জুমবাংলা ডেস্ক : করোনাভাইরাস পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনায় গ্রেপ্তার রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমের বিচরণ ছিল প্রতারণার প্রতিটি স্তরেই। তার ফাঁদে পড়ে দুই তারকা দম্পতির সংসার তছনছ হয়ে গেছে। তাদের সংসার ভাঙার পেছনে শাহেদ দায়ী। একই জগতে প্রেমে ব্যর্থও হয়েছেন তিনি। এক নায়িকার প্রেমে পড়ে তাকে বিয়ে করতেও চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়ে উঠেনি।
জিজ্ঞাসাবাদে ওই নায়িকা ছাড়াও এসেছে দুই নারী তারকার কথা। টিভি মিডিয়ার সংগঠন ডিরেক্টর গিল্ডস’র এক নেতার সঙ্গে উত্তরা-ছয় নম্বর সেক্টরে নয় নম্বর সড়কের হোটেল মিলিনায় নিচতলায় রেস্টুরেন্টে খেতে যেতেন দুই নারী তারকা। ওই অভিজাত হোটেলটির দখলদার মালিক সাহেদ।
বছর কয়েক আগে এক বৈধ হোটেল মালিকের কাছ থেকে তিনি নাম ভাঙিয়ে ওই হোটেলটি দখল করেছেন। সেই হোটেলের রেস্টুরেন্টে পরিচয় হয় সাহেদের সঙ্গে দুই নারী তারকার। মোবাইলসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথা বলা শুরু হয় তাদের। সাহেদের সঙ্গে যখন থেকে তাদের সম্পর্ক হয় তখন থেকে সাহেদ হোটেলের ক্যাশিয়ারকে বলে দিয়েছেন যে, তারা হোটেলে খেতে এলে বিল যেন না নেয়া হয়। মাঝে-মধ্যে সাহেদও তাদের মোটা অংকের টাকা দিতেন। সাহেদের উদারতায় দুই নারী তারকা পটে যান। এরমধ্যে একজনকে নিয়ে তিনি থাইল্যান্ডে গিয়েছিলেন। ওই তারকা তার স্বামীকে বলে গিয়েছিলেন যে, থাইল্যান্ডে তার একটি শো আছে। কিন্তু, পরে তিনি জানতে পারেন যে, তার কোনো শো ছিল না। বরং এক ব্যবসায়ীর আমন্ত্রণে একসঙ্গে থাইল্যান্ডে গেছেন। শুধু তাই নয়, হোটেলের এক রুমে তারা রাতও কাটিয়েছেন। এরপর ওই তারকার স্বামী তাকে ডিভোর্স দিয়ে দেন। মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে দুই নারী তারকার নাম উঠে আসে। দুই তারকার টিভি মিডিয়ায় খ্যাতি রয়েছে। তারা দুইজন তার রেস্টুরেন্টে খেতে যেতেন। একদিন রাতে সাহেদ তার একজন গেস্টকে নিয়ে তার রেস্টুরেন্টে খেতে যান। এ সময় ক্যাশিয়ারের সামনে তাদের পরিচয় হয়। এছাড়াও দুই তারকাকে যে ডিরেক্টর গিল্ডের নেতা সেই রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেছেন তাকে আগে থেকেই চিনতেন সাহেদ। তার পরিচয় সূত্র ধরেই দুই তারকার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠে সাহেদের।
সূত্র জানায়, পরিচয়ের পর সাহেদ তাদের নিয়ে শপিংয়ে যেতেন। দেশের বিভিন্নস্থানে লং ড্রাইভে যেতেন। তার মধ্যে একজনকে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে হেলিকপ্টারে পার্বত্য এলাকার পর্যটন কেন্দ্র সাজেকে এবং গত বছরের মার্চ মাসে একজনকে নিয়ে থাইল্যান্ডে যান সাহেদ। তাদের যাতায়াত সম্পর্কের বিষয়টি দুই নারী তারকার স্বামীরা জেনে যান। তাদের সম্পর্ক যাতে না থাকে এরজন্য দুই তারকার স্বামী তাদের সতর্ক করে দেন। কিন্তু স্বামীদের কথায় তারা সাড়া দেননি। এ সময় তাদেরকে অর্থ ও বিত্তের লোভ দেখান সাহেদ। তারাও লোভে পড়ে যান। সাহেদের হয়ে দুই তারকাকে অর্থ লেনদেন এবং ভালো-মন্দ দেখাশোনার জন্য শাহেদ তার রিজেন্ট হাসপাতালের এক ব্যক্তিগত নারী উপদেষ্টাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এতে দুই তারকা শাহেদের ওপর অনেক সন্তুষ্ট ছিলেন।
