বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অভিনয়শিল্পীদের একটি দল শিক্ষার্থীদেরকে দমানোর কৌশলে নেমেছিলেন। যারা সকলেই ছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থক হিসেবে পরিচিত। নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ‘আলো আসবেই’ নামের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এসব শিল্পী শেখ হাসিনার পক্ষে নিজেদের কর্মসূচি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেন। যেখানে সহশিল্পী থেকে শুরু করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিয়েও গোপন ছক কষায় মেতেছিলেন তারা।
মঙ্গলবার সেই গ্রুপের কিছু স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হয়েছে। যা নিয়ে সর্বমহলে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
ওই গ্রুপে অভিনয়শিল্পীদের বিভিন্ন মন্তব্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি ছিল, বর্তমান সময়ের ছোট পর্দার অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মানকে নিয়ে অভিনেতা মিলন ভট্টাচার্যের একটি মন্তব্য।
যেখানে দেখা যায়, সাদিয়া আয়মানকে ‘তথাকথিত জনপ্রিয় অভিনেত্রী’ বলে মন্তব্য করেন মিলন। বিষয়টি মোটেও ভালোভাবে নেননি এই অভিনেত্রী।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘আলো আসবেই’ গ্রুপের স্ক্রিনশটগুলো ফাঁস হতেই মিলনের সেই মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন তিনি।
সাদিয়াকে নিয়ে মিলনের মন্তব্যের সূত্রপাত, বিটিভি প্রাঙ্গণে গিয়ে অভিনয়শিল্পীদের কান্নার ঘটনাকে ঘিরে। জুলাইয়ে দেশে যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়, তখন একদল শিল্পী শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা না বলে উল্টো বিটিভি প্রাঙ্গণে গিয়ে টেলিভিশনটির ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে আওয়াজ তুলে। একই সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধেও কথা বলেন।
যারা বিটিভি প্রাঙ্গণে গিয়ে সেসময় কান্না-আহাজারিতে ভেঙে পড়েন তাদের প্রতি ধিক্কার জানান সাদিয়া আয়মান।
অভিনেত্রীর এমন প্রতিক্রিয়া ‘আলো আসবেই’ গ্রুপে তুলে ধরেন অভিনেতা মিলন ভট্টাচার্য। তখন অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস জিজ্ঞেস করেন, সাদিয়া! কে সে? জবাবে মিলন ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই সময়ের তথাকথিত জনপ্রিয় অভিনেত্রী।’
প্রায় মাসখানেক বাদে সম্প্রতি অভিনয়শিল্পীদের সেই আলাপচারিতার স্ক্রিনশট ফাঁস হলে মিলন ভট্টাচার্যের উদ্দেশে সাদিয়া আয়মান বলেছেন, আপনাকে ধন্যবাদ মিলন দাদা, মানুষের মতো দেখতে, শিল্পী নামে শয়তান বেশধারীদের কাছে আমার মতো ‘এই সময়ের তথাকথিত জনপ্রিয় অভিনেত্রী’কে চিনিয়েছেন। যে ভুলকে ভুল বলতে জানে, সত্যকে সত্য বলতে জানে। গ্রুপের নাম দিয়েছেন ‘আলো আসবেই’ তা বেশ ভালো। তবে আপনারা জানেন, আপনাদের নিজেদের জীবনে, মস্তিষ্কে সত্যিকারের আলোর যে ভীষণ প্রয়োজন?
সাদিয়ার সেই পোস্টে মন্তব্য করেছেন অভিনেতা মিলন। সেদিনের ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমি খুবই দুঃখিত। যদি সম্ভব হয়, ক্ষমা করে দিও। আমার এমন কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। আমি এভাবে বিষয়টা বোঝাতে চাইনি। এটা একটা কথার সিরিয়ালে আসছে। যাই হোক, আমি লজ্জিত এমন শব্দ ব্যবহারের জন্য।’
মিলন আরও বলেন, তোমার বিরুদ্ধে আমি নই, বিশ্বাস করো। দুঃখিত, সে সময়ে দেশের অস্থির পরিস্থিতির জন্য। কি যে কথা বলেছি, সত্যিই বলছি- ‘মাথা ঠিক ছিল না’। বিশ্বাস করো, আমি চাই তুমি বিষয়টা বুঝো, তোমার বিরোধী নই আমি।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে লড়াই চালানোর লক্ষ্যে তৎকালীন তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত এবং সংসদ সদস্য ফেরদৌসের নেতৃত্বে ‘আলো আসবেই’ নামের ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলা হয়, যেখানে আওয়ামীপন্থি শিল্পী ও সাংবাদিকেরা যুক্ত ছিলেন।
সেই তালিকায় ছিলেন— সোহানা সাবা, জ্যোতিকা জ্যোতি, অরুণা বিশ্বাস, ফেরদৌস ছাড়াও ছিলেন রিয়াজ আহমেদ, সুবর্ণা মুস্তাফা, আজিজুল হাকিম, স্বাগতা, বদরুল আনাম সৌদ, শমী কায়সার, তানভীন সুইটি, আশনা হাবীব ভাবনা, শামীমা তুষ্টি, জামশেদ শামীম, ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর, সাজু খাদেম, হৃদি হক, ফজলুর রহমান বাবু, দীপান্বিতা মার্টিন, সাইমন সাদিক, জায়েদ খান, লিয়াকত আলী লাকী, নূনা আফরোজ, রোকেয়া প্রাচী, রওনক হাসান, আহসানুল হক মিনু, গুলজার, এস এ হক অলীকসহ অনেকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।