রাশেদ হোসাইন : সাগরে মাছ শিকার সহজ করছে প্রযুক্তি। একসময় মাছ শিকার করা হতো প্রাচীন পদ্ধতিতে। কোনো প্রযুক্তি ছিল না। বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত মাছের জাহাজগুলো পুরোপুরি প্রযুক্তিনির্ভর। যার কারণে মাছ শিকার সহজ হয়ে পড়েছে। এমনকি মাছের উৎপাদনও প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারের ফলে সাগরে মাছ শিকার প্রতি বছর প্রায় দুই-শতাংশ করে বাড়ছে।
জানা যায়, গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস), ফিশফাইন্ডার, ইকোসাউন্ডার, অ্যাকুইস্টিক ক্যামেরার মতো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে ফিশিং ভেসেলগুলোর মাছ ধরার সক্ষমতা দিন দিন বাড়ছে। ফলে জাতীয় অর্থনীতিতে সাগরে মাছের অবদান দিন দিন বাড়ছে। দেশে মাছের মোট উৎপাদনের শতকরা ১৬ ভাগ সামুদ্রিক মাছের অবদান রয়েছে। দিন দিন এ পরিসংখ্যান বাড়ছে।
সাগর থেকে যেসব নৌযান মাছ ধরে ফিরে আসে, তাদের আহরণের পরিমাণগত তথ্য জমা দিতে হয় সামুদ্রিক মৎস্য দফতরে। এই তথ্য সংকলন ও বিশ্লেষণ করে বাণিজ্যিক ট্রলার কর্তৃক বার্ষিক মৎস্য আহরণের পরিমাণ নিরূপণ করে থাকে। সংস্থাটির দেওয়া তথ্য অনুসারে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বঙ্গোপসাগর থেকে মৎস্য আহরণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৩৭ হাজার ৪৭৬ টন। পাঁচ বছরের ব্যবধানে ২০২০-২১ অর্থবছরে এই পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৫ হাজার ৮৭১ টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৭ লাখ ৩৬ হাজার টন। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭ লাখ ৪৬ হাজার টন। তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ প্রবাহের কারণে সাগরে মাছ শিকার সহজ হয়েছে। বিশ্বজুড়ে মৎস্য আহরণ কার্যক্রম অনলাইনে মনিটরিং করে গ্লোবাল ফিশিং ওয়াচ। যেখানে অটোমেটিক ইনফরমেশন সিস্টেমের (এআইএস) বাইরে থাকা ভেসেলগুলোর অবস্থানও স্পষ্টভাবে ফুটে উঠছে। এ ধরনের ভেসেলগুলো মনিটরিংয়ের ফলে অবৈধভাবে মৎস্য আহরণকারী ভেসেলগুলোর মালিক ও ক্যাপ্টেনদের আইনের আওতায় আনার সহজ করছে। এগুলোকে তারা বলছে ‘আনডিটেক্টেড ডার্ক ফ্লিটস’। ওফিশ অ্যাপের মাধ্যমে জেলেদের নিয়মিত আবহওয়ার হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যায়। এটি মৎস্য আহরণের ক্ষেত্রে অনেকটা গুগল ম্যাপের মতো কাজ করছে। জেলেরা এই অ্যাপ ব্যবহার করে সহজেই তার নিকটবর্তী ফিশিং জোনগুলো সম্পর্কে জানতে পারছে। গ্লোবাল ডায়ালগ অন সিফুড ট্রেসেবিলিটি সাপ্লাই চেইনে সিফুডের সরবরাহ ট্র্যাক করে অটোমেটেড সিস্টেমে। ক্রেতারা কোনো রকম বিভ্রান্তি ছাড়াই জানতে পারবে যে, তাদের সিফুড কোথা থেকে আসছে এবং সেগুলো কতটা টেকসই উপায়ে আহরণ করা হয়েছে।
অনেক বাণিজ্যিক জাহাজে সেন্সর লাগানো থাকে। এসব সেন্সরের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য দিয়ে একটি মেরিন ডেটা ব্যাংক তৈরি করা হয়, যেখানে সাগরের তাপমাত্রা, পানির লবণাক্ততা ও অক্সিজেনের মাত্রা ইত্যাদি তথ্য জমা করা হয়।
সাগরে জলদস্যুতা রোধে জাহাজগুলোতে অটোমেটিক আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম (এআইএস) করা হয়। এর মাধ্যমে জেলেরা দ্রুত কোস্টগার্ড অথবা নৌবাহিনীর কাছে সাহায্যবার্তা পাঠাতে পারে। এছাড়া জরুরি পরিস্থিতিতে তাদের অবস্থান শনাক্ত করা সহজ হয়। ইলেকট্রনিক মনিটরিং সিস্টেম, কম্পিউটার ভিশন টেকনোলজি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ ঘটিয়ে জলজ পরিবেশের যে কোনো পরিবর্তন সম্পর্কে জানা যায় সে অনুযায়ী মাছ শিকার করা হয়। প্রযুক্তির কল্যাণে সামুদ্রিক নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস বিষয়ে তথ্য জানা সহজ হয়েছে।
সামুদ্রিক মৎস্য দফতরের পরিচালক মো. জিল্লুর রহমান বলেন, বর্তমানে সাগরে মাছ শিকারে বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার হয়ে থাকে যেমন, ইকো সাউন্ডার, যার মাধ্যমে বুঝা যায় বর্তমানে মাছ কোথায় আছে। সেই লোকেশনে মাছ ধরতে জেলেরা টলনেট ব্যবহার করে থাকে। যা ট্রলারের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। মাছের ঝাঁক বুঝার জন্য সোলার নামক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, যা অনেকদূর থেকেও কাজ করে থাকে। প্রযুক্তির ব্যবহার বেশির ভাগ বাণিজ্যিক ট্রলারগুলোতে ব্যবহার হয়ে থাকে। আর প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে মাছ শিকার দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে সমুদ্রের মাছের দেড় লাখ মেট্রিন টন মাছ ধরে বাণিজ্যিক ট্রলার আর বাকিগুলো ট্রাডিশনালওয়েতে ধরা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।