জুমবাংলা ডেস্ক : ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তথা ২৯ জানুয়ারি ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত সকল হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এখন পর্যন্ত সারাদেশে সাড়ে ১০ হাজার মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সোমবার (১৯ মে) বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় (বাসস) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বাসসের প্রতিবেদনটিতে মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হওয়া কয়েকটি ‘গায়েবি’ ও ‘হয়রানিমূলক’ মামলার কথা তুলে ধরেন সভাপতি আফরোজা খান রিতা। তিনি বলেন, নাশকতা ও জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অভিযোগে ২০২২ সালের ২৯ নভেম্বর মানিকগঞ্জে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ১৫ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলায় বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়।
তিনি আরও বলেন, ওই বছরের ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ বানচাল করতে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দেওয়া ও নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়। গত আওয়ামী লীগ আমলে ৩৩টি ভুয়া ও হয়রানিমূলক মামলা দেওয়া হয় জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এসএ জিন্নাহ কবিরের নামেও। রিতার দাবি, শুধু মানিকগঞ্জ নয় সারাদেশে হাজার হাজার মামলা হয় বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
তবে সকল হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। বাসসে প্রকাশিত সংবাদটিতে বলা হয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন-১ শাখার কর্মকর্তা জানিয়েছেন এ পর্যন্ত সারাদেশে ১০ হাজার ৫০৬টি হয়রানিমূলক রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে স্ব স্ব জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে পত্র মারফত মামলার নম্বর উল্লেখ করে জেলা পাবলিক প্রসিকিউটরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা জানান, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ৪৯৪ ধারার আওতায় ওই মামলাগুলো প্রত্যাহার করে না চালানোর জন্য সরকারের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয় ।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক কারণে হওয়া হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের লক্ষ্যে দুটি কমিটি গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। এর মধ্যে একটি জেলা পর্যায়ের কমিটি এবং অন্যটি মন্ত্রণালয় পর্যায়ের কমিটি। জেলা কমিটির কাছে যদি মনে হয় মামলাটি রাজনৈতিক বা অন্যকোনো উদ্দেশ্যে হয়রানির জন্য করা হয়েছে, তাহলে মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য কমিটি সরকারের কাছে সুপারিশ করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সেই সুপারিশ, মামলার এজাহার, অভিযোগপত্রসহ আবেদন পাওয়ার ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে নির্দিষ্ট ছক অনুযায়ী তথ্যাদিসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ব্যক্তি পর্যায়েও আবেদন করা যাবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব অথবা আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর বরাবরেও আবেদন নেওয়া হচ্ছে। তবে সেই আবেদনগুলো যাচাই বাছাই করে প্রথমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তালিকা প্রস্তুত করে আইন উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে রেজুলেশন আকারে অনুমোদন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানো হয়। পরে আবারো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়। সেখান থেকে ফেরত আসার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে স্ব স্ব জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর চূড়ান্তভাবে চিঠি পাঠানো হয় ।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত দায়ের হওয়া রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলার শিকার যে কেউ এই সুযোগ পাবেন। তবে আবেদনপত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মামলার এজাহার এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিযোগপত্রের (চার্জশিট) সত্যায়িত অনুলিপি দাখিল করতে হবে।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা (পরিচালক) ফয়সল হাসান বলেন, নিরপরাধ ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের অনর্থক হয়রানি থেকে পরিত্রাণ দেওয়ার লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে গৃহীত এই কার্যক্রম চলমান থাকবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।