জুমবাংলা ডেস্ক : সবজির বাজারে যেন সেঞ্চুরি হাঁকানোর প্রতিযোগিতা চলছে। অধিকাংশ সবজিই সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ছুটে চলছে ঊর্ধ্বমুখে। কোনোটি হাঁকিয়েছে ডাবল সেঞ্চুরি। এর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছে কাঁচামরিচ। এই নিত্যপণ্যটি এখন ট্রিপল সেঞ্চুরি পার করে চারশ টাকায় উঠেছে। বাজারে এখন ১০০ টাকার নিচে মিলছে খুব কম সবজিই। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা যায়।
সবজি ব্যবসায়ীরা বলছেন, সবজির উৎপাদনস্থলেই দাম বেশি। বন্যা-বৃষ্টির কারণে গত এক মাসের মধ্যে সবজির দাম অনেক বেড়েছে। কিন্তু সরবরাহ ঠিক না হওয়ায় এখনও সেভাবে দাম কমেনি। ফলে বেশিরভাগ সবজির দামই বর্তমানে উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল হয়ে আছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেগুন, করলা, বরবটির মতো নিত্যব্যবহার্য ১০টির বেশি সবজির দাম এখন ১০০ টাকার উপরে। যেমন মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ১০০-১৪০ টাকা এবং বরবটি ও কাঁকরোল ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টমেটোর কেজি ২০০-২২০ টাকা। আর এক কেজি করলার দাম নেওয়া হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা। এভাবে গাজর, শসা, পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকার উপরে। এ ছাড়া ঝিঙে ও ঢ্যাঁড়শের দামও ১০০ টাকার আশপাশে। আর প্রতি কেজি কাঁচামরিচ এখন ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বর্ষাকালে এমনিতেই সবজির দাম কিছুটা বাড়তি থাকে। তবে এ বছরটা যেন ব্যতিক্রম। টানা বর্ষণের কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গত এক মাসের মধ্যে টানা বর্ষণে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। চলতি মাসের শুরুতেই ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজারসহ অনেক নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা গেছে। এ ছাড়া মানিকগঞ্জসহ ঢাকার আশপাশের অনেক এলাকাও বর্তমানে পানিতে ডুবে আছে।
এতে সবজির সরবরাহ কমেছে। সরবরাহ কমায় সবজির দাম দফায় দফায় বেড়েছে। যেমন ঠিক এক মাস আগে রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি বরবটির দাম ছিল ৪০-৫০ টাকা। দুই সপ্তাহ পরে দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়, অর্থাৎ ১০০-১২০ টাকা। এখনও সেই দামেই বাজারে বরবটি বিক্রি হচ্ছে। গত ১৫ দিনের মধ্যে বেগুনের দাম কেজিতে ৪০-৬০ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০-১৪০ টাকায়। এভাবে করলায় ৪০-৬০ টাকা, টমেটোতে ৬০-১০০ টাকা এবং কাঁকরোল ও ঝিঙের কেজিতে ৫০-৬০ টাকা করে দাম বেড়েছে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ ঠিক থাকলে এসব সবজির দাম প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে থাকত।
রান্নার অন্যতম উপকরণ পেঁয়াজ ও কাঁচামরিচের দামও এখন চড়া। বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১২০-১৩০ টাকা ও আলু ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য সবজির মধ্যে লাউ, লতি, কচুরমুখি, ধুন্দুল, চিচিঙ্গা, পটোলের দাম ৮০-৯০ টাকার ঘরে রয়েছে।
বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইমরান মাস্টার জানান, বর্তমানে সবজির চড়া দামের মূল কারণ অতিবৃষ্টি ও বন্যা। একটি উদাহরণ দিয়ে ইমরান মাস্টার জানান, গত রোববার তিনি মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে গিয়েছিলেন। সেখানে মাঠের পর মাঠ এখনও পানির নিচে ডুবে আছে। সিঙ্গাইরের স্থানীয় বাজারে ১ কেজি করলা বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা দরে। সেই করলা ঢাকায় আনার পরে দাম তো বেশি হবেই।
ইমরান মাস্টার বলেন, ‘দেশের অনেক এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। সরবরাহ ঠিক থাকলে দাম আর বাড়বে না। তবে সবজির বর্তমান দাম কমতে আরও ১৫-২০ দিন বা মাসখানেক সময় লাগতে পারে।’
সরকারি হিসাবে, দেশে তিন মাস ধরে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের উপর রয়েছে। অর্থাৎ খাদ্যপণ্য কিনতে গত বছরের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি খরচ হচ্ছে। কিন্তু খরচের তুলনায় আয় বাড়েনি সাধারণ মানুষের। গতকাল সকালে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘চড়া দামের কারণে মাছ-মুরগি খাওয়া কমিয়ে সবজি-ডিম খাওয়া বাড়িয়েছি। কিন্তু এক মাস ধরে সেই সবজির দামও নাগালের বাইরে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।