দেশজুড়ে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, মুদ্রাস্ফীতি এবং বৈশ্বিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে স্বর্ণের দাম এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। আজ ২০ এপ্রিল ২০২৫, বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) ঘোষণা করেছে যে, দেশের বাজারে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম ২ হাজার ৬২৪ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে সর্বোচ্চ ১,৬৭,৮৩৩ টাকায় বিক্রি হবে। এ এক রেকর্ড মূল্য যা দেশের ইতিহাসে আগে কখনো দেখা যায়নি।
স্বর্ণের দাম / সোনার দাম আজ কত এবং কেন বাড়ছে?
বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারে স্বর্ণের চাহিদা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গেছে, যা সোনার দাম বাড়ার অন্যতম প্রধান কারণ। বাজুস তাদের বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে যে, শুধু মাত্র গত এক সপ্তাহেই দ্বিতীয়বারের মতো মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে। স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে প্রতি ভরিতে ২ হাজার ৬২৪ টাকা, যা ২২ ক্যারেটের ক্ষেত্রে এখন ১,৬৭,৮৩৩ টাকা।
Table of Contents
এছাড়া অন্যান্য ক্যারেট অনুযায়ী স্বর্ণের দাম নিম্নরূপ:
- ২১ ক্যারেট – ১,৬০,২০৫ টাকা
- ১৮ ক্যারেট – ১,৩৭,৩০৯ টাকা
- সনাতন পদ্ধতি – ১,১৩,৪৯১ টাকা
সোনার দামের বৃদ্ধি অবশ্য শুধুমাত্র স্বর্ণের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ। রুপার দাম আগের মতই অপরিবর্তিত রয়েছে। ২২ ক্যারেট রুপা বিক্রি হচ্ছে ২,৫৭৮ টাকায়।
বাংলাদেশে স্বর্ণের/সোনার বাজারে পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক বাজারের প্রভাব
২০২৫ সালে এটি ছিল স্বর্ণের দামের ২৩তম মূল্য সমন্বয়, যেখানে ১৭ বার দাম বেড়েছে এবং মাত্র ৬ বার কমেছে। পূর্বের রেকর্ড অনুযায়ী, ২০২৪ সালে মোট ৬২ বার স্বর্ণের দাম পরিবর্তন করা হয়েছিল। স্বর্ণের দাম বাড়ানোর এই ধারাবাহিকতা অনেকটাই বৈশ্বিক বাজার ও ডলারের মানের উপর নির্ভরশীল।
বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্সের দাম বর্তমানে বেড়ে হয়েছে ২,৪০০ মার্কিন ডলার, যা বিগত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতির হার এবং মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক অস্থিরতা স্বর্ণের চাহিদা ও দামে প্রভাব ফেলেছে। Wikipedia অনুসারে, বৈশ্বিক আর্থিক অনিশ্চয়তার সময়ে স্বর্ণকে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এছাড়া, ভারতেও সম্প্রতি সোনার দাম বেড়েছে। কলকাতা এবং মুম্বাইয়ে ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম দাঁড়িয়েছে প্রায় ₹৬৬,৫০০ প্রতি ১০ গ্রাম, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮৩,০০০ টাকা প্রতি ভরি। এটি দেখায় যে, দক্ষিণ এশিয়ার বাজারে স্বর্ণের মূল্যবৃদ্ধি একটি সাধারণ ধারা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাম্প্রতিক স্বর্ণের/সোনার দাম নিয়ে জনমনে প্রতিক্রিয়া
সাধারণ ক্রেতা থেকে শুরু করে গহনার দোকানদার পর্যন্ত অনেকেই এই মূল্যবৃদ্ধির ফলে হতবাক। কেউ কেউ বিয়ে কিংবা বিশেষ অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে স্বর্ণ কেনার পরিকল্পনা স্থগিত করেছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সামনে ঈদুল আযহা এবং অন্যান্য উৎসব আসায় চাহিদা আরও বাড়বে, ফলে সোনার দাম মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।
গহনার ডিজাইন ও মজুরির তারতম্য
বাজুস জানিয়েছে, ঘোষিত সোনার দামের সঙ্গে সরকার নির্ধারিত ৫% ভ্যাট এবং ন্যূনতম ৬% মজুরি যোগ হবে। তবে ডিজাইন ও মানভেদে মজুরির তারতম্য হতে পারে। এর ফলে বাস্তব বাজারে এক ভরি স্বর্ণ কিনতে আরও বেশি টাকা খরচ হতে পারে।
ভবিষ্যৎ পূর্বাভাস: স্বর্ণ বিনিয়োগ কি এখন নিরাপদ?
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বর্ণ বিনিয়োগে ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম, তবে বাজারের ওঠানামা পর্যবেক্ষণ জরুরি। যারা স্বর্ণকে নিরাপদ আশ্রয় মনে করেন, তাদের জন্য এটি উপযুক্ত সময় হতে পারে। তবে উচ্চমূল্যে কেনা স্বর্ণ ভবিষ্যতে বিক্রির সময় লাভজনক হবে কিনা, তা নিয়ে কিছুটা সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
FAQs
- বর্তমানে বাংলাদেশের স্বর্ণের দাম কত?
আজকের বাজার অনুযায়ী, ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১,৬৭,৮৩৩ টাকা। - স্বর্ণের দাম কি আরও বাড়বে?
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ও চাহিদা বিবেচনায় সোনার দাম আরও বাড়তে পারে। - রুপার দাম কি পরিবর্তন হয়েছে?
না, রুপার দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি রুপা এখনো ২,৫৭৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। - এক ভরি স্বর্ণে কত গ্রাম থাকে?
এক ভরি স্বর্ণে থাকে ১১.৬৬৪ গ্রাম। - স্বর্ণ কেনার সময় কী খেয়াল রাখা উচিত?
ভ্যাট, মজুরি, ক্যারেট মান এবং নির্ভরযোগ্য দোকান থেকে কেনা গুরুত্বপূর্ণ। - স্বর্ণের বাজার কোন কারণে এত অস্থির?
বৈশ্বিক অর্থনীতি, ডলারের মান, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং মুদ্রাস্ফীতির প্রভাবেই মূলত এই অস্থিরতা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।