জুমবাংলা ডেস্ক: ফরিদপুরের বোয়ালমারী পৌর সদরের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম সিরাজ। ৫০ বছর ধরে চপ বিক্রি করছেন তিনি। এ এলাকায় ‘সিরাজের চপ’ খেতে তার দোকানে প্রতিদিন বিকেলে লাইন ধরে ভিড় করেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। এদের মধ্যে অনেকে আসেন অনেক দূর থেকে। এলাকায় খাদ্য হিসেবে ঐতিহ্য বহনের পাশাপাশি গত ৫ দশক ধরে ওই অঞ্চলের ভোজনরসিক মানুষের মন ভরাচ্ছে সিরাজের চপ। এই চপ স্বাদে গন্ধে একেবারেই আলাদা।
জানা গেছে, সিরাজুল ইসলামের বয়স ৬৬ বছর। অল্প বয়সে তিনি প্রথমে বাবুর্চির কাজ করতেন। ওই বয়সেই নিজের কিছু একটা করার আগ্রহ নিয়ে শুরু করেন চপ তৈরি করে বিক্রি করা। সেই থেকে শুরু। দিনে দিনে তার চপের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে এলাকাজুড়ে। শুরুতে এক টাকা দুই টাকায় বিক্রি হলেও এখন প্রতি পিস চপের দাম ১০ টাকা।
আগে প্রতিদিন গড়ে ২০০ চপ বিক্রি করলেও এখন তিনি দিনে প্রায় ৪০০ পিস চপ বিক্রি করেন। পরিমাণমতো মসলা, বাছাই করা আলু ও খাসির মাংসের কিমা দিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে তৈরিই এ চপের বৈশিষ্ট্য। খেতে খুবই মজাদার ও সুস্বাদু। আর এ কারণেই মানুষের কাছে সিরাজের চপ এত পছন্দের।
প্রতিদিন দুপুরের পর থেকে ব্যস্ততা শুরু হয় সিরাজের। ছোট দোকানে চেয়ার-টেবিল কিংবা বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। রাস্তার ওপর লাইন ধরে দাঁড়িয়ে কিনতে হয় চপ। দোকানের মধ্যে সিরাজ নিজ হাতে ভাজেন আলু ও খাসির মাংসের কিমা দিয়ে তৈরি চপ। প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বিক্রি হয়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে সব চপ শেষ হয়ে যায়। এর মধ্যে অনেকেই না পেয়ে ফিরেও যান।
দুপুরের পর বাজারে লোকসমাগম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যস্ততা বাড়ে সিরাজের। চপ বিক্রি করে চলে তার সংসার। বর্তমানে ঊর্ধ্বমূল্যের বাজারে প্রতি পিস চপ ১০ টাকায় বিক্রি করছেন তিনি। দৈনিক ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকার শুধু চপ বিক্রি হয় সিরাজের দোকানে। চপ তৈরি, ভাজা, ক্রেতাদের হাতে তুলে দেওয়া, চপের দাম রাখা সবকিছুই তিনি একা হাতে সামলান।
সিরাজুল ইসলাম সিরাজ বলেন, প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে চপ বিক্রি করছি। দিনে দিনে চাহিদা যেন বাড়ছেই। শুরুতে দাম ছিল এক টাকা, এরপর দুই টাকা। কয়েক বছর আগে তিন টাকা করে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ চপ বিক্রি করতাম। তখন সংসার বেশ ভালো চলত। এখন সবকিছুর দাম বাড়তি তাই দশ টাকা করে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪০০ চপ বিক্রি করেও সংসার ঠিকঠাক মতো চলে না। আমার চপে ভেজাল-পচা-বাসি কোনো কিছু ব্যবহার করা হয় না। সবকিছুই তরতাজা।
সিরাজ বলেন, চপের জন্য সারা বছরের আলু বগুড়া থেকে আমদানি করি। পোড়া তেল ব্যবহার করা হয় না। ফ্রেশ মসলা ও খাসির মাংসের কিমা দিয়ে প্রতিদিন ভাজা হয় চপ। দীর্ঘ এত বছরেও এ অঞ্চলের মানুষের কাছে আমার চপের জনপ্রিয়তা এতটুকু কমেনি। এত মানুষের মন ভরাতে পারছি, এটাই আমার ভালো লাগা ও স্বার্থকতা।
ক্রেতা ও পৌর সদরের ছোলনা গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর রহমান মিজান বলেন, সিরাজের চপ নামকরা চপ। সবার কাছে জনপ্রিয়। খেতেও সুস্বাদু। স্ত্রীকে নিয়ে বাজারে এসেছি তাই মনে করলাম সিরাজের চপ খাই। চপ কিনতে এসে আধা ঘণ্টা ধরে সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে আছি।
পৌরসভার সোতাশি গ্রামের বাসিন্দা ও ঠিকাদার শাহিনুজ্জামান খান ডেভিড বলেন, ছোটকাল থেকেই সিরাজের চপ খেয়ে আসছি। ছোটকালে দুই টাকা করে কিনে খেতাম। এখন দশ টাকা। প্রায়ই চপ খাওয়া হয়। সিরাজের চপ একনামে সবার কাছে পরিচিত। যে একবার খেয়েছেন তার অবশ্যই মনে রাখতে হবে।
চতুল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শরিফ সেলিমুজ্জামান লিটু বলেন, অত্র এলাকার মধ্যে সিরাজের চপ বেশ নামকরা। এক নামে সবার কাছে পরিচিত। সিরাজের চপের নাম শুনলেই জিভে জল চলে আসে। সুযোগ পেলেই খাওয়া হয়।
বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রাক্তন পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. খালেদুর রহমান এ ব্যাপারে বলেন, তেলে ভাজা নানা খাবারের মধ্যে সিরাজের চপ একটি জনপ্রিয় ও পরিচিত নাম ও সুস্বাদু খাদ্য। অনেকটা স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তৈরি করা হয় বলে শুনেছি। তার হাতের চপ খেয়ে কেউ অসুস্থ হয়েছে বলে শুনিনি।
বোয়ালমারী পৌরসভার মেয়র মো. সেলিম রেজা লিপন মিয়া এ বিষয়ে বলেন, সিরাজের চপ মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয় ও পরিচিত। বেশ নামকরা। খেতে মজা। দীর্ঘ বছর ধরে তিনি সুনামের সঙ্গে চপ বিক্রি করছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।