জুমবাংলা ডেস্ক : অনেক অনেক দিন আগের কথা। যীশু খ্রীষ্টের জন্মের প্রায় ৩৬০ বছর আগে প্লেটো তার টাইমাউস এবং ক্রিটিয়াস রচনা দুটিতে প্রথম ”আটলান্টিস” নামের এক শহরের কথা উল্লেখ করেন। প্লেটোর মতে শহরটির অস্তিত্ব ছিল তার সময়ের থেকেও অন্তত ৯ হাজার বছর আগে। সে সময়ের এ শহরটি ছিল প্রযুক্তির দিক দিয়ে এক বিস্ময়। ৯ হাজার বছর আগের তৎকালীন গোটা পৃথিবীর সবথেকে উন্নত রাষ্ট্র, যা গড়ে উঠেছিল অসাধারণ স্থাপত্যকলা, প্রযুক্তিবিদ্যা, মূল্যবান সম্পদ ও প্রাচূর্যের সমন্বয়ে।
তবে গোটা বিশ্বের সবচে সমৃদ্ধ ও উন্নত আটলান্টিস শহরটিই হঠাৎ দেবতাদের ক্রোধের মুখে পড়ল। তারপর একদিন দেবতা জিউস স্বর্গের অন্যান্য দেবতাদের সাথে বসলেন আটলান্টিসবাসীদের কঠিন শিক্ষা দেওয়া জন্য। ক্রোধান্বিত দেবতা জিউসের অভিশাপে আটলান্টিস নামের শহরটি পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে গেল চিরতরে।
কি ছিল আটলান্টিসবাসীদের অপরাধ? দেবরাজ জিউস কি অভিশাপ দিয়েছিলেন তাদের? আটলান্টিসবাসীদের অন্তিম পরিণতিই বা কেমন ছিল? আদৌ কি আটলান্টিসের কোন অস্তিত্ব আমাদের পৃথিবীতে ছিল? নাকি এটি কেবলই একটি পৌরানিক উপকথা মাত্র?
এই প্রশ্নগুলোকে কেন্দ্র করে আজও গবেষক, প্রত্নতত্ত্ববিদ সহ নানা শ্রেণীর মানুষ অনুসন্ধান করে চলেছেন। হারিয়ে যাওয়া সেই আটলান্টিস শহর সম্পর্কে আমরা আজ জানার চেষ্টা করব।
আটলান্টিসের কিংবদন্তীর শুরু যেভাবে
প্লেটো তার রচনায় সমূদ্র দেবতা পসাইডনকে আটলান্টিস শহরের শাসক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। দেবতা পসাইডনের হাত ধরেই এ বিস্ময়কর শহরটি গড়ে ওঠে। দেবতা পসাইডন তার প্রিয়তমা স্ত্রীর জন্য একটি দ্বীপের ওপর গড়ে তোলেন আটলান্টিস শহরটি। দ্বীপটির ঠিক মাঝখানে পাহাড় চূড়ায় তিনি স্ত্রীর জন্য তৈরি করেন একটি মনোরম প্রাসাদ।
প্লেটোর মতে আটলান্টিসবাসীরা ছিলেন দক্ষ প্রকৌশলী এবং তাদের জ্ঞান ও প্রযুক্তি সমকালীন বিশ্বের অন্যান্য প্রান্ত থেকে অনেক এগিয়ে। তার বর্ণনা মতে আটলান্টিসের সাধারণ বাসিন্দাগণও সম্পদের দিক থেকে সাবলম্বী ছিলেন। আটলান্টিসবাসীদের ঘরবাড়ি ছিল পাথর এবং মূল্যবান ধাতু দিয়ে তৈরি। দ্বীপটির মাঝ দিয়ে খাল খনন করা ছিল যেগুলো থেকে সমূদ্রগামী জাহাজ যাতায়াত করত। প্লেটোর বর্ণনায় উঠে আসে আটলান্টিস দ্বীপটি নৈসর্গিক দৃশ্যের বর্ণনা যেখানে পাহাড়, ঝর্ণা এবং প্রসস্থ খালে ঘেরা আটলান্টিসবাসী যেন আক্ষরিক অর্থে স্বর্গেই বসবাস করতেন। খনিজ সম্পদের দিক থেকেও তারা অত্যন্ত সমৃদ্ধ ছিলেন। সোনা, রুপা ও তামার মত মূল্যবান আকরিকের প্রাচূর্যতার বর্ণনা পাওয়া যায় প্লেটোর বর্ণনায়।
