বাংলাদেশে সোনার দাম এখন এমন এক শিখরে পৌঁছেছে যা শুধু দেশের ইতিহাসেই নয়, বিশ্ববাজারের সাম্প্রতিক দরের চেয়েও উঁচুতে অবস্থান করছে। অনেকের কাছে এটা অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, কিন্তু বাস্তবতা হলো, বর্তমানে দেশের বাজারে এক ভরি স্বর্ণের দাম এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যা মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে সোনার দাম: বিশ্ববাজারের চেয়েও বেশি কেন?
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের স্পট মার্কেটে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম প্রায় ৩ হাজার ৩২৮.৩০ ডলার বা ৪ লাখ ২ হাজার ৭২৪ টাকা। অথচ বাংলাদেশে এক আউন্স স্বর্ণের দাম দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৫৪৮ টাকা। অর্থাৎ প্রায় ৪৪ হাজার ৮২৪ টাকা বেশি! এই অস্বাভাবিক ব্যবধান কেবল বৈশ্বিক চাহিদা-বৃদ্ধি বা ডলারের বিনিময় হার দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না।
Table of Contents
বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) জানিয়েছে, ২২ ক্যারেট স্বর্ণের প্রতি গ্রাম মূল্য এখন ১৪ হাজার ৩৮৯ টাকা। এর ভিত্তিতে এক ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম হয়েছে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৮৩৩ টাকা, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এই দর কয়েক দিনের ব্যবধানে দুইবার বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণ এবং সাধারণ মানুষের প্রভাব
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ডলারের মূল্য বৃদ্ধি, বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা, মার্কিন শুল্কনীতি এবং স্থানীয় কর কাঠামোর পরিবর্তন স্বর্ণের দামে প্রভাব ফেলছে। Wikipedia অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম সাধারণত নির্ধারিত হয় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সময়, কারণ মানুষ নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সোনার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
তবে শুধু বৈশ্বিক প্রভাব নয়, দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার ব্যবস্থাপনাতেও অসংগতি রয়েছে। একদিকে জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা বলছেন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণে দেশের দামও বাড়ছে, অন্যদিকে গ্রাহকরা বলছেন ব্যবসায়ীদের কারসাজি এর জন্য দায়ী।
স্বর্ণের বাজার পরিবর্তন নিয়ে বাজুসের একাধিক ঘোষণা সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করছে। গত ১৬ এপ্রিল দাম ভরিতে ৩ হাজার ৩৩ টাকা বাড়ানো হয়েছিল, এরপর আবার ২ হাজার ৬২৪ টাকা বাড়ানো হয় মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে।
ভারতের পরিস্থিতি: পুরাতন গয়না বিক্রি করে নতুন কেনার প্রবণতা
ভারতেও সোনার দাম রেকর্ড ছুঁয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্কারোপ এবং বিশ্ববাজারে উত্তেজনার প্রভাব সেখানে পড়েছে। আউন্স প্রতি দাম ৩২৪৫ ডলারে পৌঁছেছে। ভারতের খুচরা বাজারে এখন পুরাতন গয়না বিক্রি করে নতুন কেনা একটি সাধারণ চিত্র।
কুমার জৈন নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, “মানুষের হাতে পর্যাপ্ত টাকা নেই, তাই তারা পুরাতন গয়না দিয়ে নতুন কেনার চেষ্টা করছেন।” এটি এখন বিয়ের মৌসুমে একটি বিশ্ববাজারের প্রভাব হিসেবে দৃশ্যমান।
বাংলাদেশে স্বর্ণের চাহিদা ও ভবিষ্যতের পূর্বাভাস
গোল্ডম্যান স্যাকস পূর্বাভাস দিয়েছে ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ প্রতি আউন্স সোনার দাম ৩৭০০ ডলার ছুঁতে পারে। এই পূর্বাভাস যদি সত্যি হয়, তাহলে বাংলাদেশের বাজারে আরও বড় দামের ধাক্কা আসতে পারে। এদিকে বাজুসের মতে, চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম বাড়ানো হয়েছে, যদিও অনেকেই তা মানতে নারাজ।
বিশেষ করে বিয়ের মৌসুমে স্বর্ণের চাহিদা সাধারণত বেড়ে যায়, আর এই সময়েই মূল্য বৃদ্ধির ঘটনা ক্রেতাদের চাপে ফেলে দেয়। বহু মানুষ এখন গয়না কিনতে গেলে পুরাতন গয়না বিক্রি অথবা মেরামতের দিকে ঝুঁকছেন।
স্বর্ণ কেনার পরামর্শ
বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণ কেনা ঠিক হবে কি না, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। যারা সোনা বিনিয়োগ হিসেবে রাখতে চান, তাদের উচিত সময় বুঝে বিনিয়োগ করা। তবে ক্রয় করার সময় অবশ্যই খাঁটি স্বর্ণের সার্টিফিকেট নিশ্চিত করা জরুরি।
এছাড়াও, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় যারা স্বর্ণ কিনতে চান তাদের উচিত বর্তমান উচ্চমূল্যে না গিয়ে দাম কিছুটা কমার অপেক্ষা করা। বাজার অস্থির হলেও দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গিতে বিনিয়োগ সঠিক হতে পারে।
FAQs: সোনার দাম নিয়ে সাধারণ প্রশ্ন
বর্তমানে বাংলাদেশে এক ভরি স্বর্ণের দাম কত?
বর্তমানে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের এক ভরি দাম ১ লাখ ৬৭ হাজার ৮৩৩ টাকা, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
কেন বিশ্ববাজারের তুলনায় বাংলাদেশে সোনার দাম বেশি?
এর পেছনে রয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার, শুল্কনীতি, চাহিদা বৃদ্ধি ও স্থানীয় বাজার ব্যবস্থাপনার কিছু অসংগতি।
ভারতের স্বর্ণ বাজারে কী ধরনের পরিবর্তন হয়েছে?
ভারতে পুরাতন গয়না বিক্রি করে নতুন কেনার প্রবণতা বেড়েছে, বিশেষ করে বিয়ের মৌসুমে।
সোনার ভবিষ্যৎ মূল্য কেমন হতে পারে?
গোল্ডম্যান স্যাকস পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ প্রতি আউন্স সোনার দাম ৩৭০০ ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
এখন স্বর্ণ কিনে বিনিয়োগ করা কতটা উপযুক্ত?
উচ্চমূল্যে ঝুঁকি বেশি হলেও দীর্ঘমেয়াদে সোনা নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হয়।
স্বর্ণ কেনার সময় কী বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে?
স্বর্ণের খাঁটি সার্টিফিকেট, ক্যারেট মান, এবং বিক্রেতার বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করা জরুরি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।