জুমবাংলা ডেস্ক : ২৪ ফেব্রুয়ারি, উত্তরপূর্ব দিল্লিতে তখন জ্বলছে হিংসার আগুন। খুঁজে খুঁজে মারা হচ্ছে দিল্লির মুসলমানদের। এই অবস্থায় প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে মাহিন্দার সিং ও তার ছেলে ৭০ জন মুসলমান মাদ্রাসা ছাত্র ও মুসল্লির প্রাণরক্ষা করেন।
মানবতা ও সাম্যের কবি নজরুল বলেছিলেন,
‘হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?
কান্ডারী! বল, ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মার’
যিনি ঘোর দুর্যোগে জাতিধর্ম নির্বিশেষে দেশ তথা জাতি বাঁচানোর তাগিদ অনুভব করেন তিনিই কাণ্ডারী, তিনিই প্রকৃত মানুষ।
একজন নিপীড়িত মানুষকে রক্ষা করাও সমগ্র মানবতাকে রক্ষার শামিল। মাহিন্দার সিংকে তাই মহামানব বলাটা অত্যুক্তি হবে না মোটেও। খবর গার্ডিয়ান ও এএনআইয়ের।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সংঘবদ্ধ সাম্প্রদায়িক হামলায় যখন উত্তরপূর্ব দিল্লির গোকুলপুরি এলাকার মুসলমানদের নির্বিচার হত্যা করা হচ্ছে, ঠিক মাঝেই স্বর্গ আর নরক যে মানুষের হৃদয়েই থাকে তার উদাহরণ দিলেন এক শিখ পিতা মাহিন্দার এবং তার যুবক পুত্র ইন্দ্রজিৎ সিং।
এএনআই’কে মাহিন্দার জানান, আমি ও আমার ছেলে গোকুলপুরি এলাকার একটি মাদ্রাসা এবং এর সংলগ্ন মসজিদে ৭০ জন মুসলমান শিক্ষার্থী এবং মুসল্লি আটকা পড়েছেন বলে জানতে পারি। দাঙ্গাবাজেরা খোঁজ পেলে এরা প্রাণে বাঁচতে পারবেন না, সেই কথা চিন্তা করেই আমি ছেলে ইন্দ্রজিৎকে সঙ্গে নিয়ে এদের প্রাণরক্ষার সিদ্ধান্ত নেই।
মাহিন্দার বলেন, আমার নিজের ছিল একটি স্কুটার আর ইন্দ্রজিতের ছিল রয়্যাল এনফিল্ড বুলেট মডেলের এক বাইক। দুটি মোটরসাইকেল করে দুজনে ওই মাদ্রাসা থেকে প্রতিবার চারজন করে শিক্ষার্থী এবং মুসল্লিকে নিরাপদ কদমপুরি এলাকায় সরিয়ে আনি। এভাবে দুই বাপবেটা মিলে মোট ২০ বার যাওয়া-আসা করেছি।
দাঙ্গাকারীরা যেন যাত্রীদের চিনতে না পারেন সেজন্য তাদের মাথায় শিখদের পাগড়িও বেঁধে দিয়েছিলেন তারা। এভাবে প্রাণে রক্ষা পাওয়াদের মাঝে ৯ বছরের বালক থেকে পূর্ণবয়স্ক অনেক মুসলমান ছিলেন। আরও ছিলেন কয়েকজন নারী ও কন্যাশিশু।
অতি-সাহসী এই কাজকে অবশ্য নিজের দায়িত্ব বলেই মনে করেন মাহিন্দার।
তিনি বলেন, ‘আমি ১৯৮৪ সালে দিল্লির শিখ বিরোধী দাঙ্গা দেখেছি। সেদিনের সহিংসতাও আমাকে একই স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। আমি যা করেছি তা মানবতার খাতিরে করছি, সেখানে ধর্ম বিচারের প্রশ্ন আসে না।’
মাহিন্দার এবং ইন্দ্রজিতের কারণে সেদিনের বেঁচে যাওয়া মানুষেরাও বলছেন, সেদিন এই পিতাপুত্র না থাকলে তারা প্রাণে বাঁচতে পারতেন না। ঈশ্বর প্রেরিত দেবদূতের মতোই সেদিন এ দুই পিতাপুত্র নিজেদের জীবনের মায়া ত্যাগ করে মানবতা রক্ষার সমুজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
তথ্যসূত্র : বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড
Own the headlines. Follow now- Zoom Bangla Google News, Twitter(X), Facebook, Telegram and Subscribe to Our Youtube Channel