ব্যবসা বাণিজ্য ছাড়াও কৃষিতেও আটলান্টিসবাসী ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ। তারা নিজেদের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য নিজেরাই উৎপাদন করতেন। কৃষিকাজের পাশাপাশি পশুপালন এবং মাংস উৎপাদনের মাধ্যমে তারা দ্বীপের বাসিন্দাদের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যের যোগান দিতেন।
দেবতা পসাইডনের অধীনে আটলান্টিসের অধিবাসীরা সুখেই বসবাস করছিলেন। সময়ের সাথে পসাইডন ১০ টি সন্তানের জন্ম দেন। তার বংশধররাই পরবর্তী কয়েক প্রজন্ম শাসন করতে থাকে আটলান্টিস দ্বীপটি।
প্রাথমিকভাবে বলা যায় আটলান্টিস ছিল একটি আদর্শ রাষ্ট্র যেখানে বাসিন্দাগণ সুখে-সমৃদ্ধে এবং শান্তিতে বসবাস করছিল। কিন্তু সময়ের সাথে আটলান্টিসের অধিবাসীদের নৈতিকতা, সৌহার্দ্য এবং সুশাসন লোপ পেতে থাকে। অন্যদিকে দূর্নীতি, লোভ এবং অন্যান্য অপরাধ আটলান্টিস শহরকে অশান্ত করে তোলে। এই অনাচারে অসন্তুষ্ট হয়ে দেবরাজ জিউস অন্যান্য দেবতাদের সাথে বসে সিদ্ধান্ত নেন আটলান্টিসবাসীকে শাস্তি দিবেন।
যেভাবে হারিয়ে গেল আটলান্টিস
প্লেটোর বর্ণনা থেকে আমরা এতোটুকু জানতে পারি যে, দেবারাজ জিউসের ক্রোধের শিকার হয়েছিল আটলান্টিস শহর। তার অভিশাপেই ধ্বংস হয়ে যায় গোটা আটলান্টিস। কিন্তু দেবতা জিউস কি অভিশাপ দিয়েছিলেনা বা আটলান্টিসবাসীদের ওপরে নেমে আসা শাস্তির বর্ণনা তার রচনায় পাওয়া যায়নি। তার রচনায় যেন হঠাৎ করে আটলান্টিস অধিবাসীদের গল্প শেষ হয়ে যায় সেই সাথে পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যায় গোটা সভ্যতাটি।
আটলান্টিস কিভাবে ধ্বংস হয়েছিল এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মতামত উঠে এসেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য মতামত হিসেবে বলা যায় যে, বেশির ভাগের মতে শহরটি সাগরের পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। অনেকেই শহরটি বাইবেলে উল্লেখিত মহাপ্লাবনে হারিয়ে যেতে পারে বলে মতামত তুলে ধরেছেন। অন্য কয়েকটি ধারণা মতে আটলান্টিস শহরটি এথেন্স এর বিপক্ষে যুদ্ধ শেষে একদিনের প্রবল প্রাকৃতিক দূর্যোগের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যায় এবং সমূদ্রের মাঝে হারিয়ে যায় চিরদিনের মতো।
আবার কয়েক জায়গায় সমূদ্র দেবতা পসাইডন স্বয়ং নিজে তার হাতে গড়া শহরটি সমূদ্রে ডুবিয়ে দেন বলেও পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে কারণ হিসেবে দেবতা পসাইডনের সাথে তার স্ত্রীর সম্পর্কের অবনতিকে দায়ী করা হয়। জানা যায়, দেবতা পসাইডন তার স্ত্রীর প্রতি কোন কারণে অসন্তুষ্ট হয়ে তাকে আটলান্টিসের প্রাসাদে বন্দী করে রাখেন, এক পর্যায়ে ক্রোধান্বিত হয়ে তিনি গোটা দ্বীপটিকে সমুদ্রে ডুবিয়ে দেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।