জুমবাংলা ডেস্ক : অনলাইনে অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসার মূলহোতা সেলিম প্রধানকে গ্রেফতারের পর একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। সর্বমহলে নানা গুঞ্জন ও আলোচনা চলছে, কে এই সেলিম প্রধান? অনুসন্ধানে দেখা গেছে বিএনপি সরকারের সময় সেলিম প্রধানের উত্থান। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মতিনের সময় তার প্রভাব বিস্তার শুরু হয়।
বাংলাদেশে প্রথম বেসরকারি খাতে সেলিম প্রধান সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস তৈরি করেন। সেলিম প্রধানের জাপান-বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড পেপারসে বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই ছাপা হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অফিসের নথিপত্রও ছাপানো হয়। ব্যাংকসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানে একক আধিপত্য ছিল সেলিম প্রধানের। তার প্রতিষ্ঠানই ৯৫ ভাগ কাজ পেত। ঐ সময় তারেক রহমানের আস্থাভাজন এবং অফিস প্রধানসহ এক শ্রেণির আমলা ও মন্ত্রীদের মনোরঞ্জনের জন্য সুন্দরী নারী সরবরাহ করতেন সেলিম প্রধান। এর বিনিময়ে কোটি কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নিতেন। সেলিমের কাছে একটিমাত্র ব্যাংকের পাওনা প্রায় ১০০ কোটি টাকা। আরো ব্যাংক থেকে তিনি ঋণ নিয়েছেন—এ বিষয়টি অনুসন্ধান চলছে। প্রভাব খাটিয়ে একচেটিয়া ব্যবসা করার পাশাপাশি সুন্দরী নারী সাপ্লাই দিয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন মাফিয়া ডন। তার প্রোফাইল নিয়ে কাজ করা গোয়েন্দা বাহিনীর একজন কর্মকর্তা জানান, সেলিম প্রধান ভয়ংকর বিপজ্জনক। এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তিনি করেননি।
সেলিম প্রধান একজন ঋণখেলাপি এবং বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচারকারী। তিনি জাপান থেকে অর্থায়ন করে প্রিন্টিং প্রেস করেছেন বলে তার আয়কর বিবরণীতে উল্লেখ আছে। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসলে সরকারের একাধিক নেতা ও মন্ত্রীর সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। আওয়ামী লীগ ঘরানার দুই জন প্রভাবশালী নেতা তার ব্যাবসায়িক পার্টনার। এটা কাজে লাগিয়ে তিনি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। অভিযোগ আছে, ঋণের অধিকাংশ অর্থই তিনি ব্যাংককে পাচার করেন এবং সেখানে তিনি বিলাসবহুল জীবনযাপন শুরু করেন। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে তার যোগসাজশ থাকার কারণে তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন। ব্যাংককে অবস্থান করলেও গত দুই বছর ধরে সেলিম প্রধান অনলাইন ক্যাসিনো ব্যবসা শুরু করেছিলেন। বিশ্বব্যাপী যে অনলাইন ক্যাসিনো সেটার বাংলাদেশ শাখা চালু করেছিলেন তিনি। অনলাইন ক্যাসিনো সিন্ডিকেট বাংলাদেশের প্রধান হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন তিনি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাসে অন্তত ১০০ কোটি টাকা ব্যাংককসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করেছেন। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে তার সম্পর্ক রয়েছে। তাদের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়েই সেলিম প্রধান অবাধে ক্যাসিনো ব্যবসা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অবৈধ এসব ব্যবসা ছাড়াও চাঁদাবাজি থেকেও কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন তিনি। তার মধ্যে রাজশাহীসহ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল সীমান্তে ভারতীয় গবাদিপশুর সব খাটাল ও মা দক সিন্ডিকেটগুলো থেকেই তিনি আয় করেছেন প্রায় ২০ কোটি টাকা। আর এই টাকা আয় করেছেন দুই বছরেই। থাই এয়ারওয়েজে করে ব্যাংকক যাওয়ার সময় সোমবার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ থেকে সেলিম প্রধানকে আটক করে র্যাব। পরে তাকে নিজেদের হেফাজতে নেয় র্যাব। এরপর তার কাছ থেকে তথ্য নিয়ে অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীটি।
সেলিম প্রধানের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার মুর্তুজাবাগে। তার বাবার নাম আব্দুল হান্নান ওরফে নান্নু মিয়া। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার বড়ো সেলিম। গাজীপুরের ছায়াবীথিতে খোয়াব নামক রং মহলে তারেক রহমান গংদের মনোরঞ্জনের জন্য সুন্দরী নারী সাপ্লাই দিতেন সেলিম। উল্লেখ্য, গাজীপুরে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যার পর উত্তেজিত জনতা আলোচিত খোয়াব নামক রং মহলটি পুড়িয়ে দেয়।
জিজ্ঞাসাবাদে সেলিম প্রধান অনেক কিছু স্বীকার করেছেন। তার রাশিয়া, জাপান, থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশে একজন করে মোট চার জন স্ত্রী রয়েছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গ্রেফতারকৃত ক্রিকেট বোর্ড ও মোহামেডান ক্লাবের পরিচালক লোকমান হোসেন ও তার দুই জন ব্যাবসায়িক পার্টনারের মাধ্যমে ওয়ান্ডার্স ক্লাবের সহসভাপতি পদও বাগিয়ে নেন। এই ক্লাবেও সেলিমের বড়ো ক্যাসিনো ব্যবসা। সূত্র : ইত্তেফাক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।