লাইফস্টাইল ডেস্ক : সমুদ্রসৈকত বা দ্বীপ বরাবরের মতই সবার প্রিয়। সমুদ্রের উত্তাল গর্জন আর শীতল বাতাস সবার হৃদয়ই শিহরিত করে। নিজের ভেতরে অন্যরকম রোমাঞ্চ তৈরি হয়। সমুদ্র আর নীল আকাশের অপূর্ব সমন্বয় লক্ষ্য করা যায় সেখানে। তাই তো শীত এলেই সেন্টমার্টিনে যাওয়ার আগ্রহ বাড়ে। নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত পর্যটকদের ভিড় লক্ষ করা যায় সেন্টমার্টিনে। চাইলে আপনিও যেতে পারেন। তবে যাওয়ার আগে কিছু তথ্য অবশ্যই জেনে নেবেন।
সেন্টমার্টিনের অবস্থান: সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। কক্সবাজার জেলা শহর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে সাগর বক্ষের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ সেন্টমার্টিন। এ দ্বীপ ৭.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং আয়তন প্রায় ৮ বর্গ কিলোমিটার। এ দ্বীপকে ‘নারিকেল জিঞ্জিরা’ও বলা হয়। মূল দ্বীপ ছাড়াও আরও একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ রয়েছে যা ‘ছেড়াদ্বীপ’ নামে পরিচিত।
সেন্টমার্টিনের বৈশিষ্ট্য: যেদিকে চোখ যায় শুধু নীল আর নীল। আকাশ আর সমুদ্রের নীল সেখানে মিলেমিশে একাকার। এখানে অগভীর দীর্ঘ সমুদ্রতট, সামুদ্রিক প্রবাল, সাগরের ঢেউয়ের ছন্দ সবাইকে মুগ্ধ করে। নান্দনিক নারিকেল গাছের সারি যেন চিরল পাতায় দোলা দিয়ে যায়। সাগরতীরে বাঁধা মাছ ধরার নৌকা-ট্রলার, সৈকতজুড়ে কাঁকড়া, ঝিনুক, গাঙচিল- এসবই সেন্টমার্টিন দ্বীপের বৈশিষ্ট্য। যা ছোট্ট এ দ্বীপকে করেছে অনিন্দ্যসুন্দর। স্বচ্ছ পানিতে জেলি ফিশ, হরেক রকমের সামুদ্রিক মাছ, কচ্ছপ এবং প্রবাল এ দ্বীপের অন্যতম আকর্ষণ।
যাওয়ার উপায়: ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে টেকনাফ গিয়ে সেখান থেকে সেন্টমার্টিন যেতে পারেন। ঢাকা থেকে টেকনাফ যায় বিভিন্ন পরিবহন। যেতে সময় লাগবে প্রায় ১১-১২ ঘণ্টা। বাসভেদে ভাড়া পড়বে ১,৫০০-২,৫০০ টাকা। তাছাড়া ঢাকা থেকে বিমানেও সরাসরি কক্সবাজার যাওয়া যায়। কক্সবাজার থেকে লোকাল বাসে টেকনাফ যাওয়া যায়। টেকনাফ থেকে শিপে সেন্টমার্টিন যেতে হয়। যেতে-আসতে ভাড়া পড়বে ৫৫০-১,৫০০ টাকা। জেটি ঘাট থেকে প্রতিদিন সকালে শিপ সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এবং সেন্টমার্টিন থেকে ফেরত আসে বিকালে। এছাড়া ট্রলারেও যাওয়া যায়।
যেখানে থাকবেন: সেন্টমার্টিনে থাকার জন্য বেশ কয়েকটি উন্নতমানের হোটেল ও কটেজ রয়েছে। তবে অবশ্যই আগে থেকে বুকিং দিয়ে যেতে হবে। নতুবা থাকার জন্য ভালো জায়গা পাওয়া যাবে না। থাকার জন্য উল্লেখযোগ্য কিছু হোটেল বা রিসোর্ট সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে যাবেন। এতে ভাড়া পড়বে রুমভেদে ১,৫০০-৫,০০০ টাকা।
খাওয়া-দাওয়া: পর্যটকদের খাবারের জন্য রয়েছে বেশ কিছু হোটেল ও রেস্তোরাঁ। এখানকার ডাব অবশ্যই খাবেন। বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ খেতে ভুলবেন না। হোটেল বা রিসোর্টে বারবিকিউ পার্টিও করতে পারেন। হোটেল বা রেস্তোরাঁয় খাওয়ার আগে একটু যাচাই করে নেবেন। কোনো কিছু খাওয়ার আগে অবশ্যই দরদাম করে নেবেন।
সতর্কতা: প্রবালের ওপর হাঁটার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। নতুবা পা কেটে যেতে পারে। ভাটার সময় বিচে না নামাই ভালো। যেহেতু সমুদ্রপথে যেতে হবে, তাই যাওয়ার আগে স্থানীয় আবহাওয়া সম্পর্কে ভালোভাবে তথ্য জেনে নেবেন।
বিধি-নিষেধ: সম্প্রতি সেন্টমার্টিনে ভ্রমণের ক্ষেত্রে কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে পরিবেশ অধিদফতর। সেগুলো হলো-
১. দ্বীপের সৈকতে সাইকেল, মোটরসাইকেল, রিকশা, ভ্যানসহ কোনো ধরনের যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক বাহন চালানো যাবে না।
২. দ্বীপের সৈকত, সমুদ্র এবং নাফ নদীতে প্লাস্টিক বা কোনো ধরনের বর্জ্য ফেলা যাবে না।
৩. পশ্চিম দিকের সৈকতে কোনাপাড়ার পর দক্ষিণ দিকে এবং পূর্ব দিকের সৈকতে গলাচিপার পর দক্ষিণ দিকে যাওয়া যাবে না।
৪. দ্বীপের চারপাশে নৌ-ভ্রমণ করা যাবে না। এমনকি জোয়ার-ভাটা এলাকায় পাথরের ওপর দিয়ে হাঁটা যাবে না।
৫. সামুদ্রিক কাছিমের ডিম পাড়ার স্থানে চলাফেরা, রাতে আলো জ্বালানো এবং ফ্ল্যাশলাইট ব্যবহার করে ছবি তোলা যাবে না।
৬. সৈকতে রাতের বেলা কোনো ধরনের আলো বা আগুন জ্বালানো, আতশবাজি ও ফানুস ওড়ানো যাবে না।
৭. সৈকতে মাইক বাজানো, হৈ-চৈ এবং উচ্চস্বরে গান-বাজনা কিংবা বারবিকিউ পার্টি করা যাবে না।
৮. ছেঁড়াদ্বীপে স্পিডবোট, কান্ট্রি বোট, ট্রলার কিংবা অন্যান্য জলযানে যাতায়াত কিংবা নোঙর করা যাবে না।
৯. সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে সরকারের অধিগ্রহণ করা ছেঁড়াদ্বীপ ভ্রমণ করা যাবে না।
১০. প্রবাল, শামুক, ঝিনুক, কচ্ছপ, পাখি, তারা মাছ, রাজকাঁকড়া, ঘাস, শৈবাল এবং কেয়া ফল সংগ্রহ ও কেনা যাবে না।
১১. জাহাজ থেকে গাঙচিল বা কোনো ধরনের পাখিকে চিপস বা অন্য কোনো খাবার খাওয়ানো যাবে না।
১২. দ্বীপে সুপেয় পানির পরিমাণ সীমিত হওয়ায় সব সময় পানির অপচয় রোধ করতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।