সাহেদের ফাঁদে পড়া এক নারী তারকার স্বামী সাহেদের সঙ্গে রিজেন্ট হাসপাতালের তার কার্যালয়ে যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু তিনি তার কথায় পাত্তা না দিয়ে নিজের স্ত্রীকে সামলানোর পরামর্শ দেন। এ সময় তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডাও হয়।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সাহেদকে জিজ্ঞাসাবাদ করার চতুর্থদিন অতিবাহিত হয়েছে। রিমান্ডে তার কাছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়ে তদন্ত কর্মকর্তারাই বিস্মিত।
তবে সাহেদ কিছু প্রশ্ন কৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি তার সিনেমা জগৎকে কেন্দ্র করে স্বপ্ন, প্রেম ও পরিণয়ের কথা বলেছেন। একজন উঠতি নায়িকার প্রেমে পড়েছিলেন সাহেদ। ওই নায়িকার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকায়। তাকে বিয়েও করতে চেয়েছিলেন সাহেদ। কিন্তু ওই নায়িকা তার ক্যারিয়ারের কথা ভেবে তাকে বিয়ে করতে রাজি হননি। তারপরও তিনি তার পিছু ছাড়েননি। পরক্ষণে ওই নায়িকা তাকে ফোন করে বলেছিলেন যে, তিনি তার পিছু যদি না ছাড়েন তাহলে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে তার প্রতারণার বিষয়টি জানাবেন। এরপর থেকে তিনি ওই নায়িকাকে আর বিরক্ত করেননি।
গত জানুয়ারিতে একটি পার্টিতে তাদের মুখোমুখি দেখা হয়েছিল। কিন্তু তারা দুইজনই মুখ ফিরিয়ে নেন। এই কথা বলার সময় সাহেদ কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে যান।
এসব বিষয়ে মামলার মুখ্য তদন্তকারী কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর) এডিসি বদরুজ্জামান জিলু জানান, অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে তা বলা যাচ্ছে না।
এছাড়াও বেরিয়ে আসছে প্রতারণার জগতে সাহেদের ঘনিষ্ঠজনদের নাম। সাহেদের উত্থান থেকে সর্বশেষ গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত তাকে বিভিন্ন সুবিধার বিনিময়ে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন এমন ব্যক্তির তালিকা এখন তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কাছে। ১০ দিনের রিমান্ডে থাকা সাহেদ এরই মধ্যে এ সম্পর্কে আদ্যোপান্ত বর্ণনা করেছেন তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে। কীভাবে তাদের সঙ্গে পরিচয়, কীভাবে তাদের কাজে লাগিয়েছেন কিংবা তাদেরকে দেওয়া সুবিধাগুলো কী ছিল।
সূত্র বলছে, সাহেদের নামে এতগুলো মামলা থাকার পরও তিনি কীভাবে বঙ্গভবনসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের দাওয়াত পেতেন তাও খতিয়ে দেখছে অনেকগুলো সংস্থা।
করোনাভাইরাসের পরীক্ষা না করে ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া, সরকারের কাছে বিল দেওয়ার পর আবার রোগীর কাছ থেকেও অর্থ নেওয়াসহ রিজেন্ট হাসপাতালে নানা অনিয়মের খবর সম্প্রতি প্রকাশ্য হয়েছে র্যাবের অভিযানের মধ্য দিয়ে। গত সপ্তাহে ওই অভিযানের পর রিজেন্টের দুটি হাসপাতাল বন্ধ করে দেয় র্যাব। ওই হাসপাতালের অনুমোদনও বাতিল করা হয়।
এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গত বুধবার (১৫ জুলাই) সকালে সাতক্ষীরা দেবহাটা সীমান্ত এলাকা থেকে সাহেদকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।পরে বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। সাহেদকে জিজ্ঞাসাবাদে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গোয়েন্দা পুলিশ এখন তাকে দশ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।