রঞ্জু খন্দকার, গাইবান্ধা থেকে: এখানে ‘চিচিং ফাঁক’ বললে গুপ্ত কোনো গুহার দরজা খুলে যাবে না। ভেতরে পাওয়া যাবে না মণিমাণিক্যও। তবে এখানে ঢুকলে দেখতে পাবেন চোখজুড়ানো, মনভোলানো সব স্থাপত্য, যা তৈরি হয়েছে আরব্যোপন্যাসেরই বিভিন্ন ‘থিম’ ধরে। এটি আলীবাবা থিমপার্ক।
পার্কটির অবস্থান গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নে। গ্রামের নাম লাটশালার চর। তবে এটি আসলে ত্রিস্রোতা– তিস্তার পাড়ে তিন জেলার সংগমস্থল। তিস্তার তীরে গড়ে ওঠা পার্কটির দক্ষিণ দিকে সুন্দরগঞ্জ, পূর্বে রংপুরের পীরগাছা এবং উত্তরে কুড়িগ্রামের উলিপুর।
পার্কটির কর্মী আলমগীর হোসেন জানালেন, এখানে তিন জেলার মানুষই আসেন। তবে বেশি আসেন গাইবান্ধার লোকজন। এ জেলায় অবস্থান হলেও পার্কটি গাইবান্ধা সদর থেকেই বেশি দূরে। এর চেয়ে কাছে পীরগাছা। আর নদীপথে উলিপুর থেকে আসা যায় সহজেই।
সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, তিস্তার তীরঘেঁষে বাঁধের দক্ষিণ পাশে গড়ে উঠেছে আলীবাবা থিমপার্ক। বাঁধে কিছু অস্থায়ী দোকানপাট। একেবারে পূর্বদিকে শেষ মাথায় ‘তিস্তা সোলার লিমিটেড’ নামে একটি সৌর বিদুৎকেন্দ্র।
বাঁধে গড়ে ওঠা একটি দোকানের মালিক নূরবানু। তিনি বললেন, আগে এ জায়গাটি বালুচর ছিল। পার্ক হওয়ার পর থেকে এখানে অনেক লোকজন বেড়াতে আসেন। তাঁরা পার্ক ঘুরেও মজা পান, তিস্তার সৌন্দর্যও দেখতে পান।
পার্কে ঢোকার টিকিট কাটতে গিয়ে জানা গেল, প্রবেশমূল্য ১০০ টাকা। তবে এর সঙ্গে সুইমিংপুলসহ তিনটি রাইড ফ্রি। টিকিট কেটে ঢুকতে প্রথমেই পার্কের সদর দরজাটি দেখে মনে হলো, আরব্যোপন্যাসেরই কোনো প্রাসাদের ফটক।
‘চিচিং ফাঁক’ না বললেও টিকিট দেখেই ফটকের দ্বাররক্ষী দরজা খুলে দিলেন। ভেতরে ঢুকেই দেখা গেল, আল্লাহর ৯৯টি নামাঙ্কিত বড় একটি গম্বুজ। সেখানে পানির ফোয়ারাও স্থাপন করা হয়েছে। ফোয়ারায় পানির ঝরণাধারা ঝরছে।
ফোয়ারার পেছনেই সুইমিংপুল। নীলাভ তার পানি। অবশ্য তখনো কেউ পানিতে নামেননি।
সুইমিংপুলের কর্মী আলমগীর হোসেন জানালেন, কিছুক্ষণ আগে এখানে ৪১ জনের একটি দল নেমেছিল। তাঁরা সাঁতারের পোশাক নিয়ে এসেছিলেন। পোশাক নিয়ে আসলে যে কেউ এখন ফ্রিতে নামতে পারবেন।
সুইমিংপুল পেরিয়ে দেখা যায়, সবুজ গাছপালা আর ফুলে-ফুলে ভরা জায়গা। মাঝেমধ্যে নানা রাইড। কোথাও ‘ট্রেন’ ছুটছে যাত্রী নিয়ে, কোথাওবা ‘প্লেন’ উড়ছে আকাশে। ছোটদের পাশাপাশি বড়রাও এসব রাইডে মজা পাচ্ছেন।
পীরগাছা থেকে নাতি-নাতনিদের নিয়ে এসেছিলেন আজিজুর রহমান। তিনি বললেন, নাতি-নাতনিদের সঙ্গে এসে তিনিও মজা পাচ্ছেন। এলাকার কাছাকাছি এমন পার্ক থাকায় সহজেই বিনোদন পাওয়া যাচ্ছে।
পার্কের পূর্ব দিকে ফাঁকা জায়গাও রয়েছে। এদিকে পিকনিক করা যায় বলে জানালেন কর্মীরা।
পার্কের দেয়ালজুড়ে রয়েছে মুসমানদের পবিত্র আল আকসা মসজিদ থেকে শুরু করে ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যানের ছবি। ঘুরতে ঘুরতে একেবারে দক্ষিণ-পূর্ব কোনায় আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপের দেখাও পাওয়া গেল।
বুঝতেই পারছেন, এর সবই মেকি। প্রদীপ ঘষেও দৈত্যের দেখা মিলল না।
উলিপুর থেকে বেড়াতে আসা লোকমান হোসেন জানালেন, আরব্যোপন্যাসের থিম নিয়ে কাজ করায় পার্কটির প্রতি আলাদা আকর্ষণ তৈরি হয়েছে। এখানে এসে সে আকর্ষণ কিছুটা মেটানো গেল।
পার্ক কর্তৃপক্ষের সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৩০ একর জায়গাজুড়ে পার্কটি গড়ে তোলা হয়েছে। ২০১৯ সালে পার্কটির কার্যক্রম শুরু হয়। ২০২১ সালে এটি দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে আলীবাবা থিমপার্কের ম্যানেজার তৌহিদুল ইসলাম জুমবাংলাকে বলেন, পার্কটি এখনো সম্পূর্ণ করা হয়নি। ধীরে ধীরে পার্কে আরও অনেক কিছু যুক্ত করা হবে। তখন এটি আরও আকর্ষণীয় হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।