জুমবাংলা ডেস্ক : গেল বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শাসনের পতন হয় এবং ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। সরকারের পক্ষ থেকে বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইনটি বাতিলের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে সরকার আগের আইনটি বাতিল করে নতুন সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪ পাস করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ইতোমধ্যে অধ্যাদেশটির খসড়া অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। এই খসড়া নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে এটি বাকস্বাধীনতার অনুকূল নয় বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন। তবে সরকারের এক পরামর্শক বলছেন, অনেকেই আইনের খসড়াটি ভালোভাবে না পড়ে সমালোচনা করছেন। খবর ডয়চে ভেলে
বিশ্লেষকরা এই অধ্যাদেশে কনটেন্ট অপসারণ ও ব্লক করার সুযোগ থাকার সমালোচনা করে জানিয়েছেন, এই বিষয়ে বিচারিক পর্যালোচনা, জবাবদিহি ও পরিসংখ্যান প্রকাশের কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের কনটেন্ট ব্লক বা অপসারণের ক্ষমতা দেওয়া হলে অপব্যবহার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই ধারা সাংবাদিকতা, অনলাইন অ্যাকটিভিজম এবং ওটিটি প্ল্যাটফরমের জন্য বাধা হবে।
বেসিসের সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর বলেন, আগের আইনে ছিল যখন তখন কোনো নাগরিকের মোবাইল ফোন তল্লাশি করা যাবে, ডিভাইস চেক করা যাবে, ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা যাবে, সেই বিষয়গুলো নতুন আইনেও আছে। আর সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় পুলিশকে বিনা ওয়ারেন্টে তল্লাশি ও আটকের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। যা আগেও ছিল। ফলে বাকস্বাধীনতা আর ব্যক্তিস্বাধীনতা হুমকির মুখেই থাকবে।
সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এতে নতুনভাবে ব্ল্যাকমেইলিং বা অশ্লীল বিষয়বস্তু প্রকাশের বিষয়টি সংযোজন করা হয়েছে। কোনো ব্যক্তিকে বিরক্ত, অপমান, অপদস্থ বা হেয় প্রতিপন্ন করার অভিপ্রায়ে কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ বা প্রচার করাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। ‘ব্ল্যাকমেইলিং’ এর একটি ব্যাখ্যা দেওয়া হলেও ‘অশ্লীল’ বিষয়বস্তুর কোনো ব্যাখ্যা নেই। ফলে এর অপব্যবহার হতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ধর্মীয় অনুভূতি ও মানহানিকে সুনির্দিষ্ট করা হয়নি। ফলে এখানেও অপব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
‘সাইবার বুলিং’কে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও সেটি সুবিধামতো ব্যাখ্যা করার সুযোগ আছে। ফলে এর অপব্যবহার হওয়ার আশঙ্কা আছে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, সমস্যা হলো এখানে জামিন যোগ্য এবং অযোগ্য দুই ধরনের ধারাই আছে। ফলে হয়রানি করতে চাইলে জামিন যোগ্য ধারার সঙ্গে জামিন অযোগ্য ধারা জুড়ে দেবে। আসলে নতুন যে আইনটি হয়েছে তা পুরনো আইনের সঙ্গে কিছু যোগ করে কিছু বাদ দিয়ে করা হয়েছে। কিন্তু সাইবার অপরাধ বিস্তৃত বিষয় এবং সংজ্ঞা এর মধ্যে নেই।
‘অপব্যবহারের সুযোগ রয়ে গেছে’
এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, সমস্যা হলো এখানে জামিন যোগ্য এবং অযোগ্য দুই ধরনের ধারাই আছে। ফলে হয়রানি করতে চাইলে জামিন যোগ্য ধারার সঙ্গে জামিন অযোগ্য ধারা জুড়ে দেবে। আসলে নতুন যে আইনটি হয়েছে তা পুরনো আইনের সঙ্গে কিছু যোগ করে কিছু বাদ দিয়ে করা হয়েছে। কিন্তু সাইবার অপরাধ বিস্তৃত বিষয় এবং সংজ্ঞা এর মধ্যে নেই।
