আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সিঙ্গাপুরে একটি বহুতল ভবনের তিনতলার কার্নিশে বিপজ্জনকভাবে দাঁড়িয়ে থাকা এক শিশুকে উদ্ধার করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন বাংলাদেশি যুবক। ৩৪ বছর বয়সী জহিরকে এই সাহসিকতার জন্য পুরস্কৃতও করেছে দেশটি। সিঙ্গাপুরের সংবাদমাধ্যম সিএনএয়ের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
২৫ অক্টোবর বেলা ১১টা ৫০ মিনিটের খাবার কিনে সাইকেলে নিজ বাসায় ফিরছিলেন জহির। পথিমধ্যে ব্লক-৩৫০ সির ক্যানবেরা রোডে বিপুল মানুষের জটলা দেখতে পান তিনি। সবাই সেখানে দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোন বের করে ছবি তুলছিল, ভিডিও করছিল। এসব ছবি-ভিডিওর বিষয়বস্তু ছিল, রোডের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বহুতল ভবনের তিনতলার কার্নিশে দাঁড়িয়ে থাকা তিন বছরের শিশু। শিশুটি ভয়ে শূন্য দৃষ্টিতে সেখানে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু কেউই তাকে উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি।
শিশুটিকে উদ্ধার করার বিষয়ে সিঙ্গাপুরের একটি পেপার মিলের কর্মী জহির বলেন, ‘ছেলেটিকে দেখামাত্র বাংলাদেশে থাকা আমার সাত বছরের ছেলের কথা মনে পড়ে যায়। আমি শুধু ছেলেটিকে বাঁচাতে চেয়েছিলাম। অপেক্ষা করার মতো সময় ছিল না। আমার আশঙ্কা হচ্ছিল, শিশুটি যেকোনো সময় পড়ে যেতে পারে।’
যেই ভাবনা, সেই কাজ। জহির দৌড়ে সেই ভবনটির তৃতীয় তলায় ওঠেন। শিশুটি যে ফ্ল্যাটের কার্নিশে দাঁড়িয়েছিল সেটির দরজায় কড়া নাড়েন। জোরে জোরে চিৎকার করতে থাকেন, ধাক্কা দেন। কিন্তু কোনোভাবেই কিছু হচ্ছিল না। পরে জহির হতাশ হয়ে নিজেই সরাসরি কার্নিশে ওঠার সিদ্ধান্ত নেন।
এ সময় জাহির দেখতে পান, শিশুটি কার্নিশের যে অংশে দাঁড়িয়ে আছে তার নিচে রাস্তায় চার ব্যক্তি একটি কম্বল মেলে ধরে আছে। যাতে সে পড়ে গেলে তাঁরা তাকে ধরতে পারেন। তখন মিয়ানমারের নাগরিক থু ইয়াহ আউং (২৬) তাঁর কাছে আসেন। থু ইয়াহ একটি গির্জায় যাওয়ার পথে হঠাৎ এই পরিস্থিতি দেখেন।
ছেলেটিকে দেখে থু ইয়াহের তাঁর ছয় বছরের ভাগনি ও চার বছরের ভাগনের কথা মনে পড়ে যায়। তিনি বলেন, ‘আমি কল্পনা করছিলাম, আমার নিজের ভাগনি-ভাগনেই যেন সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। আমি চাইছিলাম তাকে বাঁচাতে।’ এরপর জহির ও থু ইয়াহ মিলে একটি পরিকল্পনা করেন।
পরিকল্পনা অনুসারে, জাহির লম্বা হওয়ায় তিনি থু ইয়াকে তাঁর কাঁধে নিয়ে দ্বিতীয় তলার কার্নিশে তুলে দেন। এরপর থু ইয়াহ জহিরকে টেনে ওপরে উঠতে সাহায্য করেন। সেখান থেকে জাহির আবার কাঁধে করে থু ইয়াহকে তৃতীয় তলার কার্নিশে উঠিয়ে দেন।
এভাবে থু ইয়াহ ধীরে ধীরে জহিরের সহায়তায় শিশুটির দিকে এগিয়ে যায়। তাঁরা সতর্ক ছিলেন যেন, শিশুটি তাদের গতিবিধিতে ভয় না পায়। কার্নিশটি এতটাই সংকীর্ণ ছিল, সেখানে কোনো মতে একজন মানুষ তার পা রেখে দাঁড়াতে পারেন। তবে এক কিছুর পরও থু ইয়াহ ভয় পাননি।
শিশুটির কাছে কাছে পৌঁছে থু ইয়াহ তাকে কোলে তুলে নেন। শিশুটি এতটাই ভীত ছিল, তার হাত ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল এবং সে থু ইয়াহকে জোরে আঁকড়ে ধরেছিল। শিশুটি যেখানে দাঁড়িয়েছিল তার পাশেই একটি জানালা ছিল। সেটি আরও খুলে থু ইয়াহ শিশুটিকে কামরার ভেতরে ঢুকিয়ে দেন। কামরাটির ভেতরে থু ইয়াহ একজন বৃদ্ধ ব্যক্তিতে দেখতে পান। এরপর, থু ইয়াহকে প্রথমে দ্বিতীয় তলার কার্নিশে নামতে সহায়তা করেন জহির এবং পরে তাঁরা নিচতলায় নেমে আসেন।
পরে এ ঘটনার জন্য, ইশুন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে অবস্থিত সিঙ্গাপুর সিভিল ডিফেন্স ফোর্সের (এসসিডিএফ) তৃতীয় ডিভিশন সদর দপ্তরে জহির ও থু ইয়াহকে এসসিডিএফ কমিউনিটি লাইফসেভার সম্মাননা দেওয়া হয়। দেশটিতে সাধারণত এই পুরস্কার এমন ব্যক্তিদের দেওয়া হয়, যাদের কাজগুলো আত্মত্যাগের উদাহরণ ও অন্যের জীবন বাঁচানোতে অবদান রাখে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।