জুমবাংলা: প্রতিটি শিক্ষার্থী একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা শেষে নিজেদের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে। কিন্তু মন পড়ে থাকে তাঁর স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে।যেখানে সে পেয়েছিলো তার জীবনের পূর্ণতা।কিন্তু সবাই কি পারে ফিরতে তাদের সেই পদধূলি মাখা স্বপ্নের ক্যাম্পাসে? শত বাঁধাকে উপেক্ষা করে হয়তো কেউ কেউ ফেরে তাদের স্বপ্নের আতুড়ঘরে এবং উদযাপনের রঙে রাঙিয়ে দেয় পুরো ক্যাম্পাস। এমনি এক রঙ্গিন প্রত্যাবর্তন সম্ভব করেছে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। তাদের প্রত্যাবর্তনের সেই গল্প লিখেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি কাবির আবদুল্লাহ্।
প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রাক্তনদের একমাত্র ঠিকানা অ্যালুমনাই অ্যাসোসিয়েশন। কিন্তু হাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের সেই ঠিকানাও যে নেই।বিশ্ববিদ্যালয় তাঁদের কোনো ঠাঁই না দিলেও তাদের মনের চিলেকোঠায় থেকে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রঙিন দিনগুলো।সবাই হারানো অতীতের জন্য দীর্ঘশ্বাস ফেললেও কতিপয় শিক্ষার্থী বারবার করে ফিরতে চায় তাদের স্বপ্নের চারণভূমিতে।তাদের এই আকুতি কখনো যে বিফলে যায় না তা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড এন্ড প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং-এর প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।
বিগত ১৭ ও ১৮ই ফেব্রুয়ারি হাবিপ্রবি নানা রঙে সুশোভিত হয়।উপলক্ষ ফুড ও প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং(এফপিই) ডিগ্রির চলমান ও প্রাক্তন মোট ১৮টি ব্যাচের মোট ৮০০জন শিক্ষার্থীর পূনর্মিলনী আয়োজন।আয়োজনকে ঘিরে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে পুরো ক্যাম্পাসজুড়েই।নানা রঙ্গের ফুল,বেলুন ও ফানুসে সাজানো হয় অডিটোরিয়াম,ফুড ও প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ক্লাসগুলো।
প্রাক্তনরা এতোদিন পর ক্যাম্পাসে ফিরে খুঁজে পান তাদের হারানো অতীত। স্মৃতির পুরোনো খাতা খুলে বসেন অনেকেই।তেমনি স্মৃতির কথাগুলো জানান ১ম ব্যাচের শিক্ষার্থী হাবিবা খাতুন,”ফুড প্রসেস ও ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রির ১ম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলাম।শুধু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নয় বরং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই বিষয়টি একেবারে নতুন ছিলো।এর আগে শুধু ‘বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়,ময়মনসিংহে’ ফুড ও প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি চালু ছিলো।বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলো শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি এতোটাই মায়া অনুভব হলো যে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করলো না।এখানেই ফুড সায়েন্স ও নিউট্রিশন বিভাগে প্রভাষক হিসেবে চাকরির সুযোগ পাই।এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুম,রাস্তা ধরে হাঁটতে গেলে মনে হয় এরা কত আপন আমার।”
পূনর্মিলনীতে যেনো হারানো অতীতকেই খুঁজে ফেরেন নীলফামারি সদর উপজেলার “উপজেলা নির্বাহী অফিসার” জেসমিন নাহার(৩য় ব্যাচ)।তিনি বলেন,”বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলো ছিলো স্বপ্নের মতো।যখন প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখি তখন কতটা ভাবালুতায় দিনগুলো কাটিয়েছি। দুচোখে শুধু বিস্ময় মাখানো ছিলো।আস্তে আস্তে বিশ্ববিদ্যালয় আমাদেরকে পরিণত করে তোলে।আজ এতোদিন বাদে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরা।মনে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি রাস্তায় যেনো হাজারো স্মৃতি ছড়িয়ে আছে।প্রতিদিন এই রাস্তা ধরে ফিরতে মন চায়।হাজারো কর্মব্যস্ততায় তা হয়ে ওঠে না। এতোদিন বাদে এমন একটা সুযোগ পেয়ে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।এমন একটি বর্ণাঢ্য পূনর্মিলনী আয়োজনের জন্য পূনর্মিলনী আয়োজন কমিটির সবাইকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।”
স্মৃতির পসরা খুলে বসেন ১ম ব্যাচের মোঃ মোজাফফর হোসেন। যিনি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড প্রসেসিং ও প্রিজারভেশন বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।তিনি বলেন,”হাবিপ্রবি আমাকে একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছেন। জীবনের কতসব ভালো-মন্দের উপাখ্যান ছিলো এই ক্যাম্পাসে। পড়াশোনা শেষে ক্যাম্পাস ছেড়ে যেতে পারলাম না। সেদিন কথা প্রসঙ্গে শুভ(সদস্য সচিব,পূর্ণমিলনী কমিটি) বললো এমন একটা আয়োজন করলে কেমন হয়?বললো সবাই মুখিয়ে আছে এমন একটা মিলনমেলার জন্য। জাভেদ হোসেন কে (১ম ব্যাচ) আহ্বায়ক, আমাকে যুগ্ম আহ্বায়ক এবং শুভকে (৫ম ব্যাচ) সদস্য সচিব করে একটা পূনর্মিলনী উদযাপন কমিটি দেওয়া হলো। এরপর বর্তমান এবং সাবেকদের অংশগ্রহণে এমন একটি আয়োজন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়।”
পূনর্মিলনী আয়োজন কমিটির সদস্য সচিব ও ৫ম ব্যাচের শিক্ষার্থী আরশাদ ফেরদৌস শুভ যার অক্লান্ত পরিশ্রম পরিকল্পনায় এই স্বপ্নের আয়োজন তিনি জানান তার এত পরিশ্রমের কারণ। তিনি বলেন,”আমাদের অনেকেই ভাল ভাল জায়গায় আছেন কিন্তু বর্তমানদের সাথে তাদের পরিচয় বা যোগাযোগ কোনটাই নেই। রিইউনিয়নে কখনো বর্তমান থাকে না। আমি বর্তমানদের যুক্ত করেছি এজন্য যে তারাও চিনুক সবাইকে,ভাল সম্পর্ক তৈরী হোক সবার সাথে সবার।আমরা ৪/৫ বছর একটা বিষয়ে এক্সপার্টাইজ তৈরী করি ঠিকই, কিন্তু জবের প্রয়োজনে চলে যাই অন্য সেক্টরে। এটার প্রধান কারণ ফুড রিলেটেড জবের পথ সুগম না থাকা।সেটা বড় ভাইদের সাথে পরিচয়হীনতার কারণেই ঘটে।এছাড়াও একজন প্রাক্তন ১০/১২ বছর পর ক্যাম্পাসে এসে কথা বলার মত কাউকে খুজে পাননা। বর্তমান-প্রাক্তন একটা বন্ডিং থাকলে এবং এলামনাই এসোসিয়েশন থাকলে সেটা কিন্তু ঘটবে না।তাঁরা এসে ক্যারিয়ার বিষয়ক অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন, আর বর্তমানরাও সঙ্গ দেবেন।ফলে বর্তমানরা তাদের ভবিষ্যতের একটি দিকনির্দেশনা পাবে অভিজ্ঞদের কাছে।”পরিশেষে তিনি পূনর্মিলনী কমিটির আহ্বায়ক এবং যুগ্ম আহ্বায়কের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন এমন একটি আয়োজন বাস্তবায়নের জন্য।
এছাড়াও দূর পরবাসে চাকরি বা গবেষণার কাজে অবস্থান করছেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রাক্তন শিক্ষার্থী। এমন একটি আয়োজনের অংশ হতে না পারলেও তাঁরা ভিডিও বার্তা পাঠিয়েছেন অগ্রজ অনুজ ও প্রাণের সহপাঠীদের উদ্দেশ্যে সেই সাথে হাজার হাজার মাইল দূরে বসেও আয়োজনের জন্য শুভকামনা জানান সকলকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন পর সবাইকে ফিরে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ে সবাই। পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটে আসেন এই মিলনমেলায়। পুরনো বন্ধু আর পুরনো মুহুর্তগুলো ফিরে পায় মিলনমেলাকে কেন্দ্র করে। রঙখেলা থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। আয়োজনের কোনো ত্রুটি ছিলো না মিলনমেলাকে ঘিরে।প্রাক্তনদের সফলতা দেখে নিজেদের ভবিষ্যতের অনুপ্রেরণা পায় চলমান শিক্ষার্থীরা।তাঁরাও বুকভরা স্বপ্নে দেখে তাঁরাও একদিন এমনই সফল হবে আর পরিবার-পরিজন নিয়ে বর্তমান বন্ধুদের সাথে দেখা হবে কোনো এক সন্ধ্যায় স্বপ্নে বুঁদ হয়ে থাকা এই ক্যাম্পাসে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।