জুমবাংলা ডেস্ক : চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার তালতলী গ্রামের মৃত রাজ্জাক সরকারের মেয়ে মালা আক্তার। ১৭ বছর আগে কাজের সন্ধানে সৌদি আরব পাড়ি জমিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে প্রবাসে গেলে হয়তো কর্মের সন্ধান পাবেন এবং জীবনমান উন্নত হবে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, সৌদি আরবের রিয়াদে আবদুর রহমান নামে একজনের বাসায় ১৭ বছর বিনাবেতনে কাজ করার পর গত ৪ মাস আগে তাকে শূন্য হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে।
জানা গেছে, গৃহবন্দি হয়ে বিনাবেতনে কাজ করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছিলেন মালা। তাই গত ৫ বছর ধরে দেশে আসার জন্য মালিককে অনুরোধ করেন তিনি। পাঁচ বছর পর মালিক তাকে অনুমতি দেন। তবে মালার ১৭ বছরের পরিশ্রমের পাওনা ৮০ হাজার রিয়াল (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৯ লাখ টাকা) দিতে রাজি হয়নি আবদুর রহমান।
দেশে আসার পর মালা আক্তার বিভিন্নভাবে তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। এরপর গত ৩ মাস আগে মতলব উত্তর উপজেলার এসিল্যান্ড মো. হেদায়েত উল্লাহর কাছে সৌদি দূতাবাস থেকে মালার তথ্য চাওয়া হয়। তিনি তথ্য দিয়ে সৌদি দূতাবাসকে মালার পাওনা টাকা বুঝিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন।
সর্বশেষ মঙ্গলবার (৭ জুন) মালার একাউন্টে রেমিট্যান্স বোনাসসহ প্রায় সাড়ে ১৯ লাখ টাকা জমা হয়। হেদায়েত উল্লাহ এই তথ্য জানার পর মালা আক্তারকে তার কার্যালয়ে ডেকে এ খবর জানান। এতে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মালা।
হেদায়েত উল্লাহ বলেন, আমার কাছে সৌদি দূতাবাস থেকে কল আসার পর অনেক খোঁজাখুঁজি করে মালার তথ্য সংগ্রহ করি। এরপর ওনার সমস্ত তথ্য সৌদি দূতাবাসে দিই। তার পাওনা টাকা নিয়ে আমি বহুবার কথা বলেছি।সর্বশেষ গত ৬ জুন তাদের সঙ্গে কথা হলে তারা (সৌদি দূতাবাস) জানান মালার টাকা পাঠানো হয়েছে। অনেক চেষ্টার পর ওনার পরিশ্রমের টাকা পাওয়ায় আমি আনন্দিত। হয়তো আমার প্রচেষ্টায় টাকাটা পেয়েছেন, তবে এটা ওনার দীর্ঘ ১৭ বছরের প্রবাস জীবনের পারিশ্রমিক।
তিনি আরও বলেন, ওনার এই টাকা যাতে অপব্যবহার না হয় সেদিকটাও এখন দেখার বিষয়। আমরা চেষ্টা করব, যাতে ওনার কষ্টার্জিত এই টাকা সঠিকভাবে ব্যবহার হয়।
মালা আক্তার (৫২) সাংবাদিকদের বলেন, আমি অনেক চেষ্টা করছি টাকা পাওয়ার জন্য। সৌদি আরবে বাঙালিরা আমাকে সহযোগিতা করলে সহজেই পেয়ে যেতাম। অসহায় হয়ে দেশে চলে আসছি। দেশে এসেও অনেক যোগাযোগ করার পর কোনো পাত্তা পাইনি। অবশেষে এসিল্যান্ড স্যারের চেষ্টায় আমি টাকা পেয়েছি। আমি এখন খুবই খুশি। স্যার অনেক ভালো মানুষ, আল্লাহ তার ভালো করুক।
মালা আক্তারের ভাই খোকন সরকার বলেন, আমরা তো ভাবতেই পারছিলাম না আমার বোন কখনও ফিরে আসবে। দেখতে দেখতে ১৭টি বছর পার হয়ে গেছে। আমি আমার বোনকে পেয়ে খুবই আনন্দিত। এসিল্যান্ড স্যারের সহায়তায় আমার বোন তার পরিশ্রমের টাকা ফিরে পেয়েছে, তাই আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।