জুমবাংলা ডেস্ক : স্থানীয় সরকারের আওতাধীন এলাকার কর-রাজস্ব আদায়ের অধিকারী হবে শুধু ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন। এসব প্রতিষ্ঠানের হাতে বাড়ি, ব্যবসার পাশাপাশি ব্যক্তিগত, করপোরেট কর ও ভ্যাট আদায়ের ক্ষমতা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এই তিন প্রতিষ্ঠানের বাইরে জেলা ও উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম চলবে সরকারি সহায়তায়। এরা যথা নিয়মে ফি, নিজস্ব সম্পত্তির আয় পাবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের করা স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রাথমিক প্রতিবেদনে এই সুপারিশ উঠে এসেছে। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদকে প্রধান করে গত ১৮ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে আট সদস্যের স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্থানীয় সরকারের বর্তমান অর্থায়ন ব্যবস্থায় অস্বচ্ছতা, বৈষম্য এবং তদবিরনির্ভর নানা দুর্নীতি রয়েছে। তা দূর করার জন্য কর রাজস্ব, সরকারি অনুদান বা হস্তান্তর, প্রকল্পভিত্তিক অর্থায়ন ও উন্নয়ন সহায়তা নীতির আমূল পরিবর্তন দরকার।
যেসব কর আদায় করবে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান : স্থানীয় সরকারকে কর আদায়ে আরও বিস্তৃত ক্ষমতা দেওয়ার সুপারিশ করে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাড়ি বা ব্যবসার পাশাপাশি তারা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ব্যক্তিগত ও কর্পোরেট আয়কর এবং মূল্য সংযোজন কর আদায়ে সহযোগিতার মাধ্যমে আদায়কৃত করের একটি অংশ পেতে পারে; এজন্য স্থানীয় সরকার কর সংক্রান্ত তফসিলে সংশোধনী আনতে হবে।
পর্যটন-সমৃদ্ধ এলাকায় পর্যটন কর আরোপের ক্ষমতাও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া যেতে পারে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। হোল্ডিং কর আদায় না করাকে বেআইনি ঘোষণা করার সুপারিশ করে সংস্কার কমিশন বলেছে, একাদিক্রমে তিন অর্থবছরে কর পরিশোধের যোগ্য অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ বাড়ি থেকে কর আদায় করতে না পারলে ওই পরিষদের উন্নয়ন সহায়তা স্থগিত করতে হবে।
স্থানীয় এলাকায় জীবাস্ম জ্বালানি ব্যবহার করে এমন পেশা ও ব্যবসায় এবং পরিবেশগত ঝুঁকি সৃষ্টিকারী যে কোনো পেশা ও ব্যবসায় নিজস্ব পণ্য ও সেবা যা পরিবেশগত ঝুঁকি তৈরি করে তার ওপর পরিবেশগত কর আরোপ করতে পারবে স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠান। পরিবেশ ও স্থানীয় সরকারের পরিবেশগত ঝুঁকি বিবেচনায় স্থানীয় সরকারের আওতাধীন এলাকায় বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে যে কোনো ধরনের ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ওপর কর ধার্য করতে হবে।
এ ছাড়া নিকাহ নিবন্ধন ফি তিন ভাগে ভাগ করে স্থানীয় সরকার, নিকাহ নিবন্ধক ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে বণ্টন করার সুপারিশ করেছে স্থানীয় সরকার সম্পর্কিত সংস্কার কমিশন। জানা গেছে, সরকারের নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদকে রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে ৬টি বিষয়ের ওপর কর, রেট, ফি ইত্যাদি আরোপ ও আদায়ের ক্ষমতা দেওয়া হয়।
এগুলো হলো- (১) হোল্ডিং ট্যাক্স, (২) পেশা, ব্যবসা এবং বৃত্তি (কলিং) এর ওপর কর; (৩) সিনেমা, নাটক, থিয়েটার প্রদর্শনী এবং অন্যান্য আপ্যায়ন এমন ধরনের প্রমোদ কর; (৪) পরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত লাইসেন্স এবং পারমিটের জন্য ফি; (৫) ইউনিয়নের সীমানার মধ্যে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হাটবাজার এবং (৬) ফেরি হতে ফি (লিজ মানি)।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দায়িত্ব অনুযায়ী আয়ের পথ সুগম করতে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) অধ্যাদেশ, ১৯৮৩-এর ৫৩ ধারা অনুযায়ী জেলা প্রশাসকের অনুমোদন লাভের পর ইউনিয়ন পরিষদকে কর আরোপ ও আদায়ের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আবার সরকার আদর্শ কর তফসিল প্রণয়ন করতে পারে। কর তফসিল প্রণীত হলে ইউনিয়ন পরিষদ আদর্শ কর তফসিল অনুযায়ী কর, রেট, ফি ধার্য করতে পারবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।