গোপাল হালদার, পটুয়াখালী: নিষেধাজ্ঞা থাকায় টানা ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরতে পারেনি পটুয়াখালীর জেলেরা। এতে কিছুটা হতাশা থাকলেও এখন আর সেই অবস্থা নেই। গত চার দিন থেকে সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে বড় আকৃতির ইলিশ ধরা পড়ায় খুশি জেলে ও আড়তদাররাও।
প্রচুর ইলিশ আসায় দিনভর সরগরম থাকছে উপকূলের মৎস্য বন্দরের ঘাটগুলো। একেকটি ট্রলার অর্ধকোটি থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত ইলিশের বেচাকেনা করছে। এতে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের রাজস্ব আয় বেড়েছে কয়েক গুণ।
গত কয়েকদিন সাগরে যে পরিমাণ বড় আকারের ইলিশ ধরা পড়েছে, তা এ বছরের রেকর্ড বলে জানিয়েছেন জেলেরা।
সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ায় এই জেলার বিভিন্ন উপজেলার ছোট-বড় মৎস্যঘাট ও বন্দরগুলোও জমে উঠেছে।
ইলিশ মাছ পাইকারী ক্রয়-বিক্রয় করা মোকামের মধ্যে অন্যতম পটুয়াখালীর মৎস্য বন্দর আলীপুর ও মহিপুর। এ দুটি মৎস্য বন্দরের বাইরেও জেলায় ইলিশের ছোট-বড় মোকাম রয়েছে কুয়াকাটা, গলাচিপা, ঢোস, মৌডুবি, জাহাজমারা, রাঙ্গাবালী, বাহেরচর বাজার, বদনাতলী, পানপট্টি, কোড়ালিয়া, বাঁশবাড়িয়া, কালাইয়া, বাধঘাট, লেবুখালী, পায়রা কুঞ্জ ফেরিঘাট, মনোহরখালী, আয়লা, কারখানা, কালিশুরীসহ অন্তত অর্ধশত হাট-বাজার ও লঞ্চঘাট।
ইলিশের চলতি মৌসুমে প্রতিদিন শত শত মন ইলিশ ক্রয়-বিক্রয় হবে এসব স্থানে। আর এসব বাজারগুলোতে ইলিশ কিনতে ক্রেতাদের উপচে পরা ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
মৎস্য বন্দরগুলো ঘুৃরে দেখা যায় জেলেদের ব্যস্ততার চিত্র। কেউ বরফ ভাঙছেন, কেউ বা ইলিশ তুলছেন ঝুঁড়িতে। এর মধ্যেই সাগর থেকে ছুটে আসছে বড় বড় ফিশিং বোট ও ট্রলার। ঘাটে এসেই বিক্রির জন্য ইলিশ তোলা হচ্ছে আড়তে। এরপর ওজন মাপা থেকে প্যাকেটজাত করার প্রস্তুতি ও পরিবহনে ব্যস্ত সময় পার করছে শ্রমিক ও জেলেরা। আর বড় আকৃতির ইলিশ পেয়ে কোটি টাকা পর্যন্ত ইলিশের বিক্রি করতে পেরে খুশি জেলেরা।
মিজান মাঝি বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার পর সাগরে মাছ শিকারে গিয়ে এই প্রথম এত মাছ পেয়েছি। এর আগে এত মাছ কখনও পাইনি। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় অনেক ধারদেনায় জর্জরিত হয়ে পড়েছি। মাছ বিক্রির টাকায় পূর্বের ধার দেনা শোধ করবো।’
মহিপুর মৎস্য আড়ৎ সমিতির নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান ফজলু গাজী জানান, ‘সাগরের অনেক গভীরে যাওয়া লাল জাল নিয়ে মাছ ধরার ট্রলারগুলো কমবেশি ইলিশ পাচ্ছে। শতকরা ১৫ থেকে ২০ ট্রলারে কমবেশি ইলিশ পাচ্ছে। বাকিরা মোটামুটি পরিমাণ ইলিশ পেয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে পেছনের লোকসান কাটিয়ে ভালো ব্যবসা করা যাবে।’
আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো. শাকিল আহমেদ বলেন, ‘মৎস্য বন্দরের রাজস্ব নির্ভর করে মাছ অবতরণের ওপর। ২০২১-২২ অর্থবছরে এই অবতরণ কেন্দ্রে ১২৩ মেট্রিক টন মাছ অবতরণ করেছিল। এতে আনুমানিক ১২ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আনুমানিক ২৫ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ৪০ লাখ টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, যেভাবে গত কয়েক দিন মাছ অবতরণ হচ্ছে এতে আশা করা যায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আরও বেশি রাজস্ব আয় করা যাবে।
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ডিএফও) ও ইলিশ গবেষক মো. কামরুল ইসলাম জুমবাংলাকে বলেন, ‘সাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ রাখাসহ বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে ইলিশ আহরণ বেড়েছে। সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় এবার দেরিতে ইলিশ আহরণ শুরু হয়েছে।’
এই কর্মকর্তা বলেন, আলীপুর-মহিপুরের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে এ বছর সাগর থেকে ফিরে আসা ট্রলারে বড় ও মাঝারি আকারের ইলিশের সংখ্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। টুনা, ছুড়ি ও পোয়াসহ অন্যান্য মাছও অনেক ধরা পড়ছে। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা কার্যক্রম ফলপ্রসূ হয়েছে।
কামরুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে উজানের পানি সরবরাহ ও বৃষ্টি বাড়ায় জলজ তাপমাত্রা কাম্য পর্যায়ে এসেছে। নদী ও উপকূল মোহনায় পানির উচ্চতা বাড়ায় লবণাক্ততা সহনীয় মাত্রায় এসেছে। সাগর থেকে উপকূলের দিকে ইলিশের যাত্রা শুরু হয়েছে। এটা অব্যাহত থাকলে গত বছরের তুলনায় বেশি পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়বে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।