যদি নান্দনিক আবহে ৩০টির বেশি উদ্যোগের পণ্য মিলে যায় একই ছাদের নিচে, তাহলে তা এক দারুণ ব্যাপার না হয়ে যায় না। এ কথা ভেবেই দেশের সুপরিচিত ফ্যাশন ব্র্যান্ড খুঁত, ধানমন্ডি সাতের ১৫ নম্বর বাড়িতে ‘হাটকাহন’ শীর্ষক মেলার পসরা সাজিয়েছে। প্রতি মাসেই হবে এই মেলা। খুঁতসহ ৩০টির বেশি দেশি উদ্যোগ রয়েছে এখানে। নানা ধরনের গয়না থেকে শুরু করে ঘর সাজানোর পণ্য, শাড়ি, ব্লাউজ, টি–শার্ট, তেল, আচার, ব্যাগ, হাতে তৈরি শুকনা খাবার—কী নেই এখানে!
শুরু হওয়ার পর প্রায় প্রতিদিনই বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এখানে বাড়তে থাকে ভিড়। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সব বয়সীদের আনাগোনা দেখা যায় হাটকাহনে। গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকলেই মনে হবে যেন অন্য এক রাজ্যে এসে পড়েছেন আপনি। দেশীয় পণ্যের সবকিছুই আছে এখানে। একেক কর্নারে একেক উদ্যোক্তার পণ্য সাজানো আছে। ছিমছাম পরিবেশে গান শুনতে শুনতেই আপনি পছন্দের পণ্যগুলো কিনতে পারবেন।
এখানকার স্বেচ্ছাসেবীরাও বেশ আন্তরিক। তাঁরা যেকোনো কিছুর জন্য ক্রেতাদের সাহায্য করে থাকেন। এবার আসা যাক, কী কী পাওয়া যায় এই হাটকাহন মেলায়, সে গল্পে । ছোট–বড় মিলিয়ে মোট ৩৪ জন উদ্যোক্তার নানা রকম পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৈচিত্র্য দেখা গেছে এখানকার গয়নার সংগ্রহে।
যাঁরা একটু ভিন্ন আমেজের গয়না পছন্দ করেন, তাঁরা হাটকাহনে ঢুকে ‘ঋ’–এর কর্নারে ঢুঁ মারতে পারেন। বীজের গয়না নিয়ে কাজ করছে ব্র্যান্ডটি। এর সঙ্গে মাটি, কাঠ, তামা, রুপার মতো নানা ধরনের প্রাকৃতিক উপাদানও গয়নায় স্থান পেয়েছে।
বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন বীজ পাওয়া যায়। সেগুলোই সংগ্রহ করে তৈরি হয় চোখজুড়ানো এসব গয়না। রঞ্জনা, বকুল, লাউ ও কুমড়ার বীজ, গিলা, মুক্তা আর সেই সঙ্গে চা, রাবার, কুজ ও পদ্মবীজের মতো আরও অনেক ব্যতিক্রম উপকরণ দিয়ে বানানো কানের দুল, নেকপিস ও আংটিগুলো মেলায় ঢুকলেই পেয়ে যাবেন ক্রেতারা।
‘কুঞ্জরী’তে পাওয়া যাচ্ছে মেটাল ও বিডস দিয়ে তৈরি নানা ধরনের গয়না। ব্র্যান্ডটির স্বত্বাধিকারী নাজিরা বিনতে আলম জানান, স্থানীয় কারিগরদের বানানো ব্রাস মেটালের গয়নাগুলো তাঁর সিগনেচার পণ্য। কাস্টমাইজড ডিজাইনও করা হয় কুঞ্জরীতে।
অন্যদিকে উদ্যোক্তা সাদিয়া বিনতে ফরিদের ব্র্যান্ড ‘দ্য ক্রাফট লেডি’তে পাওয়া যাচ্ছে ট্রেন্ডের তুঙ্গে থাকা ক্লে দিয়ে বানানো চুড়ি, দুল, নেকপিসের মতো রঙিন সব গয়না। মজার বিষয় হলো, গয়নাগুলো সবই ফুলেল নকশার। আরেকটি গয়নার ব্র্যান্ড ‘গহনা গল্পে’ আছে হাতে তৈরি ফেব্রিক, পাট ও কড়ির গয়না। অন্যদিকে মিটকেলার গয়নাগুলো কাঠ ও পুঁতি দিয়ে বানানো।
যাঁরা প্রতিদিন অফিস ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পরার জন্য মিনিমালিস্টিক গয়না চান, তাঁরা অবশ্যই একবার ঢুঁ মারতে পারেন হকার–ইর কর্নারে। কাঠের গয়না, চুড়ি, রঙিন সুতার বিনুনিসহ চুলের ব্যান্ড, কাঁটা সবই আছে এখানে।
মাটি ও ধাতুর গয়নার অভিনব সংগ্রহ আপনি পাবেন উদ্যোক্তা জারিন রায়হানার ব্র্যান্ড ‘বিভূষণ’ ও ‘দাগ’–এ। বিভূষণে আছে ধাতুর নানা ধরনের গয়না এবং দাগে আছে মাটি দিয়ে তৈরি গলার মালা, চোকার, দুল, চুড়ি, নথ ও আংটি। জারিন নিজেই তৈরি করেন মাটির গয়নাগুলো। তিনি বলেন, ‘আমাদের সংস্কৃতি নিয়েই কাজগুলো করি আমি। এই উদ্যোগের মূল বিষয় হলো, সহজ–সরল নকশাকে প্রাধান্য দেওয়া।’
হাটকাহনে গয়নার আরেকটি ব্র্যান্ড ‘মল্লিকা’য় পাওয়া যাচ্ছে নানা রকম নকশা ও রঙের পলার বিশাল সংগ্রহ। আর ‘বিশাখা’য় আছে একদম অথেন্টিক শাঁখারীবাজারের শাঁখা, পলা ও আংটি। যাঁরা পূজার জন্য গয়না খুঁজছেন, তাঁরা এসব কর্নারে চোখ রাখতে পারেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।