জুমবাংলা ডেস্ক : ডেঙ্গু জ্বরের পরিস্থিতি যখন ভয়াবহ জটিল অবস্থায়, তখনই খবর আসে ব্যক্তিগত ভ্রমণে গত ২৭ জুলাই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মালয়েশিয়া যাওয়ার। চারদিকে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সমালোচনার মুখে বুধবার রাত ১টার দিকে দেশে ফেরেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) সকালে মিটফোর্ড হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ১০০ শয্যার একটি নতুন ওয়ার্ড উদ্বোধন করেন তিনি। নতুন ওয়ার্ড উদ্বোধন শেষে সেখানে চিকিৎসারত ডেঙ্গু রোগীদের খোঁজখবর নিতে উপস্থিত হন তিনি। সঙ্গে ডজন খানেক চিকিৎসক-নার্সসহ সংবাদকর্মী ছিলেন।
এ সময় মহিলা ওয়ার্ডে থাকা রোগীদের মশারি তুলে তাদের শারীরিক অবস্থার খবর নিতে দেখা যায় মন্ত্রীকে। চলে ফটোসেশনও। রোগীর স্বজনরা মুখে কিছু না বললেও তাদের চেহারায় এ সময় বিরক্তির ছাপ লক্ষ্য করা যায়।
স্যার সলিমুল্ল্যাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের ১০০ শয্যার চারটি ডেঙ্গু ওয়ার্ড উদ্বোধন করতে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালে উপস্থিত হন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক। তিনি ওয়ার্ডগুলোতে গেলে তার সঙ্গে থাকা নেতাকর্মী ও নার্সরা মন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে স্লেগান দেন, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে তৈরি হয় হইহুল্লোড় পরিবেশ।
এ সময় চিকিৎসক, নার্স ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা ‘মন্ত্রী মহোদয়ের আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’ বলে স্লেগান দিতে থাকেন। পঞ্চম তলায় উঠে মন্ত্রী প্রথমে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য পুরুষ ওয়ার্ড (ইউনিট ১+৫) উদ্বোধনের ফিতা কাটেন।
এরপর সেই ওয়ার্ডে প্রবেশ করেন। তার সঙ্গে ওয়ার্ডে ঢোকেন অর্ধশত নেতাকর্মী। ঢাকা-৭ আসনের এমপি হাজী সেলিম ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কেন্দ্রীয় সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ওয়ার্ডে মন্ত্রী ঢোকার পরপরই নার্সরা ভেতরে স্লেগান দেয়া শুরু করেন। ওয়ার্ডের ভেতরে শুরু হয় হইহুল্লোড়। এ সময় অনেক ঘুমন্ত রোগী জেগে নড়াচড়া শুরু করেন। একসঙ্গে এত মানুষ দেখে রোগীর স্বজনদের চেহারায় বিরক্তির ভাব ফুটে ওঠে।
কোনো রোগীর বেডের সামনে গেলেই নার্সরা দুটি বেডের মশারি চারদিক থেকে তুলে ফেলে মন্ত্রীকে দেখার ব্যবস্থা করে দেন। এ সময় সাংবাদিকরা মন্ত্রীর পাশের বেডের রোগীর মশারি তুলে মন্ত্রীর ফুটেজ নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ‘স্যার, এদিকে তাকান, এদিকে তাকান’- এভাবে চলে মন্ত্রীর ফটোসেশন।
এরপর আরেক ওয়ার্ডে যান মন্ত্রী। সেটাও পুরুষ ওয়ার্ড। সেখানে এক যুবক রোগীকে দেখে মন্ত্রী বলেন, ‘ইয়াং ম্যান, তোমার আবার ডেঙ্গু হলো কীভাবে?’ আরেক বয়স্ক রোগীকে দেখে তিনি বলেন, ‘কী খবর, ব্যথা কমছে? কোনো সমস্যা নেই। চিকিৎসা নিয়ে কোনো চিন্তা করবেন না।’
এদিকে, ‘ডেঙ্গু সংক্রান্ত সর্বশেষ পরিস্থিতি ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ’ শীর্ষক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সংবাদ সম্মেলনও স্থগিত করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মাঈনুল ইসলাম প্রধান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) দুপুর ২টায় এ সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল।
এদিকে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে দেশের সার্বিক ডেঙ্গু পরিস্থিতি। আক্রান্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই যেন রেকর্ড ভাঙছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার) শুধু হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল এক হাজার ৪৭৭ জন। অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় ৬২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন।
বাংলাদেশের ইতিহাসে গত বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে ১০ হাজার ১৪৮ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হন। এটি ছিল সেসময়ের রেকর্ড। চলতি বছরের এখনো পাঁচ মাস বাকি। কিন্তু গত বছরের রেকর্ড ইতোমধ্যে ভঙ্গ হয়েছে। ৩১ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৭ হাজার ১৮৩ জন।
শুধু জুলাই মাসেই ইতিহাসের সর্বোচ্চ প্রায় ১৫ হাজার (১৪ হাজার ৯৯৬ জন) ডেঙ্গু রোগী সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।