জুমবাংলা ডেস্ক: স্পেনে গৃহযুদ্ধকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মহড়া হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। স্পেনীয় রাজতন্ত্রে জন্ম নিয়েছিল কিছু দুর্বলতা। যা স্পেনকে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে পরিণত করে। এই ঘটনাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- রাজা আলফানসোর ক্ষমতাচ্যুতি, রিভেরার সামরিক একনায়কত্ব, প্রজাতন্ত্রী ও সমাজতন্ত্রীদের নির্বাচনী সাফল্য এবং দক্ষিণপন্থী জোটের প্রতিক্রিয়া স্পেনের রাজনীতিতে অস্থিরতার সৃষ্টি। সেই সময়ে পপুলার ফ্রন্ট ও ফ্যাসিবাদী সেনাপতি ফ্রাঙ্কোর প্রতিযোগিতার ফল হিসেবে শুরু হয় ‘স্পেনে গৃহযুদ্ধ’(১৯৩৬-১৯৩৯ খ্রি.)।
প্রজাতন্ত্রকে উৎখাত করে আবার পুরনো ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য জুলাই, ১৯৩৬-এ যখন ফ্রাঙ্কো তার মরক্কোর সেনাবাহিনী নিয়ে স্পেনে পৌঁছেছিলো, তখন গোড়ায় ভাবা গিয়েছিলো ফ্রাঙ্কোর ফ্যাসিবাদীদের পক্ষে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে হারানো সম্ভব হবে না।
স্পেনের কৃষক ও শ্রমিকগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের অধিকারকে রক্ষা করবার জন্য একজোট হয়েছিলেন এবং আশা করা হয়েছিলো যে পাশ্চাত্য গণতন্ত্রগুলো_ বিশেষ করে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স_ কিছুতেই মুখ বুজে ফ্রাঙ্কোর এই স্পর্ধাকে কিছুতেই সহ্য করবে না। কিন্তু প্রথম উত্তেজনা কেটে যেতেই দেখা গেল নন-ইন্টারভেনশনের খোলসের ভেতর ঢুকে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স পরোক্ষভাবে ফ্রাঙ্কোকেই সাহায্য করেছে। আর ফ্রাঙ্কোকে মদত দেওয়ার জন্য ইতালি ও জার্মানি সরাসরি যুদ্ধে নেমে পড়েছে। ফলে গৃহযুদ্ধ চলাকালীন বোঝা গেল যে স্পেনের গৃহযুদ্ধ আসলে ছিলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মহড়া।
মোট মৃত্যুসংখ্যা বিতর্কিত। ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ গৃহযুদ্ধের ইতিহাসে এন্টোনি বিভোর্ লিখেছেন, ফ্রাঙ্কোর শ্বেত সন্ত্রাসের ফলে দুই লাখ এবং লাল সন্ত্রাসে ৩৮ হাজার হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।
জুলিয়াস রুজ একমত হয়েছেন যে, ‘যদিও সংখ্যা সম্পর্কে বিতর্ক আছে, প্রজাতান্ত্রিক অঞ্চলে ৩৭,৮৪৩ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় এবং ফ্রাঙ্কোর অধিকৃত স্পেনে সর্বোচ্চ দেড় লাখ মানুষকে হত্যা করা হয় তার মধ্যে যুদ্ধের পরে হত্যা করা হয় ৫০ হাজার মানুষকে।
২০০৮ সালে একজন স্প্যানিশ জজ বালতসার গার্জন, ১৭ জুলাই ১৯৩৬ থেকে ডিসেম্বর ১৯৫১ পর্যন্ত ১ লাখ ১৪ হাজার ২৬৬ জনকে হত্যা ও গুম হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। সেসব হত্যার ভেতরে কবি ও নাট্যকার ফেদেরিকো গারসিয়া লোরকার হত্যার বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদনও ছিলো। স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধের শুরুর দিকে জাতীয়বাদী কর্মীরা তাকে হত্যা করে, তার লাশ আর কখনও পাওয়া যায়নি। তাকে স্পেনে ‘জনগণের কবি’ বলে ডাকা হয়।
ঐতিহাসিক ল্যাংসাম, স্পেনের এই গৃহযুদ্ধকে ‘ক্ষুদে বিশ্বযুদ্ধ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ঐ যুদ্ধে প্রাং ১০ লাখ মানুষের প্রাণ হানি হয়। এই যুদ্ধ আন্তর্জাতিক রাজনীতিও উতপ্ত করে দিয়েছিল।
সূত্র: জাম্প ম্যাগাজিন, উইকিপিডিয়া ও অন্যান্য
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।