সেই শিক্ষকের কাছ থেকে উপহারের গাড়ি নিয়ে যা বললেন হিরো আলম
বিনোদন ডেস্ক: বগুড়া-৪ ও ৬ আসনের উপনির্বাচনের আগের দিন ফেসবুক লাইভে আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমকে গাড়ি উপহার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন এক শিক্ষক। অবশেষে সব আলোচনা-সামলোচনার অবসান ঘটিয়ে হিরো আলমকে নিজের ৬ লাখ টাকা দামের নোহা গাড়ি উপহার হিসেবে তুলে দিলেন হবিগঞ্জের সেই শিক্ষক।
ওই শিক্ষকের নাম এম মুখলিছুর রহমান। তিনি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার নরপতি গ্রামের হাজী আবদুল জব্বার জি এল একাডেমি অ্যান্ড হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। গত ৩১ জানুয়ারি ফেসবুক লাইভে এসে তিনি হিরো আলমকে নিজের ব্যবহৃত নোহা মাইক্রোবাসটি উপহার দেয়ার ঘোষণা দেন।
মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টায় হিরো আলম হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রিজ এলাকায় পৌঁছালে তাকে অভ্যর্থনা জানায় ভক্তরা। পরে তার গাড়ি নিয়ে চলে যান শিক্ষক মুখলিছুর রহমানের বাড়ি চুনারুঘাট উপজেলার নরপতি গ্রামে। সেখানে খাওয়া-দাওয়া ও আনুষ্ঠানিকতা শেষে হিরো আলমকে নিজের গাড়ির চাবি বুঝিয়ে দেন শিক্ষক মুখলিছুর রহমান। এসময় শিক্ষকের বাড়িতে হিরো আলমকে এক নজর দেখতে ভিড় জমান শত শত গ্রামবাসী ও ভক্তরা।
ফুলবাড়ি গ্রামের তরুণ জোবায়ের বলেন, ‘এত দিন মুখে মুখে শুনে আসছি হিরো আলমের নাম। আজ তাকে সরাসরি দেখতে আসছি এ গ্রামে।’
শিক্ষক মুখলিছুর রহমান এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমি ওয়াদা করেছিলাম, নির্বাচনে হিরো আলম জয়ী হন বা না হন পরের দিন আমার বাড়িতে আসলে আমি গাড়িটি তার হাতে তুলে দেবো। কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষী মহল বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার সমালোচনা করেছেন। এতে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। আমি সিলেটবাসীর সম্মান ক্ষুণ্ণ করতে দেবো না। সম্মানের সঙ্গে আমি হিরো আলমকে গাড়িটি তুলে দিতে পেরে খুশি।’
তিনি আরও বলেন, ‘হিরো আলম ভাই আমার বাড়িতে এসেছেন আমার আর পাওয়ার কিছু নাই। পরে তিনি হিরো আলমকে জড়িয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন।
গাড়ির চাবি হাতে পাওয়ার পর হিরো আলম বলেন, আমার ভাই ভালোবেসে আমাকে গাড়ি উপহার দিয়েছেন। আমি এই গাড়ি গ্রহণ করলাম। পরে হিরো আলম গাড়িটি নিজে না নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য অ্যাম্বুলেন্স বানিয়ে সেবা করার উদ্দেশ্য দান করে দেন। যে কোনো অসহায় মানুষ এ অ্যাম্বুলেন্সের সেবা গ্রহণ করতে পারবে।
ঢাকা থেকে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে আসার পথে ওভার স্পিট থাকায় হিরো আলমের গাড়ির নামে মামলা দিয়েছে শায়েস্তাগঞ্জ হাইওয়ে থানা পুলিশ। মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দুইটার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের উলুকান্দি এলাকায় গাড়িটি আটক করে মামলা দেয়া হয়।
শায়েস্তাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি মাইনুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, আশরাফুল আলম হিরোকে বহনকৃত গাড়িটি হাইওয়ে দিয়ে ওভার স্পিডে চলছিল। এসময় দায়িত্বরত পুলিশ গাড়িটি আটক করে। পরে ২ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা নিয়ে গাড়িটি ছেড়ে দেয়া হয়।
গত ৩১ জানুয়ারি ফেসবুক লাইভে নিজের ব্যবহৃত মাইক্রোবাসের সামনে দাঁড়ানো অবস্থায় ওই শিক্ষকের ৩ মিনিট ৪৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রথম দিকে বিষয়টি গুরুত্ব দেননি হিরো আলম। যোগাযোগও করেননি। কয়েক দিন পর আবার আক্ষেপ প্রকাশ করে ভিডিও দেন ওই শিক্ষক। এরপর যোগাযোগ করেন হিরো আলম। অবশেষে সেই গাড়ি আনতে মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) হবিগঞ্জ যাচ্ছেন তিনি।
হিরো আলম ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে একতারা প্রতীকে মাত্র ৮৩৪ ভোটে পরাজিত হয়ে দেশব্যাপী আলোচনার জন্ম দিয়েছেন।
ভিডিওতে এম মুখলিছুর রহমান বলেছিলেন, হিরো আলম ভোটের প্রচারে মানুষের মন জয় করে নিয়েছেন। তিনি নির্বাচনে জয়ী হবেন কিনা জানি না। ফল যেটাই আসুক না কেন; আমি আমার গাড়িটি তাকে উপহার দিতে চাই।
তিনি আরও বলেন, সিলেটবাসীর পক্ষ থেকে হিরো আলমের নির্বাচনে ছয় লাখ টাকা দেয়ার আহ্বান জানিয়ে একটি ভিডিও করেছিলাম। অনেকেই সেখানে খারাপ মন্তব্য করেছেন। এর প্রতিক্রিয়ায় আমি আমার নোহা গাড়িটি তাকে উপহার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছি।
আমি সিলেটবাসীকে কলঙ্কিত করব না। আমি একজন প্রিন্সিপাল ফালতু ওয়াদা করি না। ওয়াদা অনুযায়ী আমি আমার গাড়িটি কাগজপত্র করে চিরতরে তাকে উপহার দেব।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) মুখলিছুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি। তার সহকারী পরিচয় দিয়ে একজন বলেন, সিলেটবাসীর পক্ষ থেকে হিরো আলমকে তিনি গাড়িটি উপহার দেয়ার ওয়াদা করেছেন। নির্বাচনে হারলেও সিলেটবাসীকে কলঙ্কিত করবেন না। ওয়াদা রাখবেন। হিরো আলম মঙ্গলবার মাইক্রোবাস নিতে আসছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।