সুমাত্রা দ্বীপের গভীর রেইনফরেস্ট। ঘন অন্ধকার আর বন্য প্রাণীর ঝুঁকির মধ্যে ঝুঁকে বসে কাঁদছিলেন ইন্দোনেশিয়ার সংরক্ষণবিদ সেপতিয়ান আন্দ্রিকি। কয়েক মিটার দূরেই ফুটে আছে বিশ্বে অন্যতম বিরল ফুল রাফলেসিয়া হ্যাসেলটি। ১৩ বছর অপেক্ষার পর এত কাছ থেকে এই ফুল দেখা তাঁর কাছে যেন অবিশ্বাস্যই লেগেছে।
স্থানীয় এক রেঞ্জারের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রায় এক দিন জঙ্গলে ঘুরে ফুলটির খোঁজ পান গবেষকেরা। আন্দ্রিকি বলেন, এত বছরের অপেক্ষা, ২৩ ঘণ্টার কঠিন পথচলা, বাঘের সম্ভাব্য আক্রমণ। সবকিছু মিলিয়ে ফুলটি ফুটতে দেখে তিনি শুধু কান্নাই করেছেন।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক গার্ডেনের ডেপুটি ডিরেক্টর, ড. ক্রিস থরোগুড সেই মুহূর্তটির ভিডিও ধারণ করেন। ভিডিওটি দ্রুতই ভাইরাল হয়। এবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, রাফলেসিয়া হ্যাসেলটিকে শেষ দেখা গিয়েছিল এক দশকেরও বেশি সময় আগে।
রাফলেসিয়ার বিভিন্ন প্রজাতির ফুল এক মিটার পর্যন্ত চওড়া হয় এবং ওজন ছয় কিলোগ্রামেরও বেশি। এর মধ্যে রাফলেসিয়া হ্যাসেলটি সবচেয়ে দুর্লভ প্রজাতিগুলোর একটি। ড. থরোগুড বলেন, খুব কম মানুষই এই ফুল দেখার সুযোগ পেয়েছে। সাদা পাপড়ির ওপর লাল দাগ আর উল্টো দিকেও একই নকশা—ফুলটির গঠনকে তিনি ‘অসাধারণ’ বলে মন্তব্য করেন।
দীর্ঘদিন ধরে বিরল ফুল নিয়ে কাজ করছেন আন্দ্রিকি। করোনা মহামারির সময় থেকেই ড. থরোগুডের সঙ্গে তাঁর গবেষণা শুরু। ২০২১ সালে তাঁরা সুমাত্রার রেইনফরেস্টে রাফলেসিয়ার কয়েকটি প্রজাতি খুঁজে পান, কিন্তু হ্যাসেলটি তাঁদের নাগালের বাইরে ছিল।
এ বছর পশ্চিম সুমাত্রার এক রেঞ্জার তাঁদের কাছে রাফলেসিয়া হ্যাসেলটির কুঁড়ির ছবি পাঠান। কুঁড়িটি পরিপক্ব হতে কয়েক মাস, কখনো নয় মাস পর্যন্ত সময় লাগে। আর ফুটে থাকার সময় মাত্র কয়েক দিন। বাঘ ও গণ্ডারের আবাসে অবস্থিত হওয়ায় সেখান পৌঁছানোও ছিল ঝুঁকিপূর্ণ।
বিশেষ অনুমতি নিয়ে আন্দ্রিকি, ড. থরোগুড ও রেঞ্জার ইসওয়ান্দি জঙ্গলে প্রবেশ করেন। ২৩ ঘণ্টা হাঁটার পর ফুলটি পেয়ে হতাশ হন—কারণ তখনো তা ফোটেনি। সন্ধ্যা নেমে আসছিল, আর ইসওয়ান্দি তাঁদের সতর্ক করেন যে এলাকাটি সুমাত্রান বাঘের পরিচিত পথ।
তবুও ফিরে যেতে চাননি আন্দ্রিকি। তিনি ফুলের সামনে বসে অপেক্ষা করতে থাকেন। কিছুক্ষণ পর চাঁদের আলোয় ধীরে ধীরে ফুটতে শুরু করে রাফলেসিয়া হ্যাসেলটি। তাঁদের চোখের সামনে ফুটে ওঠে বিরল এক বিস্ময়।
ড. থরোগুড বলেন, এ অভিজ্ঞতার কোনো তুলনা নেই। আর আন্দ্রিকি ফুলটির জীবনচক্রকে তুলনা করেন মানুষের গর্ভধারণের সঙ্গে। তাঁর ভাষায়, নয় মাস পর ফুটন্ত সেই ফুল দেখা যেন “নিজের প্রথম সন্তান জন্ম নিতে দেখা।”
সোর্স: এবিসি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



