সারাদেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে শুক্রবার দুপুর সোয়া ১২টার পর। রাজধানী ঢাকা, বন্দর নগরী চট্টগ্রামসহ দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পটি বেশ বড় মাত্রার হওয়া সত্ত্বেও তাৎক্ষণিক হতাহতের বা বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে হঠাৎ করেই সারাদেশে ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ও মাত্রা
সারাদেশে ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার কারণ হিসেবে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণাকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রুবাইয়াত কবীর জানিয়েছেন, এর উৎপত্তিস্থল ছিল বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের মান্দালয় অঞ্চলে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭। তিনি আরও জানান, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ঢাকা থেকে প্রায় ৫৯৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
Table of Contents
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস-এর তথ্য অনুযায়ী, এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল আরও বেশি, প্রায় ৭ দশমিক ৭। সংস্থাটির মতে, মিয়ানমারের সাগাইং থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার উত্তর-উত্তরপশ্চিমে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল এবং এর গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার। এত বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে সাধারণত বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভাগ্যক্রমে তা ঘটেনি।
ভূমিকম্পের সময় আতঙ্ক ও জনজীবনে প্রভাব
সারাদেশে ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার সাথে সাথেই রাজধানী ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, রাজশাহী, খুলনা এবং দেশের অন্যান্য এলাকায় মানুষ আতঙ্কে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বহুতল ভবনের মানুষ দ্রুত নিচে নেমে আসে। অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শপিংমলগুলোতে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ভূমিকম্পের সময় কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হলেও সাধারণ মানুষের মনে এটি দীর্ঘসময় আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় ভূমিকম্পের পরে বেশ কয়েকটি ছোট ছোট আফটারশক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই জনগণকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে উঁচু ভবনে বসবাসকারী বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
কেন ভূমিকম্প হচ্ছে বারবার?
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ভূমিকম্পের প্রবণতা বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের অবস্থান ভূতাত্ত্বিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এমনটি ঘটছে। বাংলাদেশ দুটি বড় টেকটনিক প্লেট—ভারতীয় প্লেট ও ইউরেশীয় প্লেটের সংযোগস্থলের কাছাকাছি অবস্থিত। এই দুটি প্লেটের সংঘর্ষ ও চাপের কারণেই প্রায়ই বাংলাদেশসহ আশেপাশের দেশগুলোতে ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটছে।
ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রস্তুতি
সারাদেশে ভূমিকম্প মোকাবিলায় জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ও সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো ইতোমধ্যে জনগণকে ভূমিকম্প মোকাবিলায় বিভিন্ন প্রস্তুতি ও সচেতনতা বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছে। এগুলো হলো:
- বাড়িঘর ও অবকাঠামো ভূমিকম্প সহনীয় করে গড়ে তোলা।
- ভূমিকম্পের সময় করণীয় সম্পর্কে সচেতন থাকা।
- জরুরি ভিত্তিতে প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম, টর্চলাইট, পানি ও খাবারের ব্যবস্থা রাখা।
- পরিবার ও প্রতিবেশীদের সাথে যোগাযোগ পরিকল্পনা তৈরি করা।
কম খরচে দ্রুত-নির্ভুল আবহাওয়া পূর্বাভাস দিবে নতুন এআই প্রযুক্তি
সারাদেশে ভূমিকম্প: ভবিষ্যৎ করণীয় ও সতর্কতা
সারাদেশে ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার পর বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে, আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থাকা। ভূমিকম্পের সময় নিজেকে নিরাপদ রাখতে দ্রুত উন্মুক্ত স্থানে যাওয়া অথবা ভবনের নির্ধারিত নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়া। ভূমিকম্প পরবর্তী সময়ে বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং পানির লাইন পরীক্ষা করে নেওয়া জরুরি। বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে সরকারের জরুরি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে সহায়তা নেওয়া উচিত।
সারাদেশে ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি জনগণের সচেতনতা ও প্রস্তুতি অত্যন্ত জরুরি। ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।