তিনি বাকস্বাধীনতার প্রশ্নে বলেন, বিটিআরসি চাইলে যে কোনো কনটেন্ট সরিয়ে নিতে পারবে। আপনার আমার তথ্য সরিয়ে নেওয়ার কোনো পদ্ধতি আইনে বলা হয়নি। ফলে এর অপব্যবহার হবেই। সাইবার বুলিংয়ের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু কোনো সংজ্ঞা দেওয়া হয়নি। হ্যাকিংয়ের ক্ষেত্রে পজিটিভ হ্যাকিং নিয়ে কেনো কথা বলা হয়নি।
সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী বলেন, এখানে অনুভূতি, মানহানি এগুলোর কোনো সংজ্ঞা দিয়ে সুনির্দিষ্ট করা হয়নি। ফলে এর অপব্যবহার হবে।
তিনি আরও বলেন, এনটিএমসি এখনো কার্যকর। বিগত সরকারের সময় এই প্রতিষ্ঠানটি হয়রানির কাজে ব্যবহার করা হয়েছে।
বেসিসের সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর বলেন, আগের আইনে ছিল যখন তখন কোনো নাগরিকের মোবাইল ফোন তল্লাশি করা যাবে, ডিভাইস চেক করা যাবে, ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা যাবে, সেই বিষয়গুলো নতুন আইনেও আছে। আর সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় পুলিশকে বিনা ওয়ারেন্টে তল্লাশি ও আটকের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। যা আগেও ছিল। ফলে বাকস্বাধীনতা আর ব্যক্তিস্বাধীনতা হুমকির মুখেই থাকবে।
‘আইন হতে হবে বাকস্বাধীনতার পক্ষে’
বাকস্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা আর্টিকেল নাইনটিনের দক্ষিণ এশিয়ার সাবেক প্রধান ও মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিস কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ফারুক ফয়সাল বলেন, আমার আপত্তি হলো কথা বলার জন্য ফৌজদারি আইনে শাস্তির বিধান রাখা নিয়ে। কথা বলার স্বাধীনতার ওপর নির্ভর করছে বাকস্বাধীনতার চর্চা হবে কি হবে না। আইনটিতে দেখতে পাচ্ছি বেশ কয়েকটি ধারা এমন যা কথা বলার ক্ষেত্রে মানুষকে ভয়ের মধ্যে ফেলে দেবে। এই ধরনের ধারা আগের আইনেও ছিল। আমরা কথা আইন হতে হবে বাকস্বাধীনতার পক্ষে।
তার কথা, এই আইনটি তৈরি করার আগে যারা বাকস্বাধীনতা নিয়ে কাজ করেন তাদের সঙ্গে কথা বলা দরকার ছিল।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের নীতি পরামর্শক ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সভ্যতা ও মানবাধিকারের ভিত্তিতে যদি আইন প্রয়োগ না হয় তাহলে যেকোনো আইনের অপব্যবহার হতে পারে। আমরা এটা নিশ্চয়তা দিতে পারি, এই সরকার এই দুইটি বিষয় খেয়াল রেখেই আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করবে।
তবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের নীতি পরামর্শক ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, নতুন আইনে জামিন যোগ্য ধারা বাড়ানো হয়েছে। শাস্তি কমানো হয়েছে। সাইবার অপরাধের নতুন ক্ষেত্র যুক্ত হয়েছে। ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে বিচারককে স্পেস দেওয়া হয়েছে।
তার কথা, আদালত যখন ছুটিতে থাকবে তখনই বিনা ওয়ারেন্টে পুলিশ তল্লাশি চালাতে পারবে। নয়তো অপরাধী পালাতে পারে। অপরাধের আলামত সরিয়ে ফেলতে পারে। কনটেন্ট ব্লকিং-এর ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনে কী ধরনের কনটেন্ট ব্লক করা হবে তা প্রকাশ করা হবে। কিছু ধারা রহিত করা হয়েছে।
ত্যৈয়ব বলেন, সভ্যতা ও মানবাধিকারের ভিত্তিতে যদি আইন প্রয়োগ না হয় তাহলে যেকোনো আইনের অপব্যবহার হতে পারে। আমরা এটা নিশ্চয়তা দিতে পারি, এই সরকার এই দুইটি বিষয় খেয়াল রেখেই আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।