জুমবাংলা ডেস্ক : ‘কোথায় ঘুমাইতেছেন? আমরা যে আসব, আপনি জানতেন না? পয়সা খাইবেন আর পকেটে ঢুকাবেন কিন্তু কাম করবেন না! কাজ ৭ দিনের ভেতরে শেষ করবেন। না হলে আপনাকেই রিপিয়ারিং করে দেব’ —সুনামগঞ্জের এলজিইডি ইঞ্জিনিয়ার মো. আনোয়ার হোসেনকে সামনে না পেয়ে মোবাইল ফোনেই এভাবে ক্ষোভ ঝাড়েন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) বিকেলে সুনামগঞ্জের লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের বোরো ধান কর্তন উৎসবে কৃষকদের কাছ থেকে অভিযোগ শুনেই মাঠে উপস্থিত হয়ে সবার সামনেই মোবাইল ফোনে এসব কথা বলেন তিনি।
স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টার কাছে এসময় কৃষকরা বলেন, দুই বছর ধরে সুনামগঞ্জের করচার হাওরে রাবার ড্যাম লিকেজ হয়ে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। এতে হাওরের ফসল নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন কৃষকরা। এ বিষয়টি স্থানীয় কৃষকরা কৃষি উপদেষ্টাকে জানালে সঙ্গে সঙ্গেই পানি উন্নয়ন বোর্ড ও এলজিইডি কর্মকর্তাকে মাঠে খোঁজেন তিনি। তখন এলজিইডি প্রকৌশলীকে মাঠে না পেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা মামুন হাওলাদারকে ফোনে সংযোগ দেওয়ার কথা বলেন তিনি। কিছুক্ষণ পরে সুনামগঞ্জ এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেনকে মোবাইল ফোনে ক্ষোভ ঝাড়েন স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা।
এসময় ফোনে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘কোথায় ঘুমাইতেছেন, জানেন না আমরা আসবো এখানে? আপনি খোঁজও রাখেন না। পয়সা খাইবেন, কাজ করবেন না! আপনার নাম ও মোবাইল নাম্বার দেন। রাবার ড্যামের কাজ ৭ দিনের ভেতরে শেষ করবেন। না হলে আপনাকেই রিপিয়ারিং করে দেব।’
এসময় মাঠে উপস্থিত কৃষকদের আশ্বস্ত করে উপদেষ্টা বলেন, যারা কাজ করবে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসময় মাঠে ঘুরে কৃষক-কৃষাণীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে কৃষকদের সার্বিক খোঁজ-খবর নেন তিনি। এর আগে তিনি শান্তিগঞ্জ থানা পরিদর্শন করেন এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের দেশের সংঘাতের কোনো আশঙ্কা নেই। ভারতে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাদের ফিরিয়ে আনার জন্য একটি চুক্তি হয়েছে এবং এই প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এই চুক্তির আন্ডারে শেখ হাসিনাকে আনার চেষ্টা করা হবে।
তিনি আরও বলেন, সুনামগঞ্জে এবার ভালো ফসল হয়েছে, তবে এখনো কিছু জমি পতিত রয়েছে। এই পতিত জমি ব্যবহারের জন্য আমরা প্রায় ৫০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেছি। এ বছর দেশে খাদ্য সংকটের কোনো সম্ভাবনা নেই। পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য মজুদ রয়েছে। সরকার ইতোমধ্যে ধান, চাল ও গমের ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করেছে। ধানের মূল্য ৩৬ টাকা, চাল ৪৯ টাকা এবং গমের মূল্য ৩৬ টাকা।
‘কয়েক দিনের মধ্যে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হতে পারে, অথচ এখনো মাত্র ধান কাটার শুরু হয়েছে এ অবস্থায় কৃষকরা কিছুটা শঙ্কায় আছেন’ —এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, কৃষক শঙ্কায় থাকলে সংশ্লিষ্ট বাধ প্রকল্পের প্রকৌশলীরাও সমানভাবে শঙ্কিত থাকবেন। কোনো সিন্ডিকেট যদি ধান বিক্রিতে বাধা সৃষ্টি করে বা কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত করে, তাহলে তা জানাতে হবে। সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কৃষকরা দেশে উৎপাদন বাড়িয়ে দেশকে বাঁচিয়ে রাখছে। অথচ কৃষকদের সবসময় বঞ্চিত করে রাখা হয়। এ বছর আলু ফসল ভালো হয়েছে কিন্তু কৃষকরা দাম পায়নি। এ বছর ধানের ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে যাতে কৃষক বঞ্চিত না হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন— সিলেট বিভাগীয় কমিশনার খান মোহাম্মদ রেজা উন-নবী, সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি মুশফেকুর রহমান, সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সমর কুমার পাল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সুনামগঞ্জ সদর) মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অতীশ দর্শী চাকমাসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।