আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী: আজ ২৬ মার্চ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। এই দিবস পালনের জন্য ঢাকায় বর্ণাঢ্য আয়োজন করা হয়েছে। ত্রিশ লাখ শহিদের রক্তে রঞ্জিত স্বাধীনতা বাংলাদেশকে পরাধীনতামুক্ত করেছে। তাই সমগ্র জাতি এ দিবসটি পালন করে। বিলেতে দেখেছি, কোনো দিবস উপলক্ষ্যে সরকারি দলের সঙ্গে বিরোধী দলও সম্মিলিত হয়।
আমাদের দুর্ভাগ্য আমাদের স্বাধীনতা দিবসে সরকারি ও বিরোধী দল একত্র হয়নি। বিএনপি আলাদাভাবে স্বাধীনতা দিবস পালন করে। সরকারের কর্মসূচির সঙ্গে তারা মিলিত হয় না। জাতীয় ঐক্যকে এভাবে খণ্ড খণ্ড করে রাখা স্বাধীনতা দিবসের প্রতি প্রকৃত সম্মান দেখানো নয়। দলাদলি ভুলে বাংলার মানুষ এই দিবসে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে। স্মরণ করে চার জাতীয় নেতাকে।
স্বাধীনতার পরও দেশে রক্তপাত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার রক্তপাত বন্ধ করেছে। কিন্তু স্বাধীনতার ফসল সব মানুষের ঘরে তুলে দিতে পারেনি। একদল মন্ত্রী ও জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং এমপি মিলে জনসাধারণের কাছে স্বাধীনতার স্বাদ পৌঁছতে দেয়নি। স্বাধীনতা দিবসে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতির কাছে প্রমাণ করা উচিত, তারা বিভেদ চায় না।
বাংলাদেশের অনেক ইউনিয়ন পরিষদে দলাদলির জন্য সরকারি সাহায্য সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায় না। সরকার জনগণকে সাহায্য দানের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করে। তা এই অসাধু রাজনীতিকদের জন্য জনগণের কাছে পৌঁছায় না। স্বাধীনতার সূর্য আলো বিকিরণ করে একটা ক্ষমতাশালী গোষ্ঠীর ওপর। তারা সেই আলোকে জনগণের সর্বস্তরে বিলিয়ে দিতে পারে না।
দেশে একটি গণতান্ত্রিক বিরোধী দল নেই। থাকলে স্বাধীনতা দিবসও খণ্ডভাবে উদযাপিত হতো না। বিএনপি পৃথকভাবে স্বাধীনতা দিবস পালন করে এবং তাদের কাজ হচ্ছে আওয়ামী লীগকে গালিগালাজ করা। সরকার বা আওয়ামী লীগ যে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করে, সর্বপ্রকার বিতর্ক থেকে তা মুক্ত।
আমরা আজ শ্রদ্ধাবনতচিত্তে ত্রিশ লাখ শহিদ-মুক্তিযোদ্ধাকে স্মরণ করি। স্মরণ করি যারা এই সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু বাকশাল তৈরি করে জনগণের হাতে ক্ষমতা দিতে চেয়েছিলেন। সেজন্য কুচক্রীদের চক্রান্তে তাকেও শাহাদত বরণ করতে হয়। এই রক্তদানের ফলেই স্বাধীনতার সূর্য দেখা দিয়েছে এবং তা সাড়ে সাত কোটি মানুষকে শৃঙ্খলমুক্ত করেছে।
স্বাধীনতা দিবসে জনগণের মধ্যে কোনো দলাদলি নেই। দলাদলি রাজনীতিকদের মধ্যে। সব দেশেই স্বাধীনতা দিবসের একটা বৈশিষ্ট্য আছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় একটি অসাম্প্রদায়িক জাতিরাষ্ট্র তৈরি করা। এই জাতিরাষ্ট্রের ভূমিকা উপমহাদেশে শান্তি ও সমৃদ্ধি তৈরি করা।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার অনুরোধ, এই স্বাধীনতা দিবসে তিনি সর্বদলীয় ঐক্যের আহ্বান দিন। আওয়ামী লীগ দলীয় স্বার্থ ত্যাগ করলে বিরোধী দল অবশ্যই তাদের ডাকে সাড়া দেবে।
জাতি আজ ঐক্য চায়। জাতীয় দিবসগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে পালন করতে চায়। এবারের স্বাধীনতা দিবসে আমাদের শপথ হোক, আমরা ঐক্যের পথে যাব, অনৈক্যের পথে নয়। আওয়ামী লীগের উচিত বিএনপির সঙ্গে সহযোগিতামূলক সন্ধি করা। বিএনপিরও উচিত হবে, সেই ডাকে সাড়া দেওয়া। আগামী সাধারণ নির্বাচনে কারা জয়ী হবে, বলা দুষ্কর। তবে বাংলাদেশের যে দল স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছে, তারা যদি আবারও জয়ী হয়, বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে। নইলে একদল স্বাধীনতাবিরোধীর ষড়যন্ত্রে স্বাধীনতার এই সূর্য ম্লান হয়ে যাবে।
আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা হোক, স্বাধীনতার সূর্যের আলোকে জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া। জাতির উন্নতি ও অগ্রগতির মাইলফলক হিসাবে স্বাধীনতা সূর্যের আলো বিতরণে সবাইকে অংশগ্রহণ করানো। কাজেই স্বাধীনতা দিবসটি যেন একটি মামুলি দিবসে পরিণত না হয়। ত্রিশ লাখ শহিদ আহ্বান জানাচ্ছে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার, ঘৃণ্য আত্মবিবাদ পরিহার করে গোটা জাতিকে স্বাধীনতার সূর্যকে অভিনন্দন জানানোর।
প্রতিবছর স্বাধীনতা দিবস আসে। এবারও এসেছে। আমাদের চিত্ত আজ উদ্ভাসিত, জীবন সমৃদ্ধ। সরকারের নানা উন্নয়ন পরিকল্পনায় বাংলাদেশ আজ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় একটি উল্লেখযোগ্য দেশ। বাঙালি ভীরু, এই অপবাদ স্বাধীনতার সূর্য দূর করেছে। এই দিবসে সবার শপথ নেওয়া উচিত দলাদলিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার। নব্যধনীদের কবল থেকে স্বাধীনতার সূর্যকে রক্ষা করার। চারদিকে আজ জয় বাংলা ধ্বনিত হওয়া উচিত। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ হিসাবে গড়ে উঠুক, এবারের স্বাধীনতা দিবসে এটাই আমাদের প্রার্থনা।
লন্ডন, ২৪.০৩.২০২২
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।