জুমবাংলা ডেস্ক : ১২ বছর বয়সে বরগুনা থেকে ঢাকায় এসে একটি হোটেলে বয়ের কাজ নিয়েছিলেন ছগির হোসেন। এরপর দক্ষ এক গুরুর হাতে পড়ে সেই ছগিরই এখন এক মুদ্রা জালিয়াত চক্রের হোতা। জাল নোটসহ ধরা পড়ে জেলও খেটেছেন ছগির, কিন্তু কারাগার থেকে বেরিয়ে ফিরে গেছেন সেই পুরনো কারবারে।
সোমবার রাতে মিরপুরের পল্লবী থেকে ৪৭ বছর বয়সী ছগিরকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান। তার সঙ্গে গ্রেপ্তার হন তার দুই সহযোগী সেলিনা আক্তার পাখি (২০) এবং মো. রুহুল আমিন (৩৩)। গ্রেপ্তারের সময় ছগির, পাখি ও আমিনের কাছে এক কোটি ২০ লাখ টাকার জাল নোট এবং জালিয়াতির সরঞ্জাম পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার কারওয়ানবাজারের র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এই চক্রের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন র্যাব কর্মকর্তা মঈন।
তিনি বলেন, ছগির ১৯৮৭ সালে বরগুনা থেকে ঢাকায় এসে একটি হোটেলে বয়ের কাজ নেন। পরে ভ্যানে করে পোশাক ফেরি করতে শুরু করেন। ওই কাজে থাকার সময়ই ইদ্রিস নামে একজনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ইদ্রিসের মাধ্যমেই তার জাল টাকা তৈরির হাতেখড়ি।
মঈন বলেন, “প্রথমে ছগির জাল টাকা বিক্রি করত। পরে সে নিজেই জাল টাকা তৈরিতে পারদর্শী হয়ে ওঠে। ২০১৭ সালে জাল টাকাসহ ইদ্রিস ও ছগির আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। এক বছর জেল খেটে আবারও সে জাল নোট তৈরি শুরু করে।”
র্যাবের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ছগির যে চক্র গড়ে তুলেছেন, তারা সাত থেকে আটজনের মাধ্যমে জাল নোট ‘বিক্রির’ কাজটি করে আসছিল। গত বছরের ২৮ নভেম্বর মিরপুর মডেল থানা এলাকা থেকে ২৮ লাখ টাকার জাল নোটসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই এক মাস ৭ দিন পর ছগিরকে ধরা সম্ভব হয়।
র্যাবের মুখপাত্র মঈন বলেন, “চক্রের হোতা ছগির তার ভাড়া বাসায় ল্যাপটপ আর প্রিন্টার ব্যবহার করে জাল নোট ছাপানোর কাজটি করতেন। প্রয়োজনীয় উপকরণ তিনি নিজেই সংগ্রহ করতেন। এ ফোর সাইজের দুটি টিস্যু পেপার একসাথে আঠা দিয়ে লাগিয়ে রঙিন প্রিন্টারে ছাপানো হত জাল নোট।
“প্রিন্টিং আর কাটিংয়ের কাজে চক্রের অন্যদের সম্পৃক্ত করতেন না ছগির। নিজে হাতে জাল নোট তৈরির পর অন্যদের খবর দিতেন সেগুলো নিয়ে যাওয়ার জন্য।”
গ্রেপ্তার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাতে র্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, ঢাকা ও বরিশাল এলাকায় এসব জাল নোট ‘বিক্রি’ করে আসছিল ছগিরের চক্রটি। এক লাখ টাকার জাল নোট তারা বিক্রি করত ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায়। নির্দিষ্ট লক্ষ্যের বেশি বিক্রি করতে পারলে সহযোগীদের বোনাসও দিতেন ছগির।
“জিজ্ঞাসাবাদে ছগির বলেছে, করোনাকালে মাঝে মাঝে সে নিজেও এসব জাল নোট স্থানীয় বাজারে ব্যবহার করত এবং কয়েকবার সে সাধারণ জনগণের হাতে ধরাও পড়েছে। সাধারণত মেলা, ঈদে পশুর হাটে, জন-সমাগমের স্থানে তারা এসব জাল নোট ছড়িয়ে দেয়। বর্তমানে বাণিজ্য মেলা ও শীতকালীন বিভিন্ন উৎসব ও মেলাকে কেন্দ্র করে বিপুল পরিমাণ জাল নোট তৈরি পরিকল্পনা করেছিল তারা।”
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্রেপ্তার পাখির স্বামীও জাল নোটের কারবারে জড়িত। ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের একটি বিউটি পার্লারে এক সময় কাজ করতেন পাখি। পরে স্বামীর হাত ধরে ছগিরের মাধ্যমে তিনি জালিয়াতিতে জড়ান।
গ্রেপ্তার তিনজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।