিভিন পাউলিকে।
কালি: ২০১৬ সালে জনপ্রিয় অভিনেতা দুলকার সালমানের বিপরীতে ‘কালি’ সিনেমায় অভিনয় করেন সাই। সেই ছবিটিও ব্লকবাস্টার হয়েছিলো।
ফিদা: ২০১৭ সালে রোমান্টিক চলচ্চিত্র ‘ফিদা’র মাধ্যমে তেলেগু ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশ করেন সাই পল্লবী Sai Pallavi। ‘ফিদা’ ছবিটি টেলিভিশনে সর্বাধিক টিআরপি রেটিং পেয়েছিল। এমনকি ৫ম বার দেখানোর সময়ও টিআরপি সর্বোচ্চ ছিল।
দিয়া ও মারি-২: মালায়ালাম এর পর সাইয়ের এন্ট্রি ঘটে তেলেগু। এর ঠিক পরেই ‘দিয়া’ সিনেমার মাধ্যমে তামিল ইন্ডাস্ট্রিতেও তার অভিষেক হয়। ছবিটিও দর্শক ব্যাপক প্রশংসা করেন। এছাড়াও সাইকে দক্ষিণী সুপারস্টার ধানুশের বিপরীতে দেখা যায় ‘মারি ২’ সিনেমায়।
আথিরান: ২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়া মালায়ালাম ইন্ডাস্ট্রির আলোচিত ছবি ‘আথিরান’ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারধর্মী এই ছবিতে সাইয়ের বিপরীতে অভিনয় করেন তারকা অভিনেতা ফাহাদ ফসিল। এই ছবিতে দুর্দান্ত অভিনয় করে আরো একবার সবার মন জয় করে নেন সাই পল্লবী।
সম্প্রতি নাগা চৈতন্যের সঙ্গে ‘লাভ স্টোরি’ ছবি মুক্তি পেয়েছে।
এ ছাড়া সাই পল্লবীকে দেখা যাবে রানা দাগুবাতির সঙ্গে ‘বিরাটা পারভাম।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।