আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসননীতির কঠোর বাস্তবতা আবারও এক মানবিক ট্র্যাজেডির জন্ম দিয়েছে। টেক্সাসের আরলিংটনের বাসিন্দা তাহির শেখ তার স্ত্রী ওয়ার্ড সাকেইককে নিয়ে হানিমুনে গিয়েছিলেন ইউএস ভার্জিন আইল্যান্ডসে। কিন্তু, হানিমুনের মাঝপথেই স্ত্রীর গ্রেফতারে গল্পের মোড় বদলে যায়। এ নবদম্পতি ১২০ দিনের বেশি সময় ধরে একসঙ্গে নেই, কারণ স্ত্রী সাকেইক বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আটক কেন্দ্রে বন্দি।
তাহির শেখ জানান, তার স্ত্রী ওয়ার্ড সাকেইকের বিরুদ্ধে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) কোনো পূর্বপরিকল্পিত অভিযান পরিচালনা করেনি। কিন্তু, ফেব্রুয়ারিতে সেন্ট থমাসে থাকাকালীন, যখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পুনঃপ্রবেশের চেষ্টা করছিলেন। তখন সীমান্ত নিরাপত্তা সংস্থা (সিবিপি) তাকে আটক করে।
ওয়ার্ড সাকেইক মূলত এক ‘রাষ্ট্রহীন’ ব্যক্তি। তিনি এমন একটি দেশে জন্মেছেন যারা জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব দেয় না। তিনি এক ফিলিস্তিনি শরণার্থী, যিনি সৌদি আরবে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ৮ বছর বয়সে সাকেইক তার পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। তাদের আশ্রয় আবেদন শেষ পর্যন্ত প্রত্যাখ্যান করা হলেও নাগরিকত্ব না থাকায় যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাদের নির্বাসন করতে পারেনি। ফলে তাদের প্রতি বছর ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চেক ইন করার শর্ত দেওয়া হয়। দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে সাকেইক নিয়ম মেনে চলেছেন।
ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস অ্যাট আরলিংটন থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন সাকেইক। বর্তমানে তিনি একজন পেশাদার ওয়েডিং ফটোগ্রাফার।
এ নবদম্পতির আইনজীবীরা এখন সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন যেন সাকেইকের নির্বাসন ঠেকানো যায়। যদিও আইসিই নিয়ম অনুযায়ী, যাদের দেশচ্যুত করা সম্ভব নয় এমন রাষ্ট্রহীন ব্যক্তিদের ৯০ দিনের পর ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু সাকেইকের ক্ষেত্রে তা হয়নি। তিনি ইতিমধ্যেই ১২০ দিনের বেশি সময় ধরে বন্দি অবস্থায় আছেন।
তাহির শেখ বলেন, ‘সাইকেক সবসময় বলতো, জীবনের এ পর্যায়টা আমি যদি পার হয়ে যেতে পারি, তাহলে আর কিছুই অতিক্রম করা অসম্ভব নয়।’
হানিমুনের জন্য তারা ইউএস ভার্জিন আইল্যান্ডসকে বেছে নিয়েছিলেন এ বিশ্বাস থেকে যে এটি যুক্তরাষ্ট্রের অঞ্চল হওয়ায় তার ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাসে সমস্যা হবে না।
আইসিই এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সাকেইকের গ্রেফতার কোনো নির্দিষ্ট অভিযান ছিল না। তার বিরুদ্ধে ২০১১ সাল থেকে চূড়ান্ত নির্বাসন আদেশ রয়েছে এবং তার আপিল ২০১৪ সালে খারিজ হয়েছে।
সংস্থাটি বলেছে, তিনি ২০১১ সাল থেকেই চূড়ান্ত নির্বাসনের মুখে রয়েছেন এবং আইনি প্রক্রিয়ার সমস্ত সুযোগ ইতোমধ্যে শেষ করেছেন।
এই ঘটনা কেবল একটি দম্পতির ব্যক্তিগত দুর্ভোগ নয়; এটি আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থার অমাণবিক বাস্তবতা। বিশেষ করে রাষ্ট্রহীন অভিবাসীদের জন্য। যাদের নেই কোনও নাগরিকত্ব, নেই নিরাপদ আশ্রয়ের নিশ্চয়তা এবং যাদের জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ই একটি অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে লেখা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।