জুমবাংলা ডেস্ক : বেশ কয়েক মাস ধরেই বাড়ছে ভোগ্যপণ্য চাল, ডাল, আলু, পিয়াজ, চিনি ইত্যাদি। প্রায় সব পণ্যের দর ঊর্ধ্বমুখী হলেও গত দু’দিনে ভোজ্য তেল নিয়ে রীতিমতো নৈরাজ্য চলছে। সয়াবিন তেলের দাম একেক দোকানে একেক রকম। দোকনিরা যে যেভাবে পারছে সেভাবে ইচ্ছেমতো ক্রেতাদের কাছে সয়াবিন তেল বিক্রি করছে। সরকার নির্ধারিত দামও কেউ মানছে না। খুচরা বাজারে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন কিনতে ক্রেতাকে ২০০ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে হচ্ছে। অনেকেই আবার সয়াবিন তেল কিনতে গিয়ে ফিরে গেছেন। খোলা সয়াবিন তেল তো বাজার থেকে প্রায় উধাও।
গত শুক্রবার সকালে কারওয়ান বাজারে, সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় দিনটিতে সেখানে চলছিল ব্যাপক কেনাবেচা।
কিচেন মার্কেটের নিচতলায় সয়াবিন তেল কিনতে এসেছিলেন একজন। ঢোকেন হাজি স্টোর নামে একটি দোকানে। কিন্তু কেবল তেল কিনতে পারেননি তিনি। দোকানি কামাল গাজী তাকে শর্ত দেন, তেল নিতে চাইলে কিনতে হবে পোলাওয়ের চাল।
প্রথমে শর্ত মানতে রাজি হননি সেই ব্যক্তি। রাগ করে চলে যান দোকান থেকে। কিছুক্ষণ পর আবার ফেরেন দোকানে। দোকানির শর্ত মেনে রূপচাঁদা কোম্পানির দুই লিটার সয়াবিন তেলের সঙ্গে একই কোম্পানির প্যাকেটজাত পোলাওয়ের চাল নিয়ে যান।
প্রথমে দোকানি দাবি করেছিলেন, দুই লিটার তেলের সঙ্গে চাল নিতে হবে দুই কেজি। পরে তিনি কিছুটা নরম হয়ে এক কেজিতে রাজি হন।
বেঁধে দেয়া দামেই কিনতে পেরেছেন সেই ক্রেতা, তবে এ জন্য বাড়তি খরচ করতে হলো ১৩০ টাকা। তিনি চাইলে খোলা পোলাওয়ের চাল কিনতে পারতেন ৯০ টাকা করে, সেখানে সাশ্রয় হতো ৪০ টাকা। তবে সেই সুযোগ ছিল না তার সামনে।
বিক্রেতাকে চাহিদামতো পণ্য না দিয়ে শর্ত বেঁধে দেয়া স্পষ্টত আইনের বিরোধী। তাহলে কেন এই কাজ করলেন- এমন প্রশ্নে দোকানি কামাল গাজী বলেন, চাহিদা অনুযায়ী তারা তেল পাচ্ছেন না। যেটুকু পাচ্ছেন সেটুকুর জন্য কোম্পানিও একই ধরনের শর্ত দিচ্ছে। যেমন পুষ্টি কোম্পানির তেল পেতে হলে তাদের সেই কোম্পানির চা পাতা কিনতে হয়। রূপচাঁদা কোম্পানির তেল পেতে হলে বাড়তি পণ্য হিসেবে নিতে হচ্ছে পোলাওয়ের চাল। ফলে তারাও ক্রেতাদের এই শর্ত দিচ্ছেন।
সেই ক্রেতা বলেন, ‘এইগুলো দেখেন, তেল কিনতে আইসা চাল কিনতে হইতেছে।’
বিক্রেতা তখন হাস্যরস করে বলছিলেন, ‘ভাবি খুশি হইয়া যাইব। ভাই পোলার চাল নিয়া বাসায় গেছে।’
এই মন্তব্যে ক্রেতার কণ্ঠে ঝরে পড়ল আরও অসহায়ত্ব। বলছিলেন, ‘আমার বাসায় পোলাওয়ের চাল আছে, এটা দরকার নেই।’
১ মার্চ থেকে সয়াবিন তেল লিটারে ১২ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করতে ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব সরকার ফিরিয়ে দেয়ার পর থেকে রান্নার উপকরণটির বাজার স্বাভাবিক নয় মোটেও।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারিতে সরবরাহ কমে গছে, পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ফ্যাক্টরি থেকে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা হচ্ছে না, তবে কারখানা মালিকরা স্বীকার করছেন না।
অতীতে নানা সময় একই ধরনের পরিস্থিতি যখন তৈরি হয়েছে, তখনও এই বক্তব্যগুলোই এসেছে গণমাধ্যমে। শেষ পর্যন্ত চাপটা গিয়ে ঠেকে ভোক্তাদের ঘাড়ে, যাদের আসলে তখন নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি টাকায় কিনতে হয়।
অন্য একটি দোকানে গিয়ে দেখা গেল, ক্রেতারা দুই বা তিন কনটেইনার তেল চাইলে তাদের একটি দিতে বলছেন বিক্রেতা।
মোল্লা স্টোরের স্বত্বাধিকারী ইয়াসিন মোল্লা বলেন, ‘অনেকেই আইসা পাঁচ লিটারের তিনটা-চারটা বোতল নিতে চান। তাগোরে কইছি, আপনাগো সব দিয়া দিলে অন্য কাস্টমারগো কী দিমু? আস্তে ধীরে নেন। শেষ হইলে আবার নিয়েন।’
কারওয়ান বাজারে খুচরা বিক্রেতা হারুন জানান, তাদের যে পরিমাণ পণ্যের দরকার, সে পরিমাণ তেল সরকার ও কোম্পানিগুলো দিচ্ছে না। বলেন, যারা বেশি দাম দিয়ে কিনছেন, শুধু তাদেরই দেয়া হচ্ছে, কখনও কখনও বোতলে গায়ের মূল্যে কিনতে হচ্ছে। কিন্তু ক্রেতা ধরে রাখতে এটা করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।