জুমবাংলা ডেস্ক : রেজাউল করিম রনি, মাহফুজুল আলম মিঠু ও রেজা শরীফ। তারা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির যথাক্রমে বরিশাল মহানগর, জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি। তিনজনই ছাত্রত্ব শেষ করে কর্মজীবনে ঢুকেছেন। বিয়ে করে কেউ হয়েছেন সংসারী। এ নিয়ে সমকালের করা প্রতিবেদন থেকে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো-
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তারা এখন নতুন তৎপরতা শুরু করেছেন। এতে ছাত্রদলে অস্বস্তি বিরাজ করছে। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির পদধারী আরও অনেকের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ রয়েছে। শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে কয়েকজন বহিষ্কারও হয়েছেন। এমন প্রেক্ষাপটে মেয়াদোত্তীর্ণ তিনটি কমিটি বাতিল করে নতুন নেতৃত্বের দাবি উঠেছে।
জানা গেছে, দু’বছর মেয়াদি মহানগর ও জেলা ছাত্রদলের কমিটি হয়েছে ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট। প্রতিটি ৪৯৭ সদস্যের বড় বহরের কমিটি। দুই ইউনিটে পদধারী নেতা প্রায় এক হাজার। তখন ৫ সদস্যের কমিটি নিয়ে নানা অভিযোগে ঝাড়ু মিছিলও হয়েছিল।
২০২২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি গঠিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বিবাহিত, মাদক কারবারি, প্রবাসীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের ঠাঁই হয় ছাত্রদলে। ২০১৬ সালে গঠিত ২৫ সদস্যের বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি ২০২১ সালে ৫১ সদস্যে উন্নীত হয়। এ কমিটির বেশির ভাগেরই ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে।
মহানগর কমিটিতে আরেক ছাত্রদল নেতা জিতু হত্যা মামলার আসামি রেজাউল করিম রনিকে মহানগরের সভাপতি করায় তখন ক্ষোভ দেখা দিয়েছিল। রনি দীর্ঘদিন আইনজীবী পেশায় নিয়োজিত। গণঅভ্যুত্থানের পর তাঁর বিরুদ্ধে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ওঠে। কয়েক দিন আগে এসব অভিযোগের ভিত্তিতে রনিকে বহিষ্কারের দাবি করে ছাত্রদলের একাংশ। কমিটির মেয়াদ প্রসঙ্গে রনি বলেন, সারাদেশেই ছাত্রদলের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ।
জেলা কমিটি গঠনের পরপরই ওঠে নানা অভিযোগ। সভাপতি মাহফুজুল আলম মিঠু ও সাধারণ সম্পাদক কামরুল আহসানের বাড়ি মেহেন্দীগঞ্জে। তখনকার কেন্দ্রীয় ছাত্রদল সভাপতি রাজীব আহসানের বাড়িও মেহেন্দীগঞ্জে। তিনি সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-৪ (মেহেন্দীগঞ্জ-হিজলা) আসনে মনোনয়নপ্রত্যশী।
নির্বাচনকেন্দ্রিক বলয় তৈরিতে মিঠু ও কামরুল শীর্ষ দুটি পদ পান বলে তখন অভিযোগ করেন বঞ্চিতরা। রাজীব আহসান এখন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি। কামরুলকে জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক দলেরও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের প্রকাশ্য কোনো কার্যক্রম ছিল না। ২০১৬ সালের কমিটির সভাপতি রেজা শরীফ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। সিনিয়র সহসভাপতি ফয়সাল খান ঢাকায় একটি ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী। সাধারণ সম্পাদক হাসান আল হাসিব উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী।
৫ আগস্টের পর ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের তৎপরতা বেড়েছে। সরকার পতনের পর ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে থাকা দুটি কক্ষ দখলের চেষ্টা নিয়ে ক্যাম্পাসে উত্তেজনাও হয়েছিল। বর্তমানে ক্যাম্পাসে সভাপতি রেজা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসম্পাদক জান্নাতুল নওরীন অনুসারী আলাদা দুটি গ্রুপ ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারে তৎপর। নওরীন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও কমিটির ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদক।
রেজা শরীফ বলেন, ‘আমিও চাই নতুন কমিটি হোক। নবীনদের হাতে দায়িত্ব দিয়ে ছাত্র রাজনীতিকে বিদায় জানাব। এজন্য সরকার পতনের পর ক্যাম্পাসে যাতায়াত বাড়িয়েছি।’ তিনি বলেন, কিছু শিক্ষার্থী নওরীনকে মানেন। এটিকে তিনি ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।
এসব বিষয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির বলেন, ‘৫ আগস্টের পর আমরা নতুন করে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেছি। যেখানে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি আছে, সেখানে নতুন কমিটি দেওয়া হবে। এজন্য যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া চলছে। কারও বিরুদ্ধে সংগঠনবিরোধী অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।