বাংলাদেশ ব্যাংকনিজস্ব প্রতিবেদক: সম্প্রতি ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো বা সিআইবি রিপোর্ট হালনাগাদ পদ্ধতিতে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে তার সঙ্গে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের কোন সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আজ (১১ অক্টোবর) এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক এই তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ব্যাংকের শাখা পর্যায়ে থেকে সিআইবির তথ্য পরিবর্তন করার সুযোগ তৈরি হওয়া সংক্রান্ত যে খবর প্রচার হচ্ছে তা সঠিক নয়। এ পদ্ধতির সুযোগ নিয়ে খেলাপি গ্রাহক তথ্য পরিবর্তন করে নির্বাচনে অংশ নেয়ার কোন সুযোগ নেই। তথ্য সংগ্রহের এ পদ্ধতিগত পরিবর্তন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাত্যহিক কর্মকাণ্ডের অংশ এবং ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে আইসিটি ডিপার্টমেন্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক দেব দুলাল রায় বলেন, সিআইবি সংক্রান্ত রিপোর্ট সংগ্রহের ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে তা কোন বিড়ম্বনা তৈরি করবে না। বরং এর ফলে তথ্য হালনাগাদ প্রক্রিয়া সহজ এবং দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘আগে একটি ব্যাংককে তিন-চারটি ইউজার আইডি দেওয়া হতো। এখন সেটি বাড়ানো হয়েছে। এর বাইরে নতুন কিছুই করা হয়নি।’
ব্যাংকের শাখা পর্যায়ে তথ্য হালনাগাদ করার বিষয়ে গণমাধ্যমে ভুল তথ্য পরিবেশিত হয়েছে উল্লেখ করে মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘শাখা থেকে তথ্য হালনাগাদ করলেই সিআইবি তথ্য পরিবর্তন হয়ে যাবে না। এর জন্য আলাদা অনুমোদনকারী কর্মকর্তা নিয়োজিত থাকবেন। তাই কেউ চাইলেই সিআইবির তথ্য পরিবর্তন করতে পারবেন এই ধারণা সঠিক নয়।’
এক প্রশ্নের উত্তরে মুখপাত্র বলেন, নির্বাচনের আগে খেলাপি গ্রাহক ব্যাংকের শাখা পর্যায় থেকে তথ্য পরিবর্তন করে ফেলবেন এমন কথার কোন ভিত্তি নেই। কারণ শাখা ম্যানেজার তথ্য দাখিল করার পর অনুমোদনকারী কর্মকর্তা সেটি যাচাই করে হালনাগাদ করবেন। নির্ধারিত ছক অনুযায়ী তথ্য সরবরাহ করার বাধ্যবাধকতা থাকায় ভুল তথ্য হালনাগাদ করার সুযোগ থাকবে না। এর ফলে দ্রুততম সময়ে নির্ভুল তথ্য পাওয়া যাবে। এতে ব্যাংক ও গ্রাহক উভয়ে উপকৃত হবে।
তিনি বলেন, আগের নিয়মে অনেক জটিলতা ছিল। তথ্য হালনাগাদ করতে অনেক সময় চলে যেত। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে তথ্য পাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সেটি যাচাই করে সংশোধনী চাওয়া হতো। সংশোধনকৃত তথ্য পুণঃযাচাই শেষে হালনাগাদ করতে ২ মাসের অধিক সময় লেগে যেত। এতে ঋণ পরিশোধ করার পরও দুই মাস ধরে সিআইবিতে খেলাপি থাকতো গ্রাহক। তাই নতুন ঋণ পেতে জটিলতা তৈরি হতো। একই সঙ্গে নতুন করে যারা খেলাপি হতো অন্তত দুই মাস পর্যন্ত তারা সিআইবিতে নিয়মিত গ্রাহক হিসেবে তালিকাভুক্ত থাকতো। এই সুযোগে অন্য ঋণ আবেদন করতে পারত এসব খেলাপি গ্রাহক। যেহেতু ব্যাংকের শাখাগুলো আমাদের ‘প্রাইমারি সোর্স’ তাই ব্যাংক ও গ্রাহকের সুবিধার কথা চিন্তা করে ব্রাঞ্চ পর্যায় থেকে নির্ভুল তথ্য হালনাগাদের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
দেব দুলাল রায় বলেন, তথ্য হালনাগাদ পদ্ধতি এমনভাবে সাজানো হয়েছে, নির্ধারিত ছক অনুযায়ী সঠিক তথ্য দাখিল করা ছাড়া হালনাগাদ হবে না। একই সঙ্গে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে যাচাই শেষে অনুমোদন প্রক্রিয়া রাখা হয়েছে। তাই চাইলেই যে কেউ ভুল তথ্য হালনাগাদ করতে পারবে না।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘বিদ্যমান পদ্ধতিতে সিআইবির তথ্য পরিবর্তনের কোন সুযোগ নেই। নতুন সংযোজিত তথ্যে সঙ্গে পুরনো তথ্য সংযুক্ত থাকবে। তাই গ্রাহকের অতীত ও বর্তমান চিত্র সহজেই যাচাই করা যাবে।
প্রসঙ্গত, ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো বা সিআইবি রিপোর্ট অনলাইনে দাখিলের সুযোগ দিয়ে গ্রাহকের তথ্য সংগ্রহের নতুন পদ্ধতি চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ব্যাংকের শাখা পর্যায় থেকে তথ্য দাখিলের সুযোগ রাখা হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর থেকে এ পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে এ প্রক্রিয়াকে ঝুঁকিপূর্ণ এবং প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের সুযোগ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এমন একটি সিদ্ধান্ত ঠিক নির্বাচনের আগে কেন নিতে হলো তা বোধগম্য না। এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অনেক কিছু যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন ছিল। তবে এ সিদ্ধান্তে যে সমস্যাটা হবে তা হলো লোকাল শাখাগুলো প্রেশার হ্যান্ডেল করতে পারবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকও শাখাগুলো থেকে পাওয়া ভুল তথ্যগুলো তাৎক্ষণিক ভেরিফাই করতে পারবে না। যার ফলে উদ্দেশ্য সাধন হয়ে যাওয়ার পরে ব্যাংকারকে শাস্তি দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না। আমার মনে হয় এর বড় কারণ নির্বাচন কেন্দ্রীক। নির্বাচনে কেউ যেন ঋণ খেলাপি হিসেবে মনোনয়ন না হারায় সে কারণে এটাকে ব্যবহার করা হবে।’
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মনে করেন, অর্থনীতিবিদেরা বিষয়টি সম্পর্কে সঠিক তথ্য না জেনেই বক্তব্য দিচ্ছেন। তাদেরকে ভুল তথ্য দিয়ে মন্তব্য নেয়া হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।