বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মার্ক জাকারবার্গ দিনের অধিকাংশ সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই ব্যয় করেন। কিন্তু না, সাধারণ মানুষ যেভাবে স্ক্রল করতে করতে সময় অপচয় করেন, জাকারবার্গ তা করেন না। ইনস্টাগ্রাম রিল দেখতে দেখতে দিন পার করে দেন না কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যা-ই কন্টেন্ট আসে, তাতেই মগ্ন হয়ে যান না তিনি।
কারণ জাকারবার্গ মনে করেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যখন আক্ষরিক অর্থেই যোগাযোগের কাজে ব্যবহৃত হয়, তখনই এর সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবহার হয়। সম্প্রতি জো রোগান এক্সপেরিয়েন্স পডকাস্টে এ বিষয়ে কথা বলেন মেটার সিইও। সেখানে তিনি জানান, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটারের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহারকারীদের সত্যিকারে উপকারে আসতে পারে, যদি এর সঠিক ব্যবহার করা হয়। কিন্তু প্রাথমিকভাবে, এগুলো মানুষের সাথে যোগাযোগের কাজেই ব্যবহার করা উচিত।
“আপনি যদি শুধু এখানে বসে থাকেন আর যা দেখানো হবে, তাই গলাধঃকরণ করেন, তাহলে তো হবে না। এটা একেবারে খারাপই হবে তা বলছি না। কিন্তু মানুষের সাথে সম্পর্ক-যোগাযোগ তৈরি করলে যতটা ইতিবাচক ফলাফল পাবেন ততটা আপনি সেভাবে পাবেন না।”, বলেন এই বিলিয়নিয়ার।
তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অতি-ব্যবহারকে শুধু যে জাকারবার্গই অনুৎসাহিত করেছেন তা নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার কোনো কোনো ব্যবহারকারীর মধ্যে হতাশা ও উদ্বিগ্নতা তৈরি করতে পারে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা এও বলেছেন, এটা তখনই হয় যখন কেউ শুধুমাত্র স্ক্রলিং করে যায় এবং অন্য কারো সাথে কোনো মিথস্ক্রিয়া করে না ওই প্ল্যাটফর্মে।
২০১৯ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের করা একটি গবেষণায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে- “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের বেলায়ও একটি রুটিন মেনে চলতে হবে। এমন সব কন্টেন্টের সাথে যুক্ত করতে হবে নিজেকে যেগুলো মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং সামাজিক উৎকর্ষতার সাথে জড়িত।”
কিন্তু মানুষ যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে বা অস্বাস্থ্যকর কোনো আবেগীয় সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে, তখন তা হিতে বিপরীত হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে না থাকলে কিছু না কিছু বাদ পড়ে যাবে, কোনো একটা খবর জানতেই পারবো না অথবা বন্ধুদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবো- এমন চিন্তা থেকে যদি কেউ অনেক বেশি সময় দেয় অ্যাপগুলোর পেছনে, তাহলে এটি ব্যক্তির উপর বাজে প্রভাব ফেলে বলে জানান গবেষণার একজন লেখক, মেসফিম অ্যাওয়েক বেকালু।
আর সে কারণেই জাকারবার্গ দাবি করেছেন, ফেসবুক ও মেটাভার্স নিয়ে তার লক্ষ্য, মানুষকে আরও বেশি সময় ইন্টারনেট ব্যয় করতে দেওয়া নয়, বরং তিনি চান সবাই ইতিবাচক কোনো কাজে যুক্ত হওয়ার জন্য ইন্টারনেটে সক্রিয় থাকুক।
“আমি চাই না মানুষ কোনো কারণ ছাড়াই কম্পিউটারের সামনে বসে সময় পার করুক। স্ক্রিনে যে সময়টা দিচ্ছে তা যেন সঠিক ব্যবহার হয় এটাই চাই”, বলেন জাকারবার্গ।
অবশ্যই জাকারবার্গকে এই মন্তব্যের জন্য প্রচুর সমালোচনার শিকার হতে হয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম একটা ‘নেশার মতো’ এবং ক্ষতিকর; বিশেষ করে টিনেজার ও শিশুদের জন্য। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা যেন অতিরিক্ত সময় না দেন, তার জন্য কিছু ফিচার যুক্ত করেছে অ্যাপগুলো। ব্যবহারকারীরা কতটা সময় ব্যয় করছেন তা রেকর্ড করে রেখে সেই সময় তাদেরকে লগ অফ করতে বা মিউট রাখতে বলে নোটিফিকেশন দেওয়া, এরকম বিভিন্ন পরিবর্তন নিয়ে আসছে তারা।
পুরোপুরি মেটাভার্স তৈরি করতে এখনো অনেকটা সময় বাকি, কিন্তু জাকারবার্গ জানিয়েছেন, মেটা ইতোমধ্যেই ভার্চুয়াল জগতে ইতিবাচকতা ছড়ানোর কাজে লেগে পড়েছে। মেটার এই উদ্যোগের ফলে সবচেয়ে বেশি সংযোগ স্থাপন করা পোস্টগুলো আলাদা করে দেখা যাবে, কিন্তু সেখানে অ্যাংগ্রি রিঅ্যাক্টগুলোকে ধরা হবে না।
জাকারবার্গ বলেন, “যদি কেউ অ্যাংগ্রি রিএকশন দেয় তাহলে আমরা সেটাকে গোণায় ধরি না, আমরা এই রিএক্টকে আরও বেশি ছড়াতে চাই না।”
সূত্র: সিএনবিসি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।