জুমবাংলা ডেস্ক : করোনার হটস্পট হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জে গত ৩ মাসে ৯৪টি লাশ দাফন করতে গিয়ে সস্ত্রীক করোনায় আক্রান্ত হয়েও দমে যাননি কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ।
বরং মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে নতুন উদ্যোগ নিয়ে ছুটে চলেছেন দেশে-বিদেশে ‘করোনা বীর’ খ্যাত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের এ কাউন্সিলর।
দেশে প্রথমবারের মতো ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্লাজমা সংগ্রহ থেকে শুরু করে তা করোনা রোগীদের প্রদান করেছেন এই কাউন্সিলর। পাশাপাশি রোগীদের জন্য ফ্রি অক্সিজেন সরবরাহও করছে তার নেতৃত্বাধীন ‘টিম খোরশেদ’ এর করোনা যোদ্ধারা।
শুক্রবার পর্যন্ত তাদের দেয়া প্লাজমায় সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ২১ জন কোভিড-১৯ রোগী, আর সুস্থ হওয়ার পথে আরও ৩০ জন করোনা রোগী। এছাড়া আরও ৩২ জন রোগীকে দেয়া হয়েছে ফ্রি অক্সিজেন সেবা।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাকুসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ করোনাকালের শুরু থেকেই মাঠে নেমেছেন সাধারণ মানুষের সেবায়।
শুরুতে নিজ উদ্যোগে তৈরি করা প্রায় ৪০ হাজার বোতল জীবাণুনাশক, স্যানিটাইজার ও তরল সাবান বিতরণ করেছেন। নিজ ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে হাত ধোয়ার ব্যবস্থাও করেছেন।
কিন্তু তাকে নারায়ণগঞ্জসহ পুরো দেশের মানুষ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় পরিচিতি এনে দেয় স্বজনদের ফেলে যাওয়া করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া রোগীদের লাশ দাফনের মতো মহৎ কাজের জন্য।
নিজে মুসলিম হয়েও কাউন্সিলর খোরশেদকে করতে হয়েছে অনেক হিন্দু রোগীদের মরদেহের সৎকার, এমনকি মুখাগ্নিও। এই মহৎ কাজটি করতে গিয়ে তার টিমের অনেক সদস্যদের মতো কাউন্সিলর খোরশেদ ও তার স্ত্রী আফরোজা খন্দকারও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
করোনায় আক্রান্ত হওয়া এই দম্পতিকে নিজেদের জীবন বাঁচাতে যুদ্ধ করতে হয়েছে। কিন্তু তারপরও সুস্থ হয়ে দমে যাননি তারা। নতুন উদ্যমে শুরু করেন ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্লাজমা সংগ্রহ ও ফ্রি অক্সিজেন সেবার মত আরেকটি মহৎ কাজ।
জানা গেছে, খোরশেদ ও তার টিমের প্লাজমা থেরাপি নিয়ে ২১ জন মুমূর্ষু রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
প্লাজমা সেবা নেয়া বেশ কয়েকজন জানান, খোরশেদের এ ঋণ কোনদিনও পূরণ করা সম্ভব নয়। অনেকে আবার আবেগাপ্লোত হয়ে পরেন।
এ ব্যপারে মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ যুগান্তরকে বলেন, আমি আল্লাহকে খুশি করতে এসব করছি, অন্য কোনো কিছুর আশায় নয়। যতোদিন দেহে প্রাণ আছে ততোদিন আমি আমার কাজ অব্যাহত রাখবো।
কারণ, আমি নিজে স্ত্রীসহ করোনায় আক্রান্ত হয়ে দেখেছি মানুষ কীভাবে জীবন বাঁচাতে যুদ্ধ করছে। ঠিক যেমনটি দেখেছি লাশ দাফন করতে গিয়ে। বাবার লাশের সাামনে সন্তানরা ভয়ে আসছে না, এমন অনেক ঘটনাও দেখেছি।
খোরশেদ আরও বলেন, বেসরকারি উদ্যোগে প্লাজমা সংগ্রহ করে রোগীদের সরবরাহ করার কাজ দেশে প্রথম আমরাই শুরু করেছি। সঙ্গে ফ্রি অক্সিজেন সরবরাহও করছি রোগীদের।
পরবর্তীতে আমাদের দেখে মানুষ উৎসাহিত হয়েছে এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন এতে এগিয়ে এসেছে। এর মধ্যে আমরা টেলিমিডিসিন সেবাও শুরু করেছি, যেখানে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার মানুষ সেবা পেয়েছেন এবং তারা এতে উপকৃত হয়ে সন্তুষ্ট।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



