জুমবাংলা ডেস্ক : দেশের মাত্র ৭টি হাসপাতালেই ২০২৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে জরুরি বিভাগে ভর্তি হয়েছে ৫৩,২০৭ জন। যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে আয়োজিত ‘এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে সরকারি উদ্যোগে প্রাথমিক উৎস থেকে সড়ক দুর্ঘটনার পূর্ণাঙ্গ ডাটা ব্যাংক চাই’- শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, রাষ্ট্রীয় পরিবহন নিয়ন্ত্রণ সংস্থা-বিআরটিএ প্রাথমিক উৎস থেকে সড়ক দুর্ঘটনার পূর্ণাঙ্গ ডাটা সংগ্রহ করলে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টের সমপরিমাণ হতাহত ও দুর্ঘটনার তথ্য উঠে আসবে।
অনুষ্ঠানে আলোচকরা বলেন, বিআরটিএ সেকেন্ডারি সোর্স ব্যবহার করায় সড়ক দুর্ঘটনার প্রকৃত চিত্র উঠে আসছে না। ফলে সরকার সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে সরকারি উদ্যোগে বিআরটিএ মাধ্যমে প্রাথমিক উৎস থেকে সড়ক দুর্ঘটনার পূর্ণাঙ্গ ডাটা ব্যাংক চালুর বিকল্প নেই। একই সঙ্গে ছোট যানবাহন বন্ধ করে নিরাপদ সাশ্রয়ী ও স্মার্ট গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে (পঙ্গু হাসপাতাল) ২০২৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ১৪ হাজার ৩৫৭ জন রোগী জরুরি বিভাগে ভর্তি হয়েছে। একই সময়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ৯,৮৭৯ জন। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ৯,২৯৩ জন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ৪,৭৮৪ জন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের ৩,৫৬৩ জন। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ৬,৭৪৮ জন। ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ খানপুর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ৪,৫৮৩ জন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ভর্তি হয়েছে। দেশের মাত্র এই ৭টি হাসপাতালে ২০২৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে জরুরি বিভাগে ভর্তির তথ্য মিলেছে ৫৩,২০৭ জন।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে , সারা দেশে ৬৪টি জেলা সদর হাসপাতাল প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০ জন, ০৮ বিভাগে ১০টি বিভাগীয় বড় হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ২০ জন হারে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগী ভর্তি হচ্ছে, সারা দেশে ৮০০০ নিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতালের চিত্রও অনুরূপ।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগীর ১৫ শতাংশ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। দেশে আহত আড়াই থেকে তিন লাখ রোগী চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় কত পরিমাণ মারা গেছে- তার চিত্র বিআরটিএ’র রিপোর্টে আসেনি। ফলে বিআরটিএ’র রিপোর্টে হতাহতের সংখ্যা ও দুর্ঘটনার সংখ্যাতে যে বিভ্রান্তি রয়েছে তা স্পষ্টত ফুটে উঠেছে।
বক্তারা বলেন, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুসরণ করে পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই সড়ক দুর্ঘটনা কমে এসেছে। ২০১০ সালের তুলনায় মৃত্যুর হার কমেছে অন্তত ১০৮টি দেশে। প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কা, বেলারুশ, ব্রুনাই দারুসসালাম, ডেনমার্ক, জাপান, লিথুয়ানিয়া, নরওয়ে, রাশিয়া, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভেনিজুয়েলার মতো ১০টি দেশে মৃত্যুর হার অর্ধেকের বেশি কমিয়ে এনেছে।
অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি কমাতে সড়কে সুশাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি। সড়ক দুর্ঘটনা পূর্ণাঙ্গ ডাটা ব্যাংক তৈরির পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা তহবিলের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকতে হবে।
তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সরকার মূল দায়িত্বপ্রাপ্ত কিন্তু একক দায়িত্বপ্রাপ্ত নন, তাই সরকারি-বেসরকারি সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করা গেলে এর কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যেত।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সড়কের অবকাঠামোগত বিস্তার ঘটছে, গাড়ি বাড়ছে, কিন্তু সড়ক নিরাপত্তা ইস্যুটি বরাবরই উপেক্ষিত থাকছে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টের বরাত দিয়ে অনুষ্ঠানে বলা হয়, দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে প্রাণহানি ৩১ হাজার ৫৭৮ জন। আহত হচ্ছে আড়াই থেকে তিন লাখ মানুষ।
সভায় যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী দেশের সড়কে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ঠেকাতে সড়ক পরিবহনের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ’র চলমান গতানুগতিক কার্যক্রম অডিট করে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা চিহ্নিত করা, প্রাতিষ্ঠানিক অকার্যকারিতা সংস্কার করা জরুরি বলে দাবি করেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ আব্দুল হক, বিশিষ্ট সাংবাদিক হারুন অর রশিদ, সাংবাদিক মনজুরুল আলম পান্না, তাওহিদুল হক লিটন, এম মনিরুল হক প্রমুখ।
ভারতের কুদানকুলাম এনপিপির ২য় ও ৩য় ধাপের নির্মাণসংক্রান্ত প্রটোকল স্বাক্ষর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।