ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে নতুন ধরনের রাসায়নিক ও সিনথেটিক মাদক প্রবেশ করছে, যা নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে। ফেনসিডিল ও গাঁজার পাশাপাশি এসব নতুন মাদক যুবসমাজে ছড়িয়ে পড়ায় সামাজিক ও নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি বাড়ছে।
ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে মাদকের ধরন বদলে যাচ্ছে। আগে যেখানে ফেনসিডিল ও গাঁজাই ছিল প্রধান উদ্বেগের বিষয়, সেখানে এখন নতুন রাসায়নিক ও সিনথেটিক মাদক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্প্রতি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) মহেশপুরের একাধিক এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ নতুন মাদক উইনকোরেক্স সিরাপ উদ্ধার করেছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সীমান্তে মাদক প্রবেশ ঠেকাতে তারা নিয়মিত অভিযান ও নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছেন।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ফেনসিডিল ও উইনকোরেক্স মূলত একই ধরনের মাদক। উভয়টিতেই কোডিন ফসফেট রয়েছে, যা নেশাজাতীয় উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ভিন্ন নাম ও প্যাকেটের কারণে মাদকসেবীদের একটি বড় অংশ এখন উইনকোরেক্সের দিকে ঝুঁকছে।
তারা আরও জানান, কোডিনভিত্তিক মাদক বাংলাদেশে একেবারে নতুন নয়। ২০১০ সাল থেকেই এটি ভারত থেকে অবৈধভাবে প্রবেশ করছে। তবে গত ছয় মাসে মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে এই মাদকের চালান উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
স্থানীয়ভাবে মাদকের বিস্তার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন ধরনের এই মাদক সহজে বহনযোগ্য হওয়ায় এবং পরিচিত নাম না থাকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে যুবসমাজের মধ্যে আসক্তি বাড়ার পাশাপাশি সামাজিক অপরাধ ও নিরাপত্তা ঝুঁকিও বাড়ছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বলছে, সীমান্ত নজরদারি জোরদার করা হচ্ছে এবং নতুন মাদকের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বাড়ানো না গেলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।
এর প্রতি মাদকসেবীদের আগ্রহ বেশি থাকায় হঠাৎ করে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, সম্প্রতি ফেনসিডলের দাম অধিক মাত্রায় বেড়ে যাওয়ার কারণে মাদক চোরাকারবারিরা ভারত থেকে ফেনসিডিলের বিকল্ড উইনকোরেক্স নিয়ে আসছে। মহেশপুরের ভারতীয় সীমান্তবর্ত গ্রাম যাদবপুর, মাটিলা, সামান্তা খোশালপুর, লড়াইঘাট ও কুসুমপুর দিয়ে এসব মাদক দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাচ্ছে। ওপার থেকে মাদক নিয়ে আসার কাজে সহায়তা করছে স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্পের কিছু অসাধু সদস্য।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে চোরাকারবারি চক্র নতুন মাদক ছড়িয়ে দিতে ভিন্ন ভিন্ন পন্থা কাজে লাগাচ্ছে।
আল্প বয়সী কিশোর ও তরুণদের সহজ টার্গেট করা হচ্ছে। প্রথমে বিনামূল্যে বা কমদামে মাদক দিয়ে তাদের আসক্ত করা হচ্ছে। পরে ধীরে ধীরে তাদের নিয়মিত বিক্রেতায় পরিণত করা হচ্ছে।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা, কাওসার আহমদে বলেন, ‘এই মাদক সেবনে গলাবুক শুকিয়ে আসে, ঝিমুনির মতো হতে থাকে। এটি সেবনে কিডনি ও লিভার অকেজো হয়ে পড়ে। আরেকটি বড় ক্ষতির দিক হচ্ছে, দীর্ঘদিন সেবনে পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। ভারতের ল্যাবোরেট ফার্মাসিউটিক্যাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান ঠান্ডাকাশির ওষুধ হিসেবে এই উইনকোরেক্স তৈরি করে। তবে মাদকদ্রব্য হিসেবে বহুল ব্যবহারের কারণে ভারতে এটি অনেক আগেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিষিদ্ধ হলেও এর উৎপাদন বন্ধ হয়নি। ভারতে উৎপাদিত এই নিষিদ্ধ ওষুধ এখন নিয়মিত বাংলাদেশে ঢুকছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সীমান্ত এলাকার এক যুবক বলেন, ‘ইয়াবা, মদ ও ফেনসিডিল খাওয়ার খরচ বেশি। সেখানে কম দামে উইনকোরেক্স কিনে কাজ সেরে ফেলা যাচ্ছে। এটা প্রকাশ্যে খেলেও সাধারণত কেউ সন্দেহ করে না। এখন এক বোতল ফেনসিডিলের দাম আন্তত ৪ হাজার টাকা। সেখানে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে উইনকোরেক্স। তাই তরুণ মাদকসেবীরা এই নেশার দিকে ঝুঁকছে।’
জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিপ্তরের পরিদর্শক শেখ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সম্প্রতি ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ উইনকোরেক্স মাদক এ দেশে ঢুকছে। মাদকসেবীদের এ নেশার প্রতি বেশ চাহিদা রয়েছে। আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছি। কয়েকটি অভিযানে সীমান্ত এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ উইনকোরেক্স জব্দ করা হয়েছে। তবে এর কোনো মালিককে আটক করতে পারিনি। আমাদের এই অভিযান অভ্যাহত থাকবে।’
জেলা সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি মানবাধিকারকর্মী অনোয়ারুজ্জামান আজাদ বলেন, ‘শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানই যথেষ্ট নয়। সীমান্ত এলাকার মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো, যুবকদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। একই সঙ্গে মাদকবিরোধী সামাজিক আন্দেলন গড়ে তুলতে হবে। নতুন মাদকের আগ্রাসন ঠেকাতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হলে ভবিষ্যতে আরো ভয়াবহ রুপ নিতে পারে।’
এ ব্যাপারে মহেশপুর ৫৮ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্ণেল রফিকুল আলম বলেন, ‘সীমান্তে মাদকের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বণ করছি। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিনিয়িত সীমান্ত এলাকা থেকে মাদক জব্দ করা হচ্ছে। নতুন মাদক উইনকোরেক্স নিয়েও আমরা কাজ করছি। একই সঙ্গে নিয়মিত অভিযান পারিচালনা করছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আশা করছি শিগগিরই নতুন এই মাদকের প্রবণতা আমাদের সীমান্ত এলাকায় কমে আসবে।
https://inews.zoombangla.com/%e0%a6%b8%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%a7%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%a3%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%b6%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%a7%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%9c%e0%a6%a8/’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



