দীর্ঘ সময় ধরে স্ক্রল করার ফলে শুধু চোখ বা মনোযোগের ক্ষতি হয় না, এর সরাসরি প্রভাব পড়ে হাতের পেশি, নার্ভ ও টেন্ডনের ওপর। এর ফলে হাত, বিশেষ করে বুড়ো আঙুল, কব্জি এবং হাতের পেছনের অংশে ব্যথা ও অসাড়তা দেখা যায়। আসুন, আজ এর কারণ খোঁজা যাক।
বেশির ভাগ মানুষই একহাতে স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। ফলে, পুরো স্মার্টফোন নিয়ন্ত্রণের কাজটি করে মূলত আমাদের বুড়ো আঙুল। এই আঙুল দিয়ে একটানা স্ক্রিন স্ক্রল বা সোয়াপ করার ফলে আঙুলের পেশি বা টেন্ডনের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। ফলে ব্যথা হয়, অসাড় হয়ে আসে আঙুল। এই সমস্যা সাধারণত ডি কোয়ার্ভাইন সিনড্রম (De Quervain’s Syndrome) নামে পরিচিত। অনেক সময় ব্যথা বা অসাড়তার পরিমাণ এত বাড়ে যে বুড়ো আঙুল নড়ানোই কঠিন হয়ে পড়ে।
অবশ্য শুধু ডি কোয়ার্ভাইন নয়, মোবাইল স্ক্রলিং বা টাইপিংয়ের মতো একই ধরনের মুভমেন্ট বা নড়াচড়া বারবার করতে হয়—এমন কাজের ফলে দেখা দিতে পারে ট্রিগার ফিঙ্গার (Trigger Finger) নামের আরেকটি সমস্যা। এতে বুড়ো আঙুলের পেশি ফুলে যায়। ফলে আঙুলসহ পুরো হাত অসাড় হয়ে আসে, সঙ্গে থাকে প্রচণ্ড ব্যাথা। অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয় অনেক সময়।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দিনে পাঁচ ঘণ্টার বেশি মোবাইল ব্যবহার করেন, তাদের হাত ও কব্জিতে ব্যথার প্রবণতা তুলনামূলক বেশি। সাধারণত এসব ব্যাথা প্রথম দিকে খুব একটা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। কিছুক্ষণ হাতকে বিশ্রাম দিলে ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু নিয়মিত এমনটা হলে তা বুড়ো আঙুলের টেন্ডন ও নার্ভের স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে।
এ ধরনের সমস্যা এড়াতে মোবাইলের ব্যবহার সীমিত করার বিকল্প নেই। অন্তত নিয়ম মেনে মোবাইল ব্যবহার করা উচিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, একটানা দীর্ঘসময় স্মার্টফোন ব্যবহার না করে, কমপক্ষে ৩০ মিনিট পরপর বিরতি নেওয়া উচিত। এ ছাড়া মোবাইল ধরার ভঙ্গিও বদলানো যেতে পারে।
এক হাতের বদলে দুই হাত দিয়ে ফোন ব্যবহার করলে বুড়ো আঙুলের ওপর চাপ কমে। ফলে ব্যথা বা অসাড়তা তৈরি হয় না। এরপরও যদি হাতের আঙুলে এমন ব্যথা প্রায়ই হয় বা হাতের কোনো অংশ অবশ হয়ে যায়, তবে দেরী না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এসব বিষয় অবহেলা করার সুযোগ নেই।
প্রযুক্তি আমাদের জীবন সহজ করেছে। আঙুলের ডগায় হাজির করেছে পুরো দুনিয়া। উপকারী দিকের শেষ নেই। পাশাপাশি প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহার যে আমাদের দৈনন্দিন স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলছে, সে কথাও এখন আর অস্বীকার করা যায় না। তাই স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখেই আমাদের প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে।
বিশেষ করে স্মার্টফোন স্ক্রল করার সময় হাতের যত্নের কথা ভুললে চলবে না। শুধু হাতই নয়, দীর্ঘসময় স্মার্টফোনের অযথা ব্যবহার মানসিক ও শারীরিক নানা ধরনের সমস্যার হয়ে দাঁড়াতে পারে। একটানা দীর্ঘক্ষণ স্মার্টফোন ব্যবহার করার অভ্যেস থেকে তাই বেরিয়ে আসতে হবে। নিয়ম মেনে স্মার্টফোন ব্যবহার করলে, এককথায় স্মার্টফোন প্রয়োজনে ব্যবহার করলে সহজেই এ ধরনের রোগ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।