২০১৭ সালের ২১ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ড থেকে একটি সূর্যগ্রহণ দেখা গিয়েছিল। সেটা দেখতে ওয়াইওমিং স্টেটে গিয়েছিলাম। তখনই ২০২৪ সালে আবার যে আরেকটি সূর্যগ্রহণ হবে, তা নিয়ে ভেবেছিলাম; ভেবেছিলাম তা অনেক দূর সময়ের ব্যাপার। কিন্তু দেখতে দেখতে সাতটি বছর কেটে গেল, মনে হয় চোখের পলকে, তবে মাঝখানে ছিল কোভিড মহামারির জন্য হারানো কয়েকটি বছর।
বর্তমানে বিভিন্ন কারিগরি মাধ্যমের উন্নয়নের ফলে, যার মধ্যে শুধু সূর্যকে বিশেষভাবে জন্য দেখার জন্য পার্কার সোলার প্রোব, সোলার অ্যান্ড হেলিওস্ফিয়ার অবজারভেটরিসহ (SOHO) বেশ কয়েকটি স্যাটেলাইট সক্রিয় রয়েছে, সেখানে সূর্যগ্রহণের বৈজ্ঞানিক ভূমিকা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে।
এসব স্যাটেলাইট করোনাগ্রাফ নামে একটি যন্ত্র দিয়ে সূর্যকে কৃত্রিমভাবে ঢেকে ওপরের করোনাকে পর্যবেক্ষণ করে। তবু এসব করোনাগ্রাফ সূর্যের ঠিক ওপরে করোনা কী রকম আচরণ করে, তা ধরতে পারে না। তাই করোনা গবেষণার জন্য সূর্যের পূর্ণ গ্রাস এখনো গুরুত্বপূর্ণ। এখানে অতীতে দুটি বিরাট বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারে সূর্যগ্রহণের ভূমিকা উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না। একটি হলো ১৮৬৮ সালে, পূর্ণ গ্রহণের সময়ে সূর্যের ক্রোমোস্ফিয়ারের বর্ণালি বিশ্লেষণ করে ফরাসি বিজ্ঞানী পিয়ের জ্যানসেন হিলিয়ামের বিকিরণ আবিষ্কার করেন।
এই গ্রহণ দেখতে জ্যানসেন ভারতের গুন্টুর শহরে (বর্তমানে অন্ধ্র প্রদেশে) ভ্রমণ করেন। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ অবদানটি হলো আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতাকে প্রমাণ করা। এ উদ্দেশ্যে ১৯১৯ সালের একটি পূর্ণ গ্রাসকে ব্যবহার করার জন্য কেমব্রিজ ও গ্রিনউইচ মানমন্দির থেকে দুটি দলকে পশ্চিম আফ্রিকার একটি দ্বীপ প্রিন্সিপে এবং ব্রাজিলের সব্রাল শহরে পাঠানো হয়।
এই দুটি দল গ্রহণের সময় সূর্যের পেছনে থাকা কিছু তারার ছবি তুলতে পারে এবং প্রমাণ করে যে সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ ক্ষেত্র তারাদের থেকে বিকিরিত আলোর গতিপথ স্থান-কালের বক্রতায় পরিবর্তন করেছে আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব অনুযায়ী।
দেখা গেল, মেঘের স্তরও ফিল্টারের মতো কাজ করল। কাজেই যাঁদের ফিল্টার ছিল না, তাঁরাও এ আংশিক গ্রহণ অনুসরণ করতে পারলেন। এরপর যখন পূর্ণ গ্রহণ হলো, তখন মেঘ সরে গিয়েছিল। সেই সময়ের অনুভূতি এত প্রণোদনাময় ছিল যে স্টেডিয়ামজুড়ে জনতা করতালিতে ফেটে পড়েছিল। মনে পড়ে, ওই সময় দিগন্ত থেকে বজ্রপাতের শব্দ ভেসে আসছিল। বলা বাহুল্য, এ রকম একটা মহাজাগতিক মুহূর্তকে তা আরও নাটকীয় করে তুলেছিল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।