সামাজিক প্রাণী ‘নেকড়ে’ ভিলেন হলো যেভাবে

নেকড়ে

জুমবাংলা ডেস্ক: বিড়াল থেকে বাঘ—বনের প্রায় সব প্রাণীকেই মানুষ পোষ মানাতে পেরেছে। বাংলাদেশের ঘরে ঘরে বিড়াল কুকুরকে পোষ্য হিসেবে দেখা যায়। তবে মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ হিংস্র রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ এমনকি চিতাবাঘকেও বেঁধে রাখে বাড়ির আঙিনায়। তবে কখনো কি শুনেছেন, ‘নেকড়ে’ মানুষের পোষ মেনেছে? না! মানুষ কখনোই ভীতিকর প্রাণীর গায়ে বেল্ট পরাতে পারেনি

নেকড়ে

নেকড়ের জীবনযাপন মানুষের মতো হলেও..
নেকড়ে—নাম শুনলেই আমাদের চোখের সামনে বিভিন্ন সিনেমায় দেখা একটি হিংস্র প্রাণীর ছবি ভেসে ওঠে। নেকড়ে সম্পর্কে মানুষের আতঙ্ক দীর্ঘকালের। নেকড়েদের ‘ভিলেন’ হওয়ার কুখ্যাতি এই কারণে যে, তারা মানুষ ও শিশুদের হত্যা করতে পছন্দ করে।

নেকড়েদের যোগাযোগ দক্ষতা অসম্ভব ভালো। তাদের বেঁচে থাকার জন্য এই যোগাযোগ দক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নেকড়েরা চিৎকার করে যোগাযোগ করে। নেকড়েদের একটি দল যখন চিৎকার করে তখন ১০ মাইল দূর থেকে শোনা যায়। তাদের চিৎকারের মানে হলো অন্য দলকে ডাকা বা বিপদ নিয়ে সতর্কতা। এ ছাড়া যোগাযোগের জন্য নিজেদের শরীরে উৎপাদিত ঘ্রাণ ব্যবহার করে। একটি নেকড়ের ঘ্রাণশক্তি মানুষের চেয়ে ১০০ গুণ বেশি শক্তিশালী।

নেকড়েদের জীবনযাপন কিছু ক্ষেত্রে মানুষের মতো। যেমন- আমাদের বড় ভাই বা বোন ছোট ভাই-বোনের দেখাশোনা করে, তেমনি বড় নেকড়ে তাদের ছোট ভাই-বোনদের জন্য খাবার জোগাড় করে। তাদের যত্ন নেয়। নেকড়ে ৬ থেকে ৮ বছর বাঁচে। সংরক্ষণবাদীদের ধারণা নেকড়ে এবং মানুষ একত্রে বসবাস করতে না পারার কোনো কারণ নেই।

কেন মানুষ এত ভয় পায়?
বাস্তবতা হচ্ছে, নেকড়েরা বুদ্ধিমান এবং সামাজিক প্রাণী। যখন কোনো নেকড়ে খেলতে চায় তখন তার শরীরটি ধনুকের মতো করে ফেলে। এভাবে সে তার আনন্দ প্রকাশ করে। কিন্তু যখন সে রাগান্বিত হয় তখন কপাল চাপড়ায় বা গর্জন করে। একটি নেকড়ের শরীরী ভাষা অনেকটা কুকুরের মতো। অবশ্য নেকড়ে এবং কুকুর ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত এবং তাদের যোগাযোগের প্রক্রিয়া প্রায় একই রকম।

ভারতের এক বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ গত ২২ বছর ধরে বন্য প্রাণীদের নিয়ে কাজ করছেন। তাকে বহুবার বিপজ্জনক প্রাণীর মুখোমুখি হতে হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই কোনো না কোনোভাবে প্রাণ রক্ষা পেয়েছে। প্রাণীদের যে দলটিকে সবচেয়ে বিপজ্জনক বলে মনে করেন তা হল নেকড়ে! কারণ একটি প্রাপ্তবয়স্ক নেকড়ের ৪২টি দাঁত থাকে, যা এতটাই শক্তিশালী যে তারা সহজেই বড় হাড় চিবিয়ে খেতে পারে।

বাংলাদেশে নেকড়ের অস্তিত্ব
১৯৭৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিপন্ন প্রজাতির জন্য আইন প্রণয়নের মাধ্যমে নেকড়ে জনসংখ্যা পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করেছিল। ১৯৯৫ সালে, কানাডা এবং মন্টানার বন্যপ্রাণী থেকে ৪১ টি নেকড়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীনতম জাতীয় উদ্যান ইয়েলোস্টোনে মুক্তি পায়। ২০২১ সালের মধ্যে, তাদের সংখ্যা বেড়ে এখন ৯৫।

পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে কোনো নেকড়ের অস্তিত্ব নেই। অন্তত ১৯৪৯ সালের পরে দেশের কোথাও কোনো নেকড়ের দেখা মেলেনি। বাংলাদেশের কোনো অঞ্চল তো নয়ই, এমনকি সুন্দরবনেও নেকড়ে থাকার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। ভারতীয় যেসব নেকড়ের কথা শোনা যায়, সেগুলো মূলত তৃণভূমি, ঝোপঝাড়, পাতাঝরা বন এবং জঙ্গলাকীর্ণ কৃষিজ অঞ্চলগুলোতে বিচরণ করে।

সুন্দরবনে মৌয়ালদের জীবনের ৭০০ বছরের অপরিবর্তিত গল্প