জুমবাংলা ডেস্ক : সুন্দরবনের বাঘ গণনা কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়েছে গত ৩১ মার্চ। ৩৬ কোটি টাকার বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় বাঘ শুমারির জন্য সোয়া তিন কোটি টাকা বরাদ্দের কথা জানিয়েছে বনবিভাগ। এরই মধ্যে সুন্দরবনের কটকায় ক্যামেরায় ধরা পড়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আয়েশি ভঙ্গিতে বসে থাকার দৃশ্য। বাঘটিকে সুন্দরবনের একটি গাছের নিচু ডালে বসে থাকতে দেখা যায়। ছবিটি ধারণ করেন ফটো সাংবাদিক ফরিদী নোমান।
শনিবার (২ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘সুন্দরবনে কটকার সমুদ্রের মোহনায় ঢেউয়ের ঠ্যালা না খেলে বোট নিয়ে এই খালটিতে আমাদের ঢুকতে হতো না। কটকা অফিস পাড়াতেই বিকালে নামার পরিকল্পনা ছিল। খারাপ আবহাওয়ার কারণে প্রায় ১০ কিলোমিটার সরে এসেছি আমরা। তাই আশে-পাশে ট্রলারে ঘুরছিলাম পাখি খুঁজতে। প্রথম যে শাখা-খালে ঢুকলাম সেখানে ব্রাউন-উইঙড কিংফিশার, স্মল মিনিভেট, স্পেকলড পিকুলেটসহ আরও কিছু ছোট পাখির দেখা মিললো।’
তিনি আরও লেখেন, ‘শাখা-খালটি থেকে বেরিয়ে বাঁয়ের আরেকটি খালে ঢোকার চেষ্টা করলাম, পানি কম থাকায় সেখান থেকেও বেরিয়ে এসে ডান দিকে কিছু দূর এগোনোর পর কেওড়া পাতার ফাঁকে গাড়ো হলুদ বাঘটি দেখতে পাই। এটি দেখার পর প্রথম কয়েক সেকেন্ড নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। খালের পাড়ে বেশিরভাগই কেওড়া গাছ। মাঝে পানিতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটা বাইন গাছের ওপর খুব আয়েশি ভঙ্গিতে ছিল আহ্লাদি এক রাজকুমার, আমাদের প্রিয় বেঙ্গল টাইগার, বাংলার বাঘ।’
সম্প্রতি বাঘের দেখা মিলছে সুন্দরবনে। কটকা, কচিখালীসহ বেশকিছু পর্যটন স্পটের আশপাশে দেখা মিলছে। ফলে পর্যটকরাও উৎফুল্ল হচ্ছেন।
বনজীবী ও বনরক্ষীরা জানান, গত ১০ বছরেও এভাবে বনে বাঘের চলাচল লক্ষ্য করা যায়নি। বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে অনেকটা আতঙ্কে রয়েছেন তারা।
গত ১২ মার্চ পরিবারসহ সুন্দরবনে ঘুরতে আসেন ঢাকার কিছু পর্যটক। তাদের টিমের কাছে বাঘের দেখা মিলেছে। এমএল সুবতি নামের পর্যটকবাহী লঞ্চে তারা ঢাকা থেকে সুন্দরবন ঘুরতে আসেন। টিমে ছিলেন ৩০ জন পর্যটক। তারা কটকা ও কচিখালীর মধ্যবর্তী স্থানে এলে বাঘ দেখতে পান।
পর্যটক সোহরাব হোসেন বলেন, ‘১২ মার্চ বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সুন্দরবন থেকে খুলনা ফেরার পথে শুনতে পাই কচিখালী এবং কটকার মাঝামাঝি ছিটে কটকা নামক স্থানে আমাদের সামনে থাকা ওয়েব নামের অন্য একটি লঞ্চের পর্যটকরা নদীর চরে বাঘ দেখতে পেয়েছেন। এরপর আমরাও চরের দিকে খেয়াল রাখি। আমরা দেখি একসঙ্গে পাঁচটি বাঘ গোল হয়ে নদীর চরে গাছের পাশে বসে আছে। সেগুলো বসেছিল ও খেলা করছিল।’
লঞ্চের মাস্টার শামিম বলেন, সুন্দরবনে বহুবার এসেছি। কিন্তু কখনও বাঘের দেখা পাইনি। এই প্রথম সুন্দরবনে বাঘ দেখলাম।’
সুন্দরবনে বন কর্মকর্তারা এর আগেও বাঘ দেখেছেন এবং এ নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। তবে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি কটকা এলাকায় একসঙ্গে তিনটি বাঘের দেখা পেয়েছিলেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা।
ট্যুর অপারেটর সুন্দরবন হলিডেজের ট্যুর গাইড শাহ ইলিয়াস বলেন, ‘১২ মার্চ বিকাল ৫টার পরে ছিটা কটকা খালের অপর পাড়ে চারটি বাঘ দেখেছি। সেখানে কোনও বাচ্চা ছিল না। সবগুলো আকারে বড় বাঘ।’
সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগের বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের কটকা এলাকায় গত ২৪ ফেব্রুয়ারি একসঙ্গে তিনটি বাঘের দেখা পেয়েছিলেন বন বিভাগের স্মার্ট পেট্রোল টিমের সদস্যরা। এই টিমে ছিলেন বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের খুলনা কার্যালয়ের মৎস্য বিশেষজ্ঞ মফিজুর রহমান চৌধুরী। তিনি তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘আমাদের টহল দল সুন্দরবন পূর্ব বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে একসঙ্গে মা ও দুটি বাচ্চাসহ মোট তিনটি বাঘ দেখতে পায়। আমরা প্রায় ২৫ মিনিট ধরে তাদের দেখেছিলাম।’
বনবিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮২ সালে বাঘের সংখ্যা ছিল ৪৫৩। ১৯৮৫ সালের জরিপে বাঘের সংখ্যা ৪৫০। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা-এফএওর’ বিশেষজ্ঞদের মতে, ১৯৯৪ সালের বাঘের সংখ্যা ৩৬৯টি। ২০০৪ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি ও বন বিভাগের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত শুমারি অনুযায়ী সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা ৪৪০। ক্যামেরায় ছবি তোলার মাধ্যমে ২০১৩ সাল ও ২০১৮ সালে বাঘ শুমারি হয়। ইনফ্লারেড নামক ক্যামেরার মাধ্যমে বাঘ শুমারি হয়। সুন্দরবনে ক্যামেরা ফাঁদ পদ্ধতিতে সবশেষ বাঘ জরিপ হয়েছিল ২০১৮ সালে। সেবার শনাক্ত হয় ১১৪টি বাঘ, তার মধ্যে পূর্ণ বয়স্ক ৬৩টি, ১৮টি ১২ থেকে ১৪ মাস বয়সী এবং ৩৩টি ছিল শাবক।
ওয়ার্ল্ড লাইফ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান রনথম্বোর ফাউন্ডেশন ও ওয়ার্ল্ড নেচার ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, সুন্দরবনে বাংলাদেশ অংশে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা হার অব্যাহত থাকলে ২০৭০ সাল নাগাদ এখানে বাঘের সংখ্যা ৯৬ শতাংশ কমে যাবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।