বিনোদন ডেস্ক : রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ থানার বালিয়াকান্দি, কুঠি পাচুরিয়ার পেশকার বাড়ি। উঠোনের এক পাশে রান্নাঘর, সেখানে ধোঁয়া উঠছে রান্নার। ঘরটির পিলারের সঙ্গেই ঝুলতে দেখা গেলো একটি খাঁচা। কাছে গিয়ে বোঝা গেলো, ভেতরে একটি টিয়া পাখি।
হ্যাঁ, সেই টিয়া পাখি, যেটা নিয়ে দেশের শোবিজ অঙ্গনে বহু ঘটনা ঘটে গেছে। আইনি নোটিশ থেকে ১৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা, অনেক কিছুর অবতারণা হয়েছে। এ নিয়ে দুই পক্ষেরই যুক্তি এসেছে প্রকাশ্যে। সেই টিয়া পাখি আবারও খাঁচায়, এবারও শুটিং।
সিনেমার নাম ‘যাপিত জীবন’। এটি পরিচালনা করছেন হাবিবুল ইসলাম হাবিব। ছবিটিতে অন্যতম চরিত্রে আছেন রোকেয়া প্রাচী। রবিবার (৪ ডিসেম্বর) শুটিং স্পটে গিয়ে তাকে পাওয়া গেলো খাঁচাবন্দি টিয়া পাখির কাছেই। তাই প্রসঙ্গটি এড়ানো গেলো না।
পর্দায় পাখি কিংবা অন্য কোনও প্রাণীকে দেখানোর বিষয়টি গল্প-চিত্রনাট্য ও নির্মাতার ওপর নির্ভরশীল। তবে নিজের ব্যক্তিগত মত জানিয়ে রোকেয়া প্রাচী বলেন, ‘শিল্পী হিসেবে আমার দৃষ্টিভঙ্গির জায়গা থেকে মনে করি, এটা তো রূপক অর্থে এসেছে। আমরা মানুষও কোথাও না কোথাও খাঁচার মধ্যে, বৃত্তের মধ্যে। সেই রূপক অর্থেই টিয়াপাখিটিকে দেখানো হয়েছে। পাখিটার তো কোনও ক্ষতি হচ্ছে না। পাখিটা আমার মতো এখানে সহশিল্পী হিসেবে কাজ করছে। তাকে তো আমরা এখানে সম্মান দিয়ে কাজ করছি, খাবার দিচ্ছি। শুটিং শেষে তিনি তার জায়গায় পৌঁছে যাবে।’
গুণী এ অভিনেত্রীর মতে, ‘গল্পের প্রয়োজনে যদি খাঁচায় বন্দী পাখি আসে, সেটা আমার কাছে খুব অপরাধ মনে হয় না। আমরা মানুষকে বন্দী দেখছি না? কারাগারে। মানুষও তো প্রাণী। তো মানুষ যদি কারাগারে বন্দী দেখা যেতে পারে, তাহলে পাখি কেন নয়? পাখির প্রতি কোনও জুলুম হচ্ছে কিনা, সেটা দেখার বিষয়।’
খাঁচাবন্দি পাখি নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা বদলানো উচিত বলেও মনে করেন রোকেয়া প্রাচী। তার ভাষ্য, ‘আমার মনে হয় এটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা কীভাবে দেখছি। কবুতরও তো ছিলো, এখানে অনেক সময় একটা কুকুর শট দিচ্ছে, বিড়াল শট দিচ্ছে, কাক শট দিচ্ছে। পশুপাখিকে ছবির অংশ হিসেবে যদি দেখার সুযোগ হয়, আমি মনে করি সেটা ভালো। দৃষ্টিভঙ্গিটা সেভাবে হওয়া উচিত। পশুপাখিকে মারবার যে দৃশ্য, সেটি তো এখানে নেই। আমার মনে হয় না, কোনও নির্মাতা চলচ্চিত্রে সেভাবে দেখিয়েছেন।’
গেলো জুলাই মাসে পাখি ইস্যুতে মামলায় পড়েন নাট্যপরিচালক অনন্য ইমন। ‘শেষ গল্পটা তুমিই’ নাটকের দৃশ্যে তিনি খাঁচাবন্দি টিয়া পাখি দেখান। সে কারণে তার কাছে ১৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ‘বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট’।
এরপর সুপারহিট সিনেমা ‘হাওয়া’র ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। ছবিটির একটি দৃশ্যে বোঝানো হয়, চঞ্চল একটি পাখি পুড়িয়ে খেয়েছেন। এ কারণে ছবিটির নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। তবে কিছুদিন পর বিষয়গুলোর সুরাহা হয়ে যায়।
প্রসঙ্গত, ‘যাপিত জীবন’ সিনেমাটি নির্মিত হচ্ছে দেশভাগ ও ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে। এটি সরকারি অনুদান পেয়েছিলো। সেলিনা হোসেনের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মাণাধীন ছবিটিতে রোকেয়া প্রাচী ছাড়াও অভিনয় করছেন আফজাল হোসেন, আশনা হাবিব ভাবনা, ইমতিয়াজ বর্ষণ, মৌসুমী হামিদ প্রমুখ।
ছবি: মাহমুদ মানজুর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।