
জুমবাংলা ডেস্ক : কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলায় আরশাদ মিয়া (৩৫) নামের এক ব্যক্তিকে একটি খোলা ঘরে ১২ বছর ধরে শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছে। পরিবারের আর্থিক দীনতার কারণে মানসিক ভারসাম্যহীন আরশাদ মিয়ার সুচিকিৎসাও করা যাচ্ছে না। তাঁদের ভিটামাটি ছাড়া নিজস্ব কোনো জমি নেই। উপজেলার নারান্দী ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামের মৃত আবদুল খালেকের ছেলে তিনি।
জানা যায়, আরশাদ মিয়ার চার ভাই ও তিন বোন। এর মধ্যে তিনি তৃতীয়। আরশাদ মিয়া অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তিনি পেশায় ইলেকট্রিশিয়ান ছিলেন। তবে মাঝেমধ্যে পাগলামি করতেন। এ কারণে পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁকে বিয়ে করানো হয়। বিয়ের কয়েক বছর পর আরশাদ মিয়া সম্পূর্ণ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। তাই বউ তাঁকে ছেড়ে চলে যান। পাগলামি চরম আকার ধারণ করলে তাঁকে শিকলবন্দি করে রাখা হয়।
আরশাদ মিয়ার বয়োবৃদ্ধ মা জাহেরা খাতুন জানান, ১২ বছর ধরে তাঁর ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন। বিয়ে করালে পাগলামি কমে যাবে—এলাকার লোকজনের এমন কথায় তাঁকে বিয়ে করানো হয়েছিল। কিন্তু বিয়ের পর পাগলামি আরো বেড়ে যায়। এলাকার মানুষকে মারধর করতে শুরু করেন। একদিন তাঁর বড় ভাবিকে পিটুনি দেন এবং তাঁর মায়ের মাথাও ফাটিয়ে দেন। এর পর থেকে তাঁকে শিকল পরিয়ে রাখা হয়েছে।
তাঁর মা আরো জানান, গ্রাম্য কবিরাজি চিকিৎসাসহ দুলালপুর নামের একটি এলাকায় নিয়ে সেখানে ১৫ দিন থেকে কবিরাজের চিকিৎসা দেওয়ায় কিছুদিন ভালো ছিলেন। পরে আবারও ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। এরপর কিশোরগঞ্জে নিয়ে একজন চিকিৎসক দেখানো হয়েছে; কিন্তু ভালো হয়নি। সংসারে অভাব-অনটনের কারণে উন্নত চিকিৎসা করানো যাচ্ছে না। ছেলের উন্নত চিকিৎসার জন্য এলাকার অনেক লোকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন তিনি; কিন্তু কারো কোনো সহযোগিতা পাননি।
আরশাদ মিয়ার ভাবি হামিদা খাতুন জানান, যে ঘরটিতে আরশাদ মিয়া আছেন, সেই ঘরের সব বেড়া ও বাঁশের খুঁটি আরশাদ মিয়া ভেঙে ফেলে দিয়েছেন। পরে একটি পাকা পিলার এনে ওই পিলারে তাঁকে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রুহুল আমীন বলেন, ‘মানসিক ভারসাম্যহীনদের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে আরশাদ মিয়ার যদি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড না থাকে, তাহলে আমরা ব্যবস্থা করে দিতে পারব। তা ছাড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্তৃক পরিচালিত রোগী কল্যাণ সমিতি থেকে তাঁর জন্য বিনা মূল্যে ওষুধের ব্যবস্থা করা যাবে।’
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ হাসান বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে তাঁর খোঁজখবর নিতে এসি ল্যান্ডকে ওই বাড়িতে পাঠানো হয়েছিল। তিনি খোঁজখবর নিয়ে এসেছেন। শিগগিরই তাঁর